নিজে তো খুন করেননি মানসদা!

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৪৯
Share:

উল্লাস: জয় ঘোষণার পর তৃণমূল সমর্থকেরা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

ভুল করেছিলেন, প্রকাশ্যে জানালেন জয়দেব জানার স্ত্রী মানসী।

Advertisement

বছর দেড়েক আগের কথা, তৃণমূল নেতা জয়দেবের খুনে সরাসরি মানস ভুঁইয়ার ফাঁসির দাবি তুলেছিলেন মানসী জানা। রবিবার সবংয়ের মোহাড় পঞ্চায়েতের দুবরাজপুরে, মানসীদের বুথে জয়ী হয়েছেন গীতা ভুঁইয়া, তৃণমূল প্রার্থী। আর তারপরই মানসী প্রকাশ্যে বললেন, “মানস ভুঁইয়া তো নিজে আমার স্বামীকে খুন করেননি। কংগ্রেস ও সিপিএমের লোকেরা খুন করেছিল। এখন মানসদা আমাদের দলে এসেছেন। দলীয় প্রার্থী গীতাদি জয়ী হয়েছেন। আমি খুশি।”

কিন্তু এক বছর আগেই তো ফাঁসি চেয়েছিলেন! সে প্রশ্নের উত্তরে সরাসরি মানসী বলেন, ‘‘এখন বুঝি, সে সব ভুল ছিল।’’

Advertisement

গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল বুথ সভাপতি জয়দেব জানা খুনে আঙুল উঠেছিল মানস ভুঁইয়ার দিকে। তখন তিনি বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী। দুবরাজপুর বুথে সে বার জয়ী হয়েছিলেন জোটপ্রার্থী মানস। তারপর দল বদলেছেন তিনি। তৃণমূলে যোগ দিয়ে হয়েছেন রাজ্যসভার সাংসদ। আর তাঁর ছেড়ে যাওয়া বিধায়ক আসনে উপ-নির্বাচনে জয়ী হলেন তাঁর স্ত্রী গীতা ভুঁইয়া।

ফল অবশ্য অপ্রত্যাশিত ছিল না, বলছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তবু বিরোধীরা এ বার চাপের মুখে ফেলেছিল তৃণমূলকে। বিশেষত বিজেপি। দলত্যাগী মুকুল রায় তৃণমূলের অস্ত্রেই বধ করতে চেয়েছিলেন শাসককে। ভোট প্রচারে দলের কর্মীর খুনে অভিযুক্তকে তৃণমূল ভোট দেবে কিনা— তা ভেবে দেখতে বলে গিয়েছিলেন মুকুল। একই সুরে প্রচার চালিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও চেষ্টা করেছিলেন কংগ্রেস-গড় ধরে রাখতে।

কিন্তু ভোটের হাওয়া দিক বদলায়নি বিশেষ। নিহত জয়দেব জানার দুবরাজপুর বুথে জয়ী হয়েছেন গীতাদেবী। তারপর মানসীর এমন মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ, বলছেন নেতারা।

যদিও মানসী মন থেকে এ সব বলছেন না বলে দাবি করেছেন বিজেপি প্রার্থীর অন্তরা ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, “শাসকের পক্ষে কথা না বললে পরিবারের আরও কাউকে হারাতে হতে পারে ভয় পাচ্ছেন মানসী।” সিপিএম প্রার্থী রিতা মণ্ডল জানা আবার বললেন, “তৃণমূল কর্মী খুনে অভিযুক্ত মানস ভুঁইয়া তৃণমূলে আত্মসমর্পণ করেছেন। তার পরে নিহতের স্ত্রী চাকরি পেয়েছেন। এখানে নতুন করে কিছু হারানোর আশঙ্কা ও চাওয়া-পাওয়ার স্বার্থ থেকে নিহতের স্ত্রী স্বামীর খুনে অভিযুক্তকে মাফ করছেন। কিন্তু এটা তাঁর মনের কথা নয়।” মানসীর চাকরি পাওয়ার কথা তুলে কটাক্ষ করেছেন সবংয়ের কংগ্রেস প্রার্থী চিরঞ্জীব ভৌমিকও।

চাকরি আর কৃতজ্ঞতার কথা অস্বীকার করেননি মানসীও। ডেবরা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে অস্থায়ী কর্মীর কাজ পেয়েছেন তিনি। জেলা পরিষদের টাকায় পাকা বাড়িও করছেন। উপ-নির্বাচনের আগে বড় ছেলে সরোজের কাজের বন্দোবস্ত করে দেওয়া হবে বলে আশ্বাসও পেয়েছেন। মানসী বলেন, “ভোটের আগে মানসদার সঙ্গে কথা বলেছিলাম। আমার একার রোজগারে সংসার চালানো কঠিন। ছেলের কাজের ব্যবস্থা করবেন, বলেছেন মানসদা। গীতাদি জয়ী হওয়ায় আশা বাড়ছে।”

তবে কথা বলার ফাঁকে গলা কেঁপেছে তাঁর, “স্বামী হারানোর সব দুঃখ মনে চাপা রয়েছে।” আর তারই মধ্যে স্বামীর রেকর্ড ভেঙে জয়ী হয়েছেন গীতা ভুঁইয়া। সিপিএম প্রার্থীর সঙ্গে তাঁর ভোটের ব্যবধান ৬৪,১৯২।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement