বেহাল রাস্তা। নিজস্ব চিত্র
ছুটি মানেই দিঘা। সৈকত শহরে সমুদ্রের ধার ঘেঁষে মেরিন ড্রাইভে গাড়ি নিয়ে ঘুরে-বেড়ানো। তবে সমুদ্র স্নানের মজা পেলেও মেরিন ড্রাইভে গাড়ি নিয়ে ঘোরাঘুরির আনন্দ থেকে বঞ্চিত পর্যটকেরা। কারণ তাজপুর থেকে শঙ্করপুর পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভের দফারফা হয়ে গিয়েছে। মে মাসে আমপান, তারপর বার বার সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে একেবারে কঙ্কালসার চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেরিন ড্রাইভ।
দিঘা-নন্দকুমার ১১৬ বি জাতীয় সড়ক ধরে তাজপুর থেকে শঙ্করপুর অনেকটা দূর। তবে, মেরিন ড্রাইভে সেই দূরত্ব মেরেকেটে তিন কিলোমিটার। গত ২০ মে আমপানে মেরিন ড্রাইভের অনেক জায়গা ভেঙে গিয়েছিল। তার পরে অগস্টে দু’দুবার সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে পাকা রাস্তা ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। রাস্তা থেকে বড় বড় পাথর সরে শোচনীয় অবস্থা। পর্যটকেরা যাতায়াত করতে পারেন না বললেই চলে। ইদানীং ক্ষতিগ্রস্ত মেরিন ড্রাইভের কিছুটা অংশে লাল বোল্ডার ফেলে স্থানীয় পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে সরু রাস্তা তৈরি করা হলেও তাতে যাতায়াতের সমস্যা মেটেনি। দিঘায় ঘুরতে আসা উত্তর ২৪ পরগনা বারাসাতর দ্বৈপায়ন বসুর দাবি, ‘‘ব্যক্তিগত গাড়িতে তাজপুর থেকে শঙ্করপুর যাচ্ছিলাম। কিন্তু এত উঁচু-নিচু রাস্তা তার উপর সমুদ্রের পাশে যদি বড় বড় বোল্ডার না ফেলা থাকলে যে কোনও মুহূর্তে গাড়ি-সহ সমুদ্রে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দিঘা থেকে কাঁথির শৌলা পর্যন্ত সমুদ্র বাঁধের উপরে মেরিন ড্রাইভ তৈরি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। উদ্দেশ্য, জাতীয় সড়ক ব্যবহার না করে সমুদ্র দেখতে দেখতে দিঘায় পৌঁছে যাবেন পর্যটকেরা। মাঝে তিনটি সেতু তৈরি না হওয়ার জন্য পাকাপাকি ভাবে চালু হয়নি মেরিন ড্রাইভ। তবে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ তাজপুর থেকে শঙ্করপুর পর্যন্ত পাকাপাকিভাবে মেরিন ড্রাইভ বানিয়ে ফেলেছিল। স্থানীয় তালগাছাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বিশ্বজিৎ জানা বলেন, ‘‘পর্যটক এবং স্থানীয়দের যাতায়াতের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে জলোচ্ছ্বাসের পরে মেরিন ড্রাইভ সারানোর জন্য দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের কাছে দাবি জানিয়েছিলাম। তার পরেও মেরিন ড্রাইভ সংস্কার হয়নি।’’
দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের আধিকারিক সুজন দত্তকে এ বিষয়ে ফোন করা হলেও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে রামনগর-১ ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের পর ওই এলাকায় আগে কংক্রিটের সমুদ্র বাঁধ নির্মাণের কাজ হবে। তারপরেই সেখানে মেরিন ড্রাইভ-এর কাজ শুরু হবে।
কিন্তু, ডিসেম্বর থেকেই পর্যটনের মরসুম শুরু। এমন পরিস্থিতিতে রাজ্য ও রাজ্যের বাইরে থেকে আসা পর্যটকরা কী ভাবে তাজপুর এবং শঙ্করপুরে ঘুরতে পারবেন সেই প্রশ্ন থেকেই গেল।