মেদিনীপুর শহর জুড়ে মাথা তুলছে পরের পর বহুতল। নিজস্ব চিত্র।
মেদিনীপুরের মতো তুলনায় ‘ছোট’ শহরে উঁচু উঁচু বহুতল দেখে বিস্মিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, পুরপ্রধান সৌমেন খানকে কার্যত বকাঝকাও করেছেন তিনি। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘মেদিনীপুরে এত উঁচু উঁচু বাড়ি হচ্ছে কী করে? ১০-১২ তলা বাড়ি! কে পারমিশন দিচ্ছে? কী ভাবে দিচ্ছে?’ শহরে বেআইনি নির্মাণ বরদাস্ত করা যাবে না, পুরপ্রধানকে স্পষ্ট বুঝিয়েছেন তিনি।
সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মেদিনীপুরে এসেছিলেন আকাশপথে। পথেই তিনি দেখেছেন, শহরে কী ভাবে বহুতল গড়ে উঠেছে। বিধাননগরের মাঠে যেখানে অস্থায়ী হেলিপ্যাড হয়েছিল, তার আশেপাশেও একাধিক বহুতল রয়েছে। সোমবার বিকেলে সার্কিট হাউসে বিধায়ক, পুরপ্রধান, জেলা পরিষদ সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে ওই প্রসঙ্গ তুলে পুরপ্রধানকে কার্যত বকুনি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে উপস্থিত এক বিধায়ক মানছেন, ‘‘বৈঠকের শেষের দিকে ঘটনাটা ঘটেছে।’’
সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য উঠে দাঁড়িয়েছিলেন পুরপ্রধান। বলতে শুরু করেছিলেন, ‘দিদি, আপনাকে ধন্যবাদ। মেদিনীপুর মেডিক্যালে ক্যাথল্যাবটা করে দিয়েছেন আপনি। অনেক মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। সিনিয়র ডাক্তারদের অনেকে নিয়মিত হাসপাতালে আসেন না। বিষয়টা একটু দেখবেন।’ এরপরই বহুতলের প্রসঙ্গ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই বিধায়কের কথায়, ‘‘উনি (সৌমেন) নিজে থেকেই মেডিক্যালের ওই কথা বলতে গিয়েছিলেন। বলতে গিয়ে বহুতল নিয়ে দিদির প্রশ্নেরমুখে পড়েছেন।’’
জানা যাচ্ছে, বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করেছেন, মেদিনীপুরের মতো শহরে জি-প্লাস ফোর বা ফাইভ বাড়ি হতে পারে। এর বেশি উঁচু বাড়ি হতেই পারে না। তিনি স্পষ্ট করেছেন, কলকাতাতেও এখন আর এত উঁচু বাড়ি তৈরির অনুমতি দেওয়া হয় না, সব দিক খতিয়ে দেখে, ক্ষেত্রবিশেষ ছাড়া।
সূত্রের খবর, মমতার বকুনি খেয়ে পুরপ্রধান সাফাই দেন, শহরে ওই সব বাড়ি তৈরির অনুমতি বিগত পুরবোর্ড দিয়েছে। তা শুনে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি কোনও কথা (অজুহাত) শুনতে চাই না।’ এত উঁচু বাড়িতে কোনও অঘটন ঘটলে তখন তার দায় কে নেবে, সেই প্রশ্নও তুলেছেন মমতা।
আগেও জেলা সফরে এসে বহুতল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপর দিন কয়েক কাজ বন্ধ থেকেছে। পরে বেআইনি নির্মাণ ফের রমরমিয়ে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রী সতর্ক করার সময় যে বাড়ি দশতলা উঠেছিল, পরে তা বারোতলা হয়েছে! বছর দেড়েক আগে মুখ্যমন্ত্রী এসেছিলেন খড়্গপুরে। ছিলেন শিল্পতালুকের সরকারি কটেজে। তার অদূরে বহুতল মাথা তুলেছে দেখে সে বাও বিস্মিত হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই বহুতলের অনুমতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাঁর প্রশ্নের মুখে এমকেডিএ-র চেয়ারম্যান তথা খড়্গপুর গ্রামীণের বিধায়ক দীনেন রায় জানিয়েছিলেন, ওই বহুতল তৈরির সময় তিনি চেয়ারম্যান ছিলেন না। এ বার মেদিনীপুরে এসে বেআইনি বহুতল নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
বস্তুত, শহরে বেপরোয়াভাবে বেআইনি বহুতল নির্মাণ চলছে। রয়েছে অসাধু প্রোমোটার-চক্র। পুরসভা থেকে অনুমোদন নেওয়া হচ্ছে চার- পাঁচতলা বাড়ির। পরে বিপজ্জনকভাবে দশ-বারোতলা বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে চারপাশে যথেষ্ট জমি না ছেড়েই, পুর-আইনকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে।
নিয়মানুযায়ী, পাঁচতলার বেশি বহুতলে ঢোকা ও বেরোনোর জন্য দু’টো সিঁড়ি, কমপক্ষে এক লক্ষ লিটারের জলাধার, স্মোক ডিটেক্টর এবং অ্যালার্ম থাকার কথা। কিছুই মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। মেদিনীপুরের কংগ্রেস কাউন্সিলর মহম্মদ সইফুলেরও নালিশ, ‘‘বিল্ডিং রুল না মেনেই একের পর এক বহুতল হচ্ছে।’’ জেলা বিজেপির মুখপাত্র অরূপ দাসের কটাক্ষ, ‘‘বেআইনি নির্মাণ ঠেকানোর সদ্দিচ্ছাই নেই পুরসভার। কেন নেই, সেটা শহরের মানুষ জানেন।’’
পুরপ্রধান সৌমেন খানের অবশ্য দাবি, ‘‘বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।’’ তাঁরও আরও দাবি, বেআইনি বহুতল সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। পুরসভার অনুমতি ছাড়া যে সব বহুতল তৈরি হয়েছে, সেগুলির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থাই নেওয়া হবে।