— প্রতীকী চিত্র।
তেল-সাবান-শ্যাম্পু থেকে বিস্কুট-মুড়ি-চানাচুর-পাঁউরুটি— নিত্য ব্যবহারের এই সব স্বল্পমেয়াদি ভোগ্যপণ্যে খরচ বেড়েছে আগেই। এ বার যখন দামের চাপ কমার অপেক্ষায় মানুষ, তখন আঘাত এসেছে আর এক দফা। সূত্রের দাবি, এগুলি তৈরির সংস্থাগুলির মুনাফা কমছে বেশ কিছু দিন ধরে। অথচ মূল্যবৃদ্ধির জেরে বেড়েছে উৎপাদনের খরচ। ফলে একাংশ ফের দাম বাড়াচ্ছে। অন্য অংশ দাম এক রেখে মোড়কবন্দি পণ্যের ওজন আরও কমাচ্ছে। আর এর ধাক্কায় বেড়ে যাওয়া সংসার খরচে দুর্ভোগ বাড়ছে মানুষের।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, মূল্যবৃদ্ধি আয় কমানোয় বাধ্য হয়ে এই খাতে খরচে কমাচ্ছেন অনেকে। এতেও লাভ হারাচ্ছে হিন্দুস্থান ইউনিলভার, আইটিসি, ডাবর, মেরিকো, পার্লে অ্যাগ্রোর মতো সংস্থা। গত এপ্রিল-জুন এবং জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে তাদের আর্থিক ফলে যা স্পষ্ট।
পার্লে অ্যাগ্রোর এমডি নাদিয়া চহ্বাণ বলেন, ‘‘চলতি অর্থবর্ষে নানা কারণে লাভ কমেছে। তাই দাম স্থির রেখে একাধিক পণ্যের ওজন কমিয়েছি। এ ছাড়া পথ ছিল না।’’ সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, কোকা কোলার ২০ টাকার ঠান্ডা পানীয়ের বোতলের মাপ কমেছে ১০%-২০%। পার্লে জি-র ৫ বা ১০ টাকার প্যাকেটে বিস্কুট কমেছে ২০%-৪০%। এখানে দাম ও ওজন, দুই-ই বদলেছে। ২০ টাকার ভিম বারের ওজন প্রায় ২০ গ্রাম কমেছে। সোবিসকো বিস্কুট প্রস্তুতকারী সোনা বিস্কুটের কর্তা মৃণাল সেন বলছেন, ‘‘দাম না বাড়িয়ে পণ্য কম দিচ্ছি। মূলত, ৫-১০ টাকার বিস্কুটের প্যাকেটের আকার কমছে। ক্রেতারাও বেশির ভাগ ছোট প্যাকেট কিনছেন। একই দামে বাড়তি পাওয়ার সুবিধাও তুলে নেওয়া হচ্ছে।’’
বিশেষজ্ঞ সংস্থা কান্টারের সমীক্ষা বলছে, গড়ে প্রতিটি পরিবার বছরে ১৫৬ বার এই ধরনের পণ্য কিনতে দোকানে গিয়েছেন। অর্থাৎ প্রতি আড়াই দিনের কম সময়ে এক বার। সংস্থার দাবি, মূলত ছোট বা সস্তার প্যাকেট কেনাই এর কারণ। এতে স্পষ্ট ক্রেতার খরচ কমানোর ইচ্ছে, দাবি নাদিয়ার। অথচ কান্টারের তথ্যে প্রকাশ, জানুয়ারি-মার্চে পরিবার পিছু
স্বল্পমেয়াদি ভোগ্যপণ্য কেনার খরচ বেড়েছে ১৮%। মাসে বাড়তি লাগছে প্রায় ৭০০-৭৫০ টাকা। এক ত্রৈমাসিকে খরচ গড়ে ৪৯,৪১৮ টাকা। গ্রামের চেয়ে শহরে খরচ দেড় গুণ বেশি।
গোদরেজ কনজ়িউমার্স প্রোডাক্টের সিইও সুধীর সীতাপতির দাবি, ‘‘মার্চ থেকে পাম তেলের খরচ বাড়ছে। সেটি-সহ কিছু পণ্যে আমদানি শুল্কও বেড়েছে। তার প্রভাব পড়ছে কিছু খাবারে।’’ যদিও গোদরেজ এখনও দাম বাড়ায়নি। জয় পার্সোনাল কেয়ারের চেয়ারম্যান সুনীল আগরওয়ালের বার্তা, দাম বৃদ্ধির প্রবণতা সাময়িক। তাঁরা বাড়ানওনি। তবে বাড়াতে হবে।
ওয়েস্ট বেঙ্গল বেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিইও আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা জানুয়ারি থেকে রাজ্যে পাউরুটির দাম পাউন্ডে ২ টাকা বাড়াব। কারণ, গত দু’বছরে ময়দার দাম কেজিতে ৮-১০ টাকা বেড়েছে। চড়েছে অন্য কাঁচামালও।’’ তাঁর দাবি, শীঘ্রই বিস্কুটের ক্ষেত্রেও ওজন কমাতে চলেছে স্থানীয় বেকারিগুলি। তবে দাম এক থাকবে। যদিও গ্রাহকদের একাংশ জানাচ্ছেন, কিছু বেকারি বিস্কুটের দাম বেড়েছে।