সভাস্থলে অজিত মাইতি ও প্রদীপ সরকার। নিজস্ব চিত্র
ভূগোল আর রাজনীতির জংশন হচ্ছে রেলশহর।
শেষ মুহূর্তে পরিবর্তন না হলে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর রাতে খড়্গপুরে পৌঁছচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শহরের উপকণ্ঠে বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকে ঘাঁটি বাঁধবেন তিনি। সেখানেই সারবেন প্রশাসনিক কর্মসূচি। সেখান থেকেই যাবেন পূর্ব মেদিনীপুর। ফের ফিরবেন। কেন বেছে নেওয়া হল রেলশহরকে? যে ব্যাখ্যা উঠে আসছে তা মূলত দু’ভাগে বিভক্ত। ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক। খড়্গপুর এমন একটি জায়গা যেখান থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া তুলনায় সহজ। তৃণমূল সূত্রের খবর, কয়েকদিন তৃণমূলনেত্রী বিভিন্ন জেলার নেতাদের ডেকে নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। সাম্প্রতিক সাংগঠনিক রদবদলের পরে বিভিন্ন জায়গায় ক্ষোভ দানা বাঁধছে। সামনে পঞ্চায়েত ভোট। নেত্রী চান না কোন্দলের প্রভাব পড়ুক ইভিএমে। তাই নরমে-গরমে সমস্যার সমাধানে ডাকা হবে নেতাদের। সড়ক ও রেল দুই যোগাযোগ থাকায় নেতারা পৌঁছতে পারবেন সহজে। প্রশাসনিক মহলের একাংশের ব্যাখ্যা, পুজোর দেরি নেই। মেদিনীপুর, খড়্গপুরের কিছু জায়গায় তোরণ বাঁধা হয়েছে। কনভয় যাতায়াতের কথা মাথায় রেখে বাছা হয়েছে ওই এলাকা।
রেলশহর বিজেপির ‘খাসতালুক’ বলে পরিচিত। এই শহর থেকেই গত ২০১৬ সালে প্রথমবার বিধানসভা দখল করেছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তার পরে শহরে রেলের বাংলোয় নিজের কার্যালয় খুলেছেন দিলীপ। জিতেছেন গত লোকসভা নির্বাচনেও। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে শহর সংলগ্ন খড়্গপুর-১ ও খড়্গপুর-২ ব্লকের বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতে ভাল ফল করে বিজেপি। আবার গত বিধানসভা উপ-নির্বাচনে প্রথমবার শহরের বিধানসভা তৃণমূল দখল করলেও ২০২১সালের বিধানসভা নির্বাচনে তা ছিনিয়ে নেয় বিজেপি। জয়ী হন তারকা প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায়। এমন পরিস্থিতিতে গত কয়েক বছর ধরেই তৃণমূলের ‘পাখির চোখ’ খড়্গপুর। অন্যবার রেলশহরে থাকলে বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকের কাছে একটি হোটেলে থাকতেন মমতা। তাঁর পরামর্শে শিল্পতালুকেই তৈরি হয়েছে সরকারি কটেজ। এ বার সেখানেই উঠছেন তিনি। পাশেই পুরসভার নির্মীয়মাণ স্টেডিয়ামের মাঠে ১৫ সেপ্টেম্বর হবে প্রশাসনিক কর্মসূচি। খড়্গপুর থেকেই ঠিক হতে পারে পূর্ব মেদিনীপুরে জেলা পরিষদের সভাধিপতি কে হবেন। বৈঠকে থাকবেন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পরিষদের সদস্যরাই। থাকতে পারেন পূর্বের তৃণমূল বিধায়কেরা।
মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরসূচি নির্বিঘ্ন করতে এ দিন খড়্গপুর শিল্পতালুকের ওই কটেজ ও ময়দানে দু’দফায় বৈঠক করেন জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা। ছিলেন জেলা পুলিশ ও মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আধিকারিকরা। কটেজের অদূরে থাকা একটি বহুতলে আবাসনে নজরদারি চালানোর কথাও আলোচনা হয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বৈঠকে। এ দিন মাঠ পরিদর্শনে এসেছিলেন তৃণমূলের জেলা কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি, পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার প্রমুখ। ইতিমধ্যেই প্রশাসনিক কর্মসূচির জন্য স্টেডিয়ামের মাঠেই তাঁবু দিয়ে অস্থায়ী সভাগৃহ গড়ার কাজ শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরের রাজনৈতিক সুফল ঘরে তুলতে মরিয়া তৃণমূল। এ দিন মাঠ পরিদর্শনের ফাঁকে খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, ‘‘দিদি নিজেই স্টেডিয়াম ও থাকার ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। দিদি আসায় এর সুফল আগামী লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত পাব।” আরেক ধাপ এগিয়ে তৃণমূলের জেলা কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি বলেন, “মনে হচ্ছে দিদি এই সুন্দর কটেজ ও নতুন স্টেডিয়াম থেকেই খেলা শুরু করে দিয়ে যাবেন। সেই খেলা পঞ্চায়েত থেকে লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত চলবে।”