বৈঠক চলাকালীন। নিজস্ব চিত্র।
আত্মসমর্পণ করেও চাকরি মেলেনি। তাই বুধবার ঝাড়গ্রাম ব্লকের পাঁচামির জঙ্গলে বসে নিজেদের রণকৌশল ঠিক করলেন জনা পঞ্চাশেক ‘প্রাক্তন মাওবাদী ও লিঙ্কম্যান’। ভোটের আগে চাকরি না পেলে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারিও দিলেন।
এ দিনের বৈঠকে যাঁরা ছিলেন তাঁরা মাওবাদী নেতা আকাশ ও জয়ন্তর স্কোয়াডে কাজ করতেন বলে দাবি করেছেন। চাকরি চেয়ে জীবনের মূল স্রোতে ফিরতে চাইলেও পুরনো পন্থা থেকে যে পুরোপুরি সরে আসেননি তা-ও ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন তাঁরা। বৈঠকের জন্য গভীর জঙ্গলকে বেছে নেওয়া হল কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন দাবি করেছেন, ‘‘মাওবাদীদের কার্যকলাপ তো জঙ্গলেই হয়। তাই জঙ্গলকে বেছে নেওয়া হয়েছে।’’ তাঁদের ক্ষোভ, চাকরির জন্য দু’বার করে আঙুলের ছাপ নেওয়া হলেও কোনও কাজ হয়নি। চাকুয়া গ্রামের অপূর্ব ভুক্তা, রানিডিহির বরেন মুর্মু, বড়পিপড়ি গ্রামের নিরঞ্জন মাহাতোদের অভিযোগ, ‘‘অশান্তি পর্বে যাঁরা গরু-ছাগল চরাচ্ছিল, তাঁদের ধরে নিয়ে জেলে পুরে দিয়েছিল পুলিশ। তাঁরা চাকরি পেয়ে গেল। আমরা স্কোয়াডে কাজ করলাম। রাজ্যে পালাবদলের পর আত্মসমর্পণ করেও চাকরি পেলাম না!’’
ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রসেসিং অনেকদিন ধরে চলছে। শেষ দু’সপ্তাহে জেলার সাতশো জন হোমগার্ড ও তিনশো জন সিভিক ভলান্টিয়ারের চাকরি পেয়েছেন।’’ তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘আজ বললেই কালকেই চাকরি দেওয়া তো সম্ভব নয়। যেরকম অর্ডার হচ্ছে সেরকম চাকরি দিয়ে দিচ্ছি। আস্তে আস্তে সব হয়ে যাবে।’’
ভোটের আগে এই ঘটনা নিয়ে কটাক্ষ শুরু করেছে বিজেপি। জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত মাহাতো বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী টোপ দিয়ে মাওবাদীদের কাছে টেনেছেন। কিন্তু যাঁরা প্রকৃত মাওবাদী তাঁরাই চাকরি পাচ্ছেন না। শাসক দলের ঘনিষ্ঠ লোকেরা এই চাকরি পাচ্ছেন। ভোট টানতে মুখ্যমন্ত্রী যে ফাঁদ পেতেছিলেন, সেই ফাঁদে এখন নিজেই পড়েছেন।’’
যদিও তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা জঙ্গলমহল আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছত্রধর মাহাতোর দাবি, ‘‘যাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতা ধারা রয়েছে, তাঁরা এই প্যাকেজের আওতায় আসবে। এখন সবাই যদি নিজেকে বলে মাওবাদী বা লিঙ্কম্যান ছিলাম বলে দাবি করে, সবাইকে চাকরি দেওয়া তো সম্ভব নয়।’’ একই সঙ্গে তিনি জুড়েছেন, ‘‘যাঁরা প্রকৃত মাওবাদী বা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, আমি কথা দিচ্ছি তাঁদের রুজি রোজগারের জন্য আমি ব্যবস্থা করব।’’