ফাইল চিত্র।
‘দিদিকে বলো’য় দুর্ব্যবহারের নালিশ খোদ তৃণমূল জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে। তাতেই দলের অন্দরে উঠল প্রশ্ন। তবে কি মুখ পাল্টেও ‘পুরনো রোগ’ সারানো গেল না!
ঝাড়গ্রাম শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ১৯০ নম্বর বুথের সভাপতি তন্ময় দাস গত শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জেলা তৃণমূল সভানেত্রী বিরবাহা সরেনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। বিরবাহা তখন ছিলেন জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শকের দফতরে। তন্ময়ের অভিযোগ, ব্যক্তিগত প্রয়োজনে তিনি জেলা সভানেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে বিরবাহা দুর্ব্যবহার করেন। তন্ময়ের কথায়, ‘‘দফতরের এক কর্মীর অনুমতি নিয়ে অফিস ঘরের পর্দা সরিয়ে প্রবেশ করার জন্য বিরবাহাদির কাছে অনুমতি চেয়েছিলাম। কিন্তু উনি কোনও কথা না শুনেই আমাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেন। বলেন আমার সময় নেই।’’
তন্ময়ের দাবি, বিরবাহা তাঁর পূর্ব পরিচিত। কিছুদিন আগে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে দিদিকে বলো কর্মসূচিতে বিরবাহার সঙ্গে তিনি ছিলেন বলে দাবি তন্ময়ের। বিষয়টি তন্ময় পোস্ট করেন শহর তৃণমূলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে। তারপর থেকে দলের অন্দরে শুরু হয়েছে চর্চা। দলের পুরনো নেতা-কর্মীদের একাংশের বক্তব্য, বিগত পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটের পর্যালোচনাতেই স্থানীয় নেতাদের ঔদ্ধত্য, দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠে এসেছিল। শীর্ষ নেতারা এ নিয়ে একাধিকবার মুখ খুলেছেন। সাবধান করেছেন। সমস্যা সমাধানে রাজনীতিতে তুলনায় আনকোরা বিরবাহাকে করা হয়েছিল জেলা সভানেত্রী। এ বার অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধেই। শহরের এক প্রবীণ তৃণমূল নেতা বলছেন, ‘‘এ তো দেখছি মুখ বদলেছে। রোগ সারেনি।’’ ১৯৯৮ সাল থেকে তৃণমূল করেন এমন এক কর্মী বললেন, ‘‘ফল এত খারাপ হল। তা-ও শিক্ষা হল না।’’ আক্ষেপ করছেন তন্ময়ও। তাঁর কথায়, ‘‘বহুদিন দলের সঙ্গে রয়েছি। দলের একজন অভিভাবক যদি কর্মীদের সঙ্গে এমন ব্যবহার করেন তাহলে কীভাবে দল থাকবে? বিরবাহাদির ব্যবহারে অত্যন্ত ব্যথিত হয়ে ‘দিদিকে বলো’য় জানিয়েছি। দলের হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপেও পোস্ট করেছি।’’
যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই বিরবাহা বলছেন, ‘‘শিক্ষা দফতরের এক সচিব এসেছিলেন। তাই খুব ব্যস্ত ছিলাম। তখন একজন এসেছিলেন। তাঁকে পরে আসতে বলেছিলাম। কোনও দুর্ব্যবহার করিনি। আমি সব সময়ই মানুষের সঙ্গে রয়েছি।’’
কী সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েছিলেন? তন্ময় জানিয়েছেন তাঁর এক দাদা রেল লাইনের ধারে থাকতেন। রেলের তৃতীয় লাইনের কাজের জন্য ওই বাড়ি ভেঙে দেন রেল কর্তৃপক্ষ। পুনর্বাসন পাওয়ার জন্য পুরসভার কাছে আবেদন করেছেন তন্ময়ের দাদা। তাই নিয়েই তিনি আলোচনা করতে গিয়েছিলেন বলে তন্ময়ের দাবি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করি। সেই জন্য সময় বার করতে অসুবিধে হয়। ওই দিন সময় পেয়ে জেলা সভানেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাই।’’
হোয়াটসঅ্যাপে তন্ময় পোস্ট করার পর পাশে পেয়েছেন অনেককে। অভিমান নিয়ে কেউ লিখেছেন, ‘ভাইরে মন খারাপ করিস না, এটাই প্রাপ্য। আমিও ওঁর কাছে গিয়েছিলাম। আমি পরিচয় দেওয়ার আগেই উনি বললেন, বেরিয়ে যাও’। আর এক কর্মী লিখেছেন, ‘যাঁরা কোনওদিন দল করেননি, তাঁরা দলের পুরনো কর্মীদের চিনবেন কী করে’।
ঝাড়গ্রাম লোকসভায় হারার পর জেলার দায়িত্ব পেয়েছিলেন বিরবাহা। দ্রুত রাজনীতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন বুনো ফুল (বিরবাহা শব্দের অর্থ)। তৃণমূলের নেতাদের একাংশ বলছেন, রাজনীতিতে তো ফুলের চেয়ে কাঁটাই বেশি!