‘অজানা’ চর্মরোগে আক্রান্ত বহু, গ্রামে মেডিক্যাল টিম

স্থানীয় সূত্রে খবর মাস ছয়েক আগে বিকড়া গ্রামে কয়েকজনের দেহে ওই চর্মরোগ দেখা দেয়। জেলার উত্তর দিকের শেষ প্রান্তে তপসিলি জাতি অধ্যুষিত ওই গ্রামের অধিকাংশ পরিবারই কৃষিজীবী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৯ ০০:২৪
Share:

গত ছ’মাসে অনন্ত ৫০ জন চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছেন পাঁশকুড়ার মাইশোরা পঞ্চায়েত এলাকার বিকড়া গ্রামে। চিকিৎসকের কাছেও গিয়েও রোগ ভাল হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আক্রান্তরা। ফলে কী ধরনের চমর্রোগ তা নিয়ে ধন্দের পাশাপাশি আক্রান্তদের মধ্যে আতঙ্কও ছড়িয়েছে। বিষয়টি জানার পর এলাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাঠানোর ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে খবর মাস ছয়েক আগে বিকড়া গ্রামে কয়েকজনের দেহে ওই চর্মরোগ দেখা দেয়। জেলার উত্তর দিকের শেষ প্রান্তে তপসিলি জাতি অধ্যুষিত ওই গ্রামের অধিকাংশ পরিবারই কৃষিজীবী। আক্রান্তরা জানান, প্রথমে শরীরের কোনও একটা জায়গায় ঘামাচির মতো হচ্ছে। তারপর সেটা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে শরীরের অন্যান্য অংশে। সেই সঙ্গে প্রচণ্ড চুলকানি ও জ্বালা শুরু হচ্ছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ, রোগের সংক্রমণে কাবু সকলেই। আক্রান্তরা জানান, গরম লাগার সঙ্গে ঘাম হলে শরীরে শুরু হচ্ছে অসহনীয় জ্বালা। পাখার তলায় বসলে একটু আরাম মিলছে। স্থানীয় পাতন্দা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে আক্রান্তদের অনেকেই ওষুধ খাচ্ছেন। কিন্তু তাতেও রোগ সারার কোনও লক্ষণ নেই। এমনকী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখানোর পর যতদিন ওযুধ চলছে ততদিন রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকছে। ওষুধ বন্ধ হলেই ফের শুরু হচ্ছে রোগের জ্বালা। শরীরে তৈরি হচ্ছে ঘন কালো দাগ। কনুই, হাঁটুর মতো শরীরের জোড়ের জায়গাগুলিতে বেশি করে সংক্রমণ ঘটছে রোগের। এখনও পর্যন্ত বিকড়া গ্রামের অন্তত ৫০ জন মানুষ এই রোগে আক্রান্ত বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।

আক্রান্তদের মধ্যে অনেক ছাত্রছাত্রীও রয়েছে। সামনেই পরীক্ষা। কিন্তু ছেলেমেয়েদের শরীরে রোগ কমার কোনও লক্ষণ না থাকায় পরীক্ষা নিয়ে চিন্তা পড়েছেন অভিভাবকেরা। শুভঙ্কর খান নামে এক ছাত্রের কথায়, ‘‘গোটা শরীর সব সময় চুলকাচ্ছে। ওষুধ খাচ্ছি। মলমও লাগাচ্ছি। কিন্তু রোগ কমার কোনও লক্ষণ নেই। কী ভাবে পরীক্ষা দেব ভেবে উঠতে পারছি না।’’ বছর পঁয়ষট্টির ভানুমোহন খান বলেন, ‘‘মাস খানেক আগে পিঠে দাদের মতো দেখা যায়। ক্রমে তা গোটা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। ওষুধ খেয়েও কমছে না।’’

Advertisement

বিকড়া গ্রামের অনেকেই এই চর্মরোগে আক্রান্ত হলেও তা অবশ্য জানা নেই স্বাস্থ্য আধিকারিকদের। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাই চরণ মণ্ডল বলেন, ‘‘সম্ভবত এটি ছত্রাক ঘটিত সংক্রমণ হতে পারে। ওই এলাকায় শীঘ্রই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাঠানো হবে।’’

রোগের বৈশিষ্ট্য শুনে কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ অরুণ আচার বলেন, ‘‘এটি ছত্রাক ঘটিত রোগ। রাজ্যের বহু জায়গাতেই এই রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।’’

কিন্তু চিকিৎসার পরেও রোগের প্রাদুর্ভাব কমছে না কেন?

অরুণবাবু বলেন, ‘‘বাজার থেকে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ কিনে লাগানোর ফলে রোগ আরও বেড়ে যাচ্ছে। দরকার উপযুক্ত চিকিৎসা। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অ্যান্টি ফাংগাল ওষুধ এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করাতে হবে।’’

রোগ ছড়ানোর বিষয়ে তিনি জানান, আক্রান্তের জিনিস অন্যরা ব্যবহার করলে রোগ ছড়াতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির উচিত নিজের পোশাক গরম জলে ধুয়ে শুকনো করে পরা। সর্বোপরি এই ধরনের রোগ থেকে বাঁচতে বাড়ি ও চারপাশের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement