মেদিনীপুর শহর। —নিজস্ব চিত্র।
২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী মেদিনীপুর পুরসভার জনসংখ্যা ১ লক্ষ ৭০ হাজারেরও বেশি। দিন দিন বাড়ছে শহরের জনসংখ্যা। কিন্তু মানুষের প্রয়োজনে রাস্তাঘাট ক্রমেই সংকীর্ণ হচ্ছে।তার কারণ অবৈধ নির্মাণ ও ফুটপাথ দখল। শহরের জনসংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে জেলা সদর হওয়ার কারণে বাইরে থেকে প্রচুর মানুষ প্রতি দিন এই শহরে ভিড় জমান, নানান কাজে। প্রতিটি ওয়ার্ডে অবশ্য ঢালাই রাস্তা হয়েছে। কিন্তু প্রশস্ত রাস্তা না থাকায় মানুষের অসুবিধা দিন দিন বাড়ছে। আশা করব আগামী পুরসভা এ দিকে নজর দিয়ে উন্নত রাস্তাঘাট গঠন করবে।
মেদিনীপুর শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে জলের পরিষেবা মোটামুটি ভালই। কিন্তু জলের অপচয় পর্যাপ্ত মাত্রায়। তার অনেকগুলি কারণের মধ্যে অন্যতম, ট্যাপ কলগুলির মুখ চুরি হয়ে যাওয়া। সেই সঙ্গে নিজের স্বার্থে মানুষ কিছু ট্যাপের মুখ খুলে দিয়ে পাইপ লাগিয়ে ঘরে জল নেন। এ ক্ষেত্রে জল নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে একাধিক ট্যাপের মুখ থেকে বার হয়। ফলে পানীয় জলের অপচয় বেশি মাত্রায় দেখা যায়। এর থেকে বার হতে পুরসভার সজাগ হতে হবে বেশি মাত্রায়। না হলে আগামী দিনে জলের সমস্যা তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। বিগত পুরো প্রশাসক তথা দক্ষ মহকুমাশাসক কিছুটা সমাধানের চেষ্টা করেছিলেন। তার পর থেকেই আবার আগের চিত্র ফিরে এসেছে। আশা করব, সমাধান পাব আমরা নতুন বোর্ডের কাছে।
মেদিনীপুর পুরসভার বৃহত্তর সমস্যা নিকাশি ব্যবস্থা। অথচ ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক থেকে এই শহর অনেকটা উঁচুতে অবস্থান করে। তা-ও একটু বৃষ্টিতে কেরানিটোলা, সূর্যনগর, পঞ্চুর চক-সহ একাধিক রাস্তায় জল দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এর প্রধান কারণ, ড্রেনগুলিকে ডাস্টবিন বানিয়ে ফেলেছে শহরের ফুটপাথের দোকানগুলো। পলিথিনের কারণে বৃষ্টির জল দ্রুত নিকাশ হতে পারছে না। তাই মোড়ে মোড়ে, গলিতে গলিতে রাস্তাতে ড্রেনের জল জমা থাকছে অনেক ক্ষণ। এ দিকে নজর দিতে হবে নতুন পুরো পুরবোর্ডকে। জলের ভোগান্তি গত বর্ষায় শহরবাসী প্রতক্ষ করেছে।
কোনও পুরসভাকে উন্নত তখনই বলা যায় যদি সেখানে পরিচ্ছন্ন ও জঞ্জালমুক্ত পরিবেশ থাকে। সাম্প্রতিক কালে মেদিনীপুরে ফ্লাড কালচার বেড়েছে। আবাসনের সামনে রাস্তাঘাটে উন্মুক্ত ভ্যাট দেখা যাচ্ছে। এটা স্বাভাবিক যে, লোকসংখ্যা বাড়লে নিত্যদিনের আবর্জনা মুক্ত পরিবেশে ফেলে দেওয়া ছাড়া অনেক সময় উপায় থাকে না। কিন্তু সেগুলি যথা সময়ে সংগ্রহ করা, পাচিত হতে না দেওয়া এ সব দিকে নজর দেবে একটি উন্নত পুরসভা। মেদিনীপুর পুরসভা সে উদ্যোগ নিয়েছে বারে বারে। কিন্তু তা-ও চার্চ স্কুলের সামনে, সিপাই বাজার, এমনকি হাতারমাঠ-সহ বেশ কিছু এলাকায় রাস্তার একাংশকে ভ্যাট আকারে ব্যবহার করতে হচ্ছে। ধর্মার অদূরে ধাপার মাঠ তৈরি করা হয়েছে। দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। পাশাপাশি বাসিন্দারা ভোগান্তি পোয়াচ্ছে। পুরসভায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঠিক পদক্ষেপ অবশ্যক। দ্রুত এর সমাধান প্রয়োজন। সেই সঙ্গে মুক্ত ডাস্টবিনকে বদ্ধ ডাস্টবিনে পরিবর্তিত না করলে আগামী দিনে মানুষের মধ্যে নানান সমস্যা দেখা যাবে।কোনও দিন আবর্জনামুক্ত পুরসভা তৈরি হবে না।
মেদিনীপুর শহরে আলোর সমস্যা সে ভাবে না থাকলেও একটা সমস্যা দেখা যায়। গলি-রাস্তার আলোগুলো নিয়মিত ভাঙা হয় কিছু অসামাজিক কাজের সুবিধা পাওয়ার জন্যে। সেই সঙ্গে মাঝে মাঝে দিনের বেলায় আলোগুলো জ্বলতে দেখা যায়। এতে বিদ্যুতের অপচয় বাড়ছে। ত্রিফলা আলো মোড়ে মোড়ে বসানোর পর পুরনো দিনের কিছু ভ্যাপার আলোও রেখে দেওয়া হয়েছে। তাতে বিদ্যুতের অপচয় বাড়ছে। সে দিকেও সজাগ থাকা জরুরি।
উন্নত পরিষেবা, উন্নত ও সুন্দর পরিচ্ছন্ন পুরসভার লক্ষ্যে হাতে হাত মিলিয়ে কাজের মানুষকে সংযুক্ত করা হোক। শহরের গঠন পরিবর্তন করে, নগর-পরিকল্পনার জ্ঞান রয়েছে এমন মানুষের সাহায্য নিয়ে গ্রিন শহর গঠন করতে বদ্ধ পরিকর হোক নব পুরবোর্ড।