মুখ্যমন্ত্রীর এমন বার্তা সম্বলিত বোর্ড বসছে বিএসকে-র সামনে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে চালু হয়েছে দেড় শতাধিক বাংলা সহায়তা কেন্দ্র (বিএসকে)। এ বার সেই কেন্দ্রগুলির সামনে বসানো হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা সম্বলিত বোর্ড।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে রাজ্যের নির্দেশ পৌঁছেছে জেলায়। ওই বোর্ড বসানোর দায়িত্ব বর্তেছে তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের উপরে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের আধিকারিক অনন্যা মজুমদার মানছেন, ‘‘বাংলা সহায়তা কেন্দ্রগুলির সামনে একটি করে বোর্ড বসানো হচ্ছে। তাতে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা রয়েছে।’’ পশ্চিম মেদিনীপুরে সব মিলিয়ে ১৭৮টি বাংলা সহায়তা কেন্দ্র চালু হয়েছে। শীঘ্রই সমস্ত সহায়তা কেন্দ্রের সামনে ওই বোর্ড বসানোর কাজ শেষ হওয়ার কথা।
প্রশাসন সূত্রে খবর, কেশিয়াড়ি, শালবনি, গোয়ালতোড়ের মতো আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে বিএসকে-র সামনে সাঁওতালি ভাষায়, অলচিকি লিপিতে লেখা বোর্ড বসানো হচ্ছে। যাতে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা সহজে আদিবাসী মানুষের কাছে পৌঁছয়। বোর্ডে ঠিক কী লেখা থাকছে? উপরের দিকে লেখা থাকছে, ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার, মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়, নবান্ন, হাওড়া।’ এর ঠিক নিচে, ‘বাংলা সহায়তা কেন্দ্র। এক জানালা পরিষেবা প্রদান।’ এরপরই থাকছে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা। লেখা থাকছে, ‘আপনার হাতের নাগালে সমস্ত সরকারি পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার চালু করেছে বাংলা সহায়তা কেন্দ্র (বিএসকে)। রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তে এই কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে এলেই আপনি রাজ্য সরকারের সমস্ত কর্মপ্রকল্প ও পরিষেবা সম্পর্কিত যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর খুব সহজেই পেয়ে যাবেন।’ ওই কেন্দ্রগুলি থেকে যে রাজ্য সরকারের সব বিভাগের ডিজিটাল ও অনলাইন পরিষেবা একদম বিনামূল্যে পাওয়া যাচ্ছে সেটাও লেখা থাকছে সেখানে।
রাজ্য প্রশাসন এখন যে প্রকল্পগুলিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে, তার মধ্যে বাংলা সহায়তা কেন্দ্র অন্যতম। মাস কয়েক আগে এক ভার্চুয়াল প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতেও শোনা গিয়েছিল, ‘‘বাংলা সহায়ক কেন্দ্র কিন্তু আমাদের টার্গেটেড কাজ।’’ স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র পরিদর্শনের মতো বিএসকে পরিদর্শনেরও নির্দেশ দেন তিনি।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, এই সহায়তা কেন্দ্র থেকে ৪২টি দফতরের ২২৪টি পরিষেবা মিলছে। ডিএম অফিস, এসডিও অফিস, বিডিও অফিসের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি গ্রন্থাগার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল পরিদর্শকের (এসআই) অফিসেও এই কেন্দ্র খোলা হয়েছে। কেন্দ্রপিছু দু’জন করে সহায়ক (ডাটা এন্ট্রি অপারেটর) নিয়োগ করা হয়েছে।
জেলাশাসক রশ্মি কমলের দাবি, ‘‘জেলায় বিএসকেগুলি ভালভাবেই চলছে। এখান থেকে সাধারণ মানুষ অনলাইনে সরকারের সমস্ত পরিষেবা পাচ্ছেন।’’ জেলার পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন আধিকারিক সুদীপ্ত সাঁতরা বলেন, ‘‘বিএসকেগুলির উপরে নজর রয়েছে। কাজ ঠিকঠাক হচ্ছে কি না তা দেখা হচ্ছে।’’
সামনেই বিধানসভা ভোট। ভোটের আগে ওই সহায়তা কেন্দ্র চালু নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা মানুষের আরও কাছে পৌঁছে দিতেই এই পদক্ষেপ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। তবে বিএসকে নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোরও অব্যাহত। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘এই কেন্দ্র চালুর ফলে বিভিন্ন দফতরের অনলাইন পরিষেবা আরও বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছে। বহু মানুষ উপকৃত হচ্ছেন।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাশের পাল্টা খোঁচা, ‘‘এতদিন পরিষেবা পৌঁছনো হয়নি। এখন এ ভাবে আর মানুষের কাছে পৌঁছতে পারবে না তৃণমূল সরকার!’’