মমতার চিঠি। নিজস্ব চিত্র
লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণার পরে বিভিন্ন সময়ে তৃণমূল নেত্রী দাবি করেছেন, পরাজয় মানেই হার নয়। তাঁর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ করেন তিনি। এ বার দলীয় কর্মীদের প্রতি খোলা চিঠি লিখেও সেই কথাই জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার ছবি ও স্বাক্ষর দেওয়া ‘কর্মীদের প্রতি’ শীর্ষক একপাতার সেই আবেদন পশ্চিম মেদিনীপুরেও এসেছে।
জেলা তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার সব ব্লকে ইতিমধ্যেই ৫০ হাজার চিঠি পৌঁছে গিয়েছে। অনেক জায়গায় সেগুলি বিলি করাও হয়েছে। ওই আবেদনে রবীন্দ্রনাথ, বিদ্যাসাগর, নজরুল, রামমোহন, রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, নেতাজির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মমতা লিখেছেন—‘পরাজয়ের অর্থ মৃত্যু নয়, বরং আরও উৎসাহ ও ঐক্যবদ্ধ শক্তি নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে নতুন করে লড়াই। বাংলাকে এত সহজে হারানো যায় না।’ ছাপানো বার্তায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহাত্মা গাঁধীর অহিংসা, বিরসা মুণ্ডার বিক্রম, অম্বেডকরের অনুশাসন-সহ আবুল কালাম আজাদ, ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকি, ভগৎ সিংহদের লড়াইয়ের কথা উল্লেখ করে কর্মীদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছেন। কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি লিখেছেন—‘আমি অন্তর থেকে বিশ্বাস করি ভোটযন্ত্রের যান্ত্রিকতার চাতুর্যে বেশিদিন বিভ্রান্ত করা যাবে না মা মাটি মানুষের রায়কে।’ শেষ অনুচ্ছেদে রয়েছে—‘এই নির্বাচনে কেউ আমাদের সমর্থন করেছেন, কেউ সাবধান করেছেন, এর থেকে শিক্ষা নিয়ে লড়াই করতে হবে, এগিয়ে চলতে হবে।’
মমতার চিঠি কৌশল অবশ্য নতুন নয়। লোকসভা ভোটের আগে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের উপভোক্তা এমনকি স্কুলের অভিভাবকদেরও চিঠি দিয়ে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। লোকসভা ভোটে পশ্চিম মেদিনীপুরে ১৫টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৭টিতেই পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। প্রায় প্রতিদিনই তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগদান চলছে। একে ভোটের হতাশাজনক ফল, তারপর সম্প্রতি কাটমানি-বিক্ষোভ—সব মিলিয়ে এখন জেলায় তৃণমূল কর্মীদের মনোবল নিম্নমুখী। গড়বেতা, কেশপুরের মতো শক্ত ঘাঁটিতেও দ্রুতগতিতে পদ্ম ফুটছে। এই অবস্থায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছাপানো ‘কর্মীদের প্রতি’ বার্তা দলকে চাঙ্গা করতে সাহায্য করবে বলে মনে করছেন জেলা নেতৃত্ব। জেলা তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘এই বার্তায় দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করার রসদ জুগিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি জানান, দলনেত্রী কর্মীদের প্রতি যে আবেদন রেখেছেন সেটা জেলার কর্মীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। অজিতের দাবি, ‘‘ভোটের পরে কর্মীদের ফের রাজনৈতিক লড়াইয়ে অনুপ্রাণিত করতেই নেত্রীর এই বার্তা।’’
যদিও কর্মীদের মনোবল ফেরাতে তৃণমূলের এই কৌশলকে খোঁচা দিতে ছাড়েনি বিজেপি। দলের জেলা সভাপতি শমিত দাসের কটাক্ষ, ‘‘কোনও কৌশলই তৃণমূলকে আর অক্সিজেন জোগাতে পারবে না, ওদের সব কৌশলই মানুষ ধরে ফেলেছেন।’’