বিরবাহা হাঁসদাকে সংবর্ধনা মুখ্যমন্ত্রীর। বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রামের অনুষ্ঠানে। নিজস্ব চিত্র
কিছু ভুল হয়েছে ‘লোকালি’। ছ’মাস পরে ঝাড়গ্রামে এসে কার্যত স্বীকার করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, জঙ্গলমহলের সমস্যাগুলি ছুঁয়ে গিয়ে উন্নয়নে উপুড়হস্ত হলেন তিনি।
আদিবাসীদের প্রধান দুই সমস্যা মাতৃভাষা সাঁওতালিতে শিক্ষা ও পরিবহণ। বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে এই দু’টি সমস্যা মেটাতে আরও গুচ্ছ প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকেই ঝাড়গ্রামের প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের (কলা বিভাগে সাঁওতালি ভাষাশিক্ষা অন্তর্ভুক্ত) ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। উদ্বোধন করেন নতুন ২৪টি এসবিএসটিসি বাসও। এ ছাড়া এদিন জঙ্গলমহলের একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেছেন তিনি।
জঙ্গলমহলে সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপিতে শিক্ষার উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকার অভিযোগে বারে বারেই সরব হয়েছে ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল সহ বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠন। এদিন মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য জানান, নতুন জেলায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হতে চলেছে। এখানকার ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষার জন্য আর বাইরে যাওয়ার দরকার নেই। ঝাড়গ্রাম জেলায় আরও দু’টি সাঁওতালি মাধ্যম স্কুল চালু করার আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে বাঁকুড়া জেলার খাতড়ায় দু’টি এবং পুরুলিয়ায় দু’টি সাঁওতালি মাধ্যম স্কুল চালর প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। সেই সঙ্গে সাঁওতালি মাধ্যম স্কুলগুলিতে আরও দু’শো অলিচিকি শিক্ষক নিয়োগের ঘোষণা করেন মমতা। সাঁওতালি ভাষায় অলচিকিতে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর ও বিশ্ববিদ্যালয়স্তর পাঠ্যক্রম চালুর প্রতিশ্রুতি দেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘সাঁওতালি মাধ্যম কলেজও হবে। সিলেবাস তৈরি হয়ে যাবে।” পঞ্চায়েত ভোটে তুলনায় খারাপ ফলের পর দলীয় স্তরে ঝাড়গ্রাম জেলার দায়িত্ব পেয়েছেন তৃণমূল মহাসচিব তথা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে দু’বার পার্থবাবুকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মমতা। আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানের পর তৃণমূলনেত্রী ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্সে দলীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। সূত্রের খবর, দু’দিন আগে ঝাড়গ্রাম শহরের জলবন্দি অবস্থা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। এ বিষয়ে উষ্মাপ্রকাশ করেন তিনি। শারীরিক অসুস্থতার জন্য বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেননি ঝা়ড়গ্রামের পুরপ্রধান দুর্গেশ মল্লদেব। তাঁর ভাই জয়দেবকে মমতা নির্দেশ দেন— সহযোগিতা করতে হবে দাদাকে। রাজবাড়ি লাগোয়া দক্ষিণপাড়ার যে অংশ জলবন্দি হয়ে পড়েছিল, এ দিন সন্ধ্যায় সেখানে গিয়েছিলেন মমতা।
এ দিন অনুষ্ঠান মঞ্চে সাঁওতালি চলচ্চিত্রাভিনেত্রী বিরবাহা হাঁসদা, সাঁওতালি সাহিত্যিক খেরওয়াল সরেন, তিরন্দাজ সুপর্ণা সিংহের মতো আদিবাসী সম্প্রদায়ের বিশিষ্টজনদের সংবর্ধনা দেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে বিরবাহাকে উত্তরীয় পরালেও তাঁর হাতে উপহার দিতে গিয়ে থমকে যান মুখ্যমন্ত্রী। ভুল করে জেলার এক কর্তা একটি জ্যাকেট এগিয়ে দেন। মুখ্যমন্ত্রী বিরক্ত হয়ে জানতে চান, জ্যাকেট কেন, শাড়ির ব্যবস্থা করা হয়নি কেন? বিরবাহার মানপত্রই বা কোথায়? অপ্রস্তুত জেলার আধিকারিক বলেন, ‘‘ম্যাডাম, বিরবাহাদেবীর বাড়িতে শাড়ি ও মানপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’’ জানা যায়, মানপত্র তৈরি করা হয়নি। রাতে শাড়ি পৌঁছয় বিরবাহার বাড়িতে।