বাড়ছে পুরনো বাজার, জটও

কোথাও দোকান বন্ধ। কোথাও অন্য ব্যবসা। কিসান মান্ডির উদ্দেশ্য পূরণ হচ্ছে কি? ঘুরে দেখল আনন্দবাজারবড় বাজারেই আরও বেড়েছে দোকান-ব্যবসা। 

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:২২
Share:

তমলুকে রাজ্য সড়কের পাশেই বসেছে বাজার। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস

জেলা সদর তমলুকে কিসান মান্ডি তৈরি হয়েছে সম্প্রতি। পাশেই তৈরি করা হয়েছে রেগুলেটেড মার্কেট। ওই দুই বাজারের কাছেই রয়েছে শহরের বড় বাজার। মূলত বড় বাজারের উপর চাপ কমিয়ে সেখানের ব্যবসায়ীদের ওই দুই বাজারে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল প্রশাসনের। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছে, তেমনটা হয়নি। উল্টে বড় বাজারেই আরও বেড়েছে দোকান-ব্যবসা।

Advertisement

আবার পাঁশকুড়ায় স্টেশন বাজারকে যানজটমুক্ত বছর চারেক আগে সেখানের প্রায় সাড়ে ৬০০ ফল ও আনাজ ব্যবসায়ীকে পাঁশকুড়া কৃষক বাজারে সরিয়ে আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। স্থায়ী স্টল বিতরণের জন্য কৃষকদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকাও নেওয়া হয়। কিন্তু এখনও চালু হয়নি বাজার। ফলে অভিযোগ উঠেছে, দিন দিন যেমন ভোগান্তি বেড়েছে ব্যবসায়ীদের, তেমনই নিত্য দিন যানজটের মুখে পড়ছেন এলাকাবাসী।

তমলুকে ১০০ বছরের পুরনো বড় বাজারে চাল, আনাজ, মাছ, ফল, মাংসের স্থায়ী দোকানপাটের পাশাপাশি খোলা চত্বরেও ১০০টির বেশি দোকান বসে। বাজারের ভিতরে যাতায়াতের রাস্তা দখল করেই ওই সব ব্যবসায়ী তাঁদের জিনিসপত্র রাখেন বলে অভিযোগ। ফলে বিভিন্ন জিনিস কেনাকাটা করতে আসা বাসিন্দাদের যাতায়াতের অসুবিধার মুখে পড়তে হয়। অন্যদিকে, খোলা আকাশের নীচে বসা আনাজ, মাছ ব্যবসায়ীদের বর্ষাকালে চরম হায়রানির শিকার হতে হয় বলে দাবি।

Advertisement

তমলুকবাসী অভিযোগ, শহরের নিমতলা এলাকায় কৃষি বিপনণ দফতর রেগুলেটেড মার্কেট এবং কিসান মান্ডি বাজার তৈরি করলেও সেখানে আনাজ ও মাছ বাজার চালু না হওয়ায় সমস্যা বেড়েই চলেছে। এ বিষয়ে পুরসভার অবহেলাও রয়েছে বলে অভিযোগ। অন্যদিকে শহরের জেলখানা মোড়ের কাছে মহাপ্রভু বাজারেও আনাজ-মাছ-ফল ব্যবসায়ীর সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু ওই বাজারে স্থান সংকুলান না হওয়ায় দোকানদারদের একাংশ বাজারের উল্টোদিক জেলা আদালত এবং জেলখানা ভবনের দেওয়ালের গাঁ ঘেঁষে তমলুক-পাঁশকুড়া রাজ্য সড়কের ফুটপাথ দখল করে বসছে।

জেলা আদালত ছাড়াও মহাপ্রভু বাজারের অদূরেই রয়েছে তমলুক পুরসভার অফিস, তমলুক-পাঁশকুড়া বাসস্ট্যান্ড, তমলুক-ঘাটাল কেদ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক ও জেলা মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিকের কার্যালয় সহ ব্যস্ত বাজার এলাকা। ফলে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ওই সড়কে বাস, ট্যাক্সি, টোটো, রিকশা সহ বিভিন্ন যানবাহনের ভিড় লেগেই থাকে। ফুটপাত দখল করে দোকান বসায় যানজট হয়। আনাজ ব্যবসায়ী রঞ্জন পাত্র বলেন, ‘‘গাড়ি যাতায়াতে অসুবিধা হয় জানি। কয়েকমাস আগে পুরসভা আমাদের সরিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু বিকল্প কোন ব্যবস্থা করেনি। বাধ্য হয়ে ফের এখানে বসেছি।’’

এ বিষয়ে তমলুকের পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ সেন বলেন, ‘‘বড়বাজার সংস্কার করেই বহুতল ভবন গড়ে ব্যবসায়ীদের স্থায়ী ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তাতে ব্যবসায়ীদের একাংশ বাধা দিয়েছেন। আর রেগুলেটেড মার্কেট বা কিসান মান্ডির দোকানঘর বণ্টন করার ক্ষেত্রে আমাদের ভূমিকা নেই।’’

কাঁথির দেশপ্রাণ ব্লকের অযোধ্যাপুরে কিসান মান্ডির দু’কিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে মুকুন্দপুর বাজার। আর তিন কিলোমিটারে মধ্যে হাতিশাল বাজার। ওই দু’টি বাজারে অবশ্য পরিকাঠামো পর্যাপ্ত বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আর পরিষেবা ভাল থাকার জন্য কেউ মান্ডিতে যাচ্ছেন না বলে দাবি।

পাঁশকুড়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় ফলের পাইকারি আড়ত রয়েছে। প্রতিদিন ফল ভর্তি লরি আসে এখানে। রাস্তা দখল করেই তার ওপর নামানো হয় ফল। রাত ৯টা থেকে আনাজ বোঝাই লরি রাস্তা দখল করে দাঁড়িয়ে থাকে। সল্প পরিসরের জন্য আনাজ নামাতে ও বোঝাই করতে লেগে যায় বিস্তর সময়। ফলে রাত ৯ টা থেকে সকাল ১০ টা পর্যন্ত পাঁশকুড়া স্টেশন লাগোয়া রাজ্য সড়ক দিয়ে চলাচল করতে পারে না কোনও গাড়িই। ঘোর পথে প্রায় ৩ কিলোমিটার বেশি পথ অতিক্রম করে চলে বাস।

পাঁশকুড়া কৃষক বাজার চালু না হওয়ায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তির পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের ভোগান্তিও উঠেছে চরমে। পাঁশকুড়ার ফল ব্যবসায়ী নমিতা গিরি বলেন, ‘‘প্রায় তিন বছর হতে চলল আগাম টাকা দিয়েছি। কিন্তু আজও চালু হল না কৃষক বাজার। রাস্তায় ব্যবসা করা কঠিন। আমরা চাই দ্রুত কৃষক বাজার চালু করে ব্যবসায়ীদের হাতে স্টল তুলে দিক প্রশাসন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement