লাল বাতি লাগানো গাড়িতে মন্ত্রী অখিল গিরি। ছবি:সংগৃহীত।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে লাল বাতি লাগানো গাড়ি চড়েন না। কিন্তু তাঁর দলের নেতা-মন্ত্রীদের অনেকেই তা চড়েন। এবং তা যে তিনি পছন্দ করেন না, নবান্নে তৃণমূল পুরপ্রধানদের নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকে সে কথা নিজেই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। লাল বাতির গাড়িতে ঘোরার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন করেছেন।
তারপরেও অবশ্য লাল বাতি লাগানো গাড়িতেই ঘুরছেন রামনগরের বিধায়ক তথা রাজ্যের কারা দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী অখিল গিরির। কলকাতা থেকে কাঁথি, কিংবা রামনগর, সেই গাড়িতেই ঘুরছেন অখিল। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে তৃণমূলের অন্দরেই।
রাজ্যে লাল এবং নীল বাতির গাড়ির যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘ দিনের। এ নিয়ে ২০২০ সাল নাগাদ একটি মামলা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। তৎকালীন বিচারপতি জি সিঙ্ঘভি এবং সি নাগাপ্পনের বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ ছিল, দেশে জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্তা ব্যক্তিদের মধ্যে লাল বাতি এবং হুটারের যথেচ্ছ অপব্যবহারের প্রবণতা রয়েছে। এটা গণতন্ত্রের বিরোধী। বিষয়টি ক্ষমতা জাহিরের অভ্যাস বলে জানিয়ে এতে আশু লাগাম পরানো প্রয়োজন বলে জানিয়েছিল শীর্ষ আদালত।
তারপর কারা গাড়িতে লাল এবং নীল বাতি লাগাতে পারবেন, সেই বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল রাজ্য পরিবহণ দফতর। সেই মতো মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল, হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং পূর্ণ মন্ত্রীরা ফ্ল্যাশার লাগানো লাল বাতি আর প্রতিমন্ত্রীরা গাড়িতে শুধুমাত্র লাল বাতি লাগাতে পারবেন। সে দিক থেকে অখিল নিয়ম ভাঙেননি। তবে খোদ নেত্রী যেখানে এ নিয়ে সরব, সেখানে অখিলের পদক্ষেপে প্রশ্ন উঠেছে।
শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যাওয়ার পরে জেলার রাজনীতিতে অখিলের গুরুত্ব বাড়ে। দলের পুরনো দিনের সৈনিক অখিলকে মৎস্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী করেন মমতা। পরে অবশ্য সেই দফতর কেড়ে প্রতিমন্ত্রী করা হয় জেলারই পাঁশকুড়া পূর্বের বিধায়ক বিপ্লব রায়চৌধুরীকে। আর অখিল কারা দফতরের মন্ত্রী হন। বিপ্লবের গাড়িতে অবশ্য নীল বাতি লাগানো। আর অখিল চড়েন লাল বাতির গাড়িতে। এ বিষয়ে জানতে ফোন করা হলে ধরেননি অখিল। জবাব দেননি মেসেজেরও। তবে অখিল-পুত্র তথা কাঁথির পুরপ্রধান সুপ্রকাশ গিরি বলছেন, ‘‘সরকারি নির্দেশিকাতে আছে কারা কারা লাল বাতি ব্যবহার করতে পারবেন। উনি (বাবা) ওই নির্দেশিকা অনুসরণ করছেন। আর নবান্নের বৈঠক মন্ত্রিসভার ছিল না। পুরসভার চেয়ারম্যান-সহ আধিকারিকদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী যা বলার বলেছেন।’’
দক্ষিণ কাঁথির বিধায়ক তথা বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরূপকুমার দাসের কটাক্ষ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ভাল ভাবেই জানেন যে তাঁর দলের জনপ্রতিনিধিরা তাঁর নির্দেশ মানেন না। আর এটা আসলে নিজের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রীর বাংলার জনগণকে বোকা বানানোর চেষ্টা।’’ পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা পটাশপুরের বিধায়ক উত্তম বারিকের মতে, ‘‘ব্যক্তিগতভাবে কে, কী করছেন জানি না। তবে আমরা যেহেতু তৃণমূলের কর্মী, তাই আমাদের উচিত দলনেত্রীর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করা।’’