তেমাথানির সভামঞ্চে মানস ভুঁঁইয়া। নিজস্ব চিত্র।
কৃষি আইন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে জনসভার আয়োজন করেছিল তৃণমূল। শুক্রবার দুপুরে সবংয়ের তেমাথানিতে সেই সভা কার্যত শুভেন্দু অধিকারীর পাল্টা তৃণমূলের সভায় বদলে গেল। সভামঞ্চ থেকে আগাগোড়া শুভেন্দুর বিরুদ্ধে আক্রমণ শানালেন সবংয়ের ভূমিপুত্র, ঘাসফুলের সাংসদ মানস ভুঁইয়া-সহ দলের সব নেতারাই।
শুক্রবার দুপুরে সবংয়ের তেমাথানি রাইস মিলের ছিল তৃণমূলের জনসভা। গত বুধবার এই তেমাথানিতেই সভা করেন সদ্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া শুভেন্দু। সে দিনও মানসকে নানাভাবে নিশানা করেছিলেন শুভেন্দু। এ দিন পাল্টা বলতে উঠে শুভেন্দুর নাম না করে মানসের কটাক্ষ, “পূর্ব মেদিনীপুরের এক সন্তান, কলিযুগের টুকটুকে গৌরাঙ্গ! তিনি শচীমাতাকে লাথি মেরে কোথায় গেলেন? ভারতবর্ষ জুড়ে যারা ডাকাতি করছে, কৃষকের অধিকার যারা কেড়ে নিয়েছে, সেখানে গিয়েছে গৌরবর্ণের কালো সন্তান।’’ একই সুরে তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতির খোঁচা, “মহাপ্রভু জেনে রাখুন, আপনি নদিয়ার নিমাইচাঁদ নন, রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ নন, আপনি সারদানন্দ। পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত সারদার এক নম্বর আসামী।’’
সবংয়ে এসে ‘বিশ্বাসঘাতক’ তকমা ফিরিয়ে মানসকে বিঁধেছিলেন শুভেন্দু। এ দিন সেই প্রসঙ্গে নিজের তৃণমূলে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেন মানস। তিনি বলেন, “আমি পালিয়ে যাইনি। আমাকে লাথি মেরে তাড়ানো হয়েছিল। আর গৌরসোনা তোমাকে তো তাড়ানো হয়নি। তুমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লাথি মেরে চলে গিয়েছো।’’ শুভেন্দুকে বিঁধতে স্বাধীনতা সংগ্রামী সতীশ সামন্তের প্রসঙ্গও টেনেছেন মানস। রাজ্যসভার সাংসদ বলেন, “সতীশ সামন্তরা ইংরেজদের হাত থেকে এই বাংলা তথা ভারতবর্ষকে রক্ষা করেছিলেন। আর তুই বাংলাকে গুজরাতি বাবুদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছিস। তোর নাম কী দেব? তুই গৌরবঙ্গের কালা সন্তান।’’
মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি, রাজ্যের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্ররা। সভায় বারবার ফিরেছে ‘বেইমান’ প্রসঙ্গ। দিন কয়েক আগেই শুভেন্দু বন্দনা করে দলবিরোধী মন্তব্য করা ডেবরার তৃণমূল নেতা অলোক আচার্যকে মঞ্চে দেখে অজিত সরাসরি বলেন, “অলোক আগে ঠিক করে নাও কী করবে। আজকের জনসভা প্রমাণ করছে কে গেল আর কে থাকল তাতে মানুষের কিছু যায় আসে না। যারা যাচ্ছে তারা নিজের জন্য, লোভে, স্বার্থে, জেল খাটার ভয়ে যাচ্ছে।’’ সঙ্গে অজিতের হুঁশিয়ারি, “মেদিনীপুরের পবিত্র মাটিতে বেইমানদের পুঁতে দেব আমরা।’’
দু’দিন আগে শুভেন্দু অধিকারী ও ভারতী ঘোষরা যে ভাবে তাঁকে রাবণ, চিটফান্ডের চোর বলেছিলেন তারও জবাব এ দিন দিয়েছেন মানস। তিনি বলেন, “আমাকে বলল আমি নাকি চোর। বুঝতে পারছি কেস সাজাচ্ছে। আমাকে জেলে পাঠাবে।’’ ভারতী জেলা পুলিশ সুপার থাকাকালীন শুভেন্দুর সঙ্গে তিক্ততার কথা তুলে ধরেছেন মানস। পাশাপাশি সবংয়ের শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ নেতা, সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া অমূল্য মাইতিকেও বিঁধেছে। মাস কয়েক আগে ডেবরায় অমূল্যের বিরুদ্ধে হওয়া শ্লীলতাহানির মামলার কথা মানস বলেন, “ওঁর (শুভেন্দু) একটা চারফুটের চ্যালা আছে সবংয়ে। আমার চাইতে ওই চারফুটিকে কেউ চেনে না। নির্বাচন এলেই আমি চোখ মেলে দেখতাম তিনি দাঁড়িয়ে আছেন। ডেবরায় কী একটা ঘটনা-টটনা ঘটে গিয়েছে। থানায় কেস-টেস হয়েছে। সকলকে একটু প্রতিবাদ করতে বলছি।’’
এ প্রসঙ্গে অমূল্যের প্রতিক্রিয়া, “মানস ভুঁইয়ার সাতজন দিদি রয়েছেন। তাঁদের উচ্চতা বোধহয় আমার থেকেও কম। শুভেন্দু অধিকারী যে ওষুধ দিয়ে গিয়েছেন তাতে মানস ভুঁইয়াদের মাথা খারাপ হয়ে গিয়ে। পায়ের তলায় মাটি খুঁজে না পেয়ে ফ্লপ সভায় দাঁড়িয়ে এ সব বলছেন।’’