গণধর্ষণে ধৃত মূল অভিযুক্ত

কোলাঘাটের ঘটনাতেও ভিতরে ভিতরে ফুঁসছে পুলশিটা এলাকার বাসিন্দারা। স্কুল ছাত্রীর গণধর্ষণের ঘটনার মূল নাবালক অভিযুক্তকে গ্রেফতার এবং এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোলাঘাট শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:৩৬
Share:

মৃত ছাত্রীর বাড়িতে কোলাঘাটের বিডিও ও পঞ্চায়েত সমিতির আধিকারিকেরা। নিজস্ব চিত্র

ছ’দিনে থেমে গিয়েছে কোলাঘাটের নির্যাতিতা স্কুল ছাত্রীর লড়াই। যা মনে করে দিয়েছে ছ’বছর আগের কামদুনিতে কলেজ ছাত্রীকে গণধর্ষণ এবং খুনের ঘটনা। ২০১৩ সালের ওই ঘটনায় গর্জে উঠেছিল কামদুনি।

Advertisement

কোলাঘাটের ঘটনাতেও ভিতরে ভিতরে ফুঁসছে পুলশিটা এলাকার বাসিন্দারা। স্কুল ছাত্রীর গণধর্ষণের ঘটনার মূল নাবালক অভিযুক্তকে গ্রেফতার এবং এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা। গণধর্ষণ-কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত তথা ওই ছাত্রীর নাবালক প্রেমিককে কেন গ্রেফতার না করে শুধুমাত্র আটক করা হল, এ নিয়ে শুক্রবার দেউলিয়ায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বাম এবং বিজেপি।

এর পরেই পুলিশ শনিবার জানিয়েছে, মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তমলুকের এসডিপিও অতীশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘ওই ছাত্রীর প্রেমিককে আমরা এ দিন জুভেনাইল কোর্টে পাঠিয়েছি। আর এক পলাতক অভিযুক্ত আকাশ মণ্ডলের খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’

Advertisement

গত ২৪ অগস্ট প্রেমিকের সঙ্গে বেরিয়ে কোলাঘাটের দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। তার পরিবারের দাবি, অপমানে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে নির্যাতিতা। এ দিন মৃত ছাত্রীর বাড়ি যান কোলাঘাটের বিডিও মদন মণ্ডল। যে জায়গায় ঘটনাটি ঘটেছিল, সেখানেও ঘুরে দেখেন বিডিও-সহ কোলাঘাট পঞ্চায়েত সমিতির প্রতিনিধিরা।

প্রত্যন্ত গ্রামের মধ্যে কী করে গণধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটল, তা এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না স্থানীয়েরা। স্থানীয় সূত্রের খবর, যে জায়গায় মৃত ছাত্রীকে তার প্রেমিক প্রথমে নিয়ে যায়, সেটি আসলে পুলশিটা এবং কোলা-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের সীমানা লাগোয়া। শুক্রবার যাওয়া হয়েছিল ঘটনাস্থলে। ঘুরে দেখা হয়েছিল তার আশেপাশের এলাকা। সেখানে দু’টি গ্রামের সংযোগ স্থলে রয়েছে একটি কালভার্ট। সেখান থেকে এক দিকের একটি গ্রামে ঢোকার রাস্তা প্রায় এক কিলোমিটার অংশ এখনও মোরাম। বর্ষাকালে ওই বেহাল রাস্তা দিয়ে কেউ যাতায়াত করে না বললেই চলে। রাস্তার পাশে নেই বিশেষ কোনও ঘরবাড়ি। বর্ষার জলে গাছপালা ও আগাছা বেড়ে গিয়ে কার্যত অবরুদ্ধ রাস্তাটির একটা বড় অংশ।

ওই নির্জন রাস্তায় মৃত স্কুল ছাত্রীকে নিয়ে প্রায়ই গণধর্ষণ কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত তথা তার প্রেমিক যাতায়াত করত বলে দাবি স্থানীয়দের। তাঁদের অভিযোগ, গাছগাছালি, আগাছা ঘেরে ওই রাস্তায় সূর্য ডোবার অনেক আগেই নেমে আসে অন্ধকার। সাধারণ মানুষজন রাস্তাটি এড়িয়ে চললেও সমাজ বিরোধীরা সেখানে আড্ডা জমায় বলে দাবি। অভিযোগ, সন্ধ্যা নামলেই রাস্তাটির ওপর চলে নানা ধরনের অসামাজিক কাজকর্মও। গত মাসের গণধর্ষণই শুধু নয়, এর আগে ওই রাস্তার ওপর অনেক কুকর্ম হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের।

এই পরিস্থিতিতে রাস্তাটি ঢালাই করে পথবাতি লাগানোর দাবি তুলেছেন এলাকার মানুষজন। স্থানীয় বাসিন্দা শিবরাম গুছাইত বলেন, ‘‘রাস্তাটির ওপর প্রতি রাতেই দুষ্কৃতীরা আড্ডা জমায়। ওদের দৌরাত্ম্যে সন্ধ্যার পর কেউ ওই রাস্তায় যাতায়াত করে না। এই নির্জনতার সুযোগ নিয়ে এত বড় ঘটনা ঘটে গেল। আমরা চাই রাস্তাটি ঢালাই করে পথবাতি লাগানোর ব্যবস্থা করুক প্রশাসন।’’ স্থানীয় এক মহিলা বলেন, ‘‘ঘটনার পর এলাকার মহিলারা আতঙ্কে রয়েছি। প্রশাসনের উচিত উপযুক্ত পদক্ষেপ করা।’’

এ ব্যাপারে বিডিও মদন মণ্ডল বলেন, ‘‘রাস্তাটি ঢালাই করার ব্যাপারে আমরা অবশ্যই উদ্যোগী হব। পথবাতি লাগানো বিষয়টিও বিবেচনার মধ্যে রয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement