পর্যটকের জন্য সেজে ওঠার অপেক্ষায়। —নিজস্ব চিত্র।
পর্যটন টানতে ‘সিংহদুয়ার’ খুললেন মহিষাদলের রাজবাড়ির কর্তৃপক্ষ। ঐতিহাসিক ওই রাজবাড়িতে এবার থেকে রাত্রিবাস করতে পারবেন পর্যটকেরা।
মহিষাদল রাজবাড়ি সূত্রের খবর, পর্যটকদের থাকার জন্য ফুলবাগ প্যালেসে দু’টি রুম তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি ঘরের ভাড়া ৫০০০ হাজার টাকা থেকে ৬০০০ টাকা। রাত্রিবাসের পোশাকি নাম ‘স্টে উইথ রয়্যালস’। রাজ পরিবারের কনিষ্ঠতম সদস্য শৌর্যপ্রসাদ গর্গ বলেন, ‘‘লন্ডন রয়্যাল প্যালেসের রাজকীয় সৌন্দর্যের কথা মাথায় রেখেই ওই ঘর দু’টি সাজানো হয়েছে। একটি ঘরে ছ’জন এবং আর একটি ঘরে দু’জন থাকতে পারবেন।’’ পাশাপাশি, লালকুঠি ওরফে ‘সামার প্যালেসে’র সংস্কারেও হাত দেওয়া হয়েছে।
প্রায় ২০০ বছরের পুরনো লালকুঠি সংস্কারের অভাবে জীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। ব্রিটিশ স্থাপত্যে হাত ধরে তৈরি ওই প্যালেসে মোট ১১টি ঘর রয়েছে। আপাতত সেগুলিরই সংস্কার করা হবে। লালকুঠির পাশে থাকা দধি বামুনচির মন্দিরেরও সংস্কার হবে বলে জানিয়েছেন রাজ পরিবারের আ এক সদস্য শঙ্করপ্রসাদ গর্গ। পরিবারের দাবি, ওই ‘সামার প্যালেস’ সংস্কারের জন্য আনুমানিক চার কোটি টাকা খরচ হবে। সংস্কার করে সেটি হেরিটেজ টুরিজমের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ ব্যাপারে শৌর্যপ্রসাদ বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের কাছেও ওই প্যালেসটি সংস্কার করার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। এর সঙ্গে মহিষাদল রাজবাড়ির দূর্গাপুজোর আটচালাটিও জীর্ণ হয়েছে। সেটিও সংস্কার করা হবে।’’
উল্লেখ্য, রাজ্যের প্রাচীন রাজবাড়িগুলির মধ্যে অন্যতম মহিষাদল রাজবাড়ি ৯০ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত। রাজ পরিবার সূত্রের খবর, ওই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা জনার্দন উপাধ্যায় মোগল সম্রাট আকবরের সেনাবাহিনীতে উচ্চপদে কর্মরত ছিলেন। ষষ্ঠ শতকে জনার্দন নদীপথে গেঁওখালি দিয়ে মহিষাদলে পৌঁছন। সেই সময় মহিষাদলের রাজা ছিলেন কল্যাণ রায়চৌধুরী। তাঁর কাছ থেকে স্বত্ব কিনে জনার্দন নতুন রাজা হন।
শিক্ষা ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক এই রাজাদের আমন্ত্রণে নানা সময়ে বহু বিখ্যাত মানুষ এসেছেন। তিনশো বছরের পুরনো ওই রাজবাড়িতে এক সময় এসেছেন ফৈয়াজ খাঁ, বড়ে গুলাম আলির মতো বহু বিখ্যাত শিল্পী। তাঁদের ব্যবহার করা বাদ্যযন্ত্র যত্নের সঙ্গে রাজবাড়িতে সংরক্ষিত রয়েছে। রাজবাড়ির সংগ্রহশালায় রয়েছে, ১৩ চূড়োর রথ, কামান-সহ বহু জিনিস।
বর্তমানে শৌর্যপ্রসাদের হাত ধরেই নতুন করে প্রাণ সঞ্চার হয়েছে ওই রাজবাড়ির। ইতিমধ্যেই শ্যুটিং স্পট হিসাবেও জনপ্রিয় হয়েছে রাজবাড়ি। পরিবারের আশা, পর্যটনের হাত ধরে রাজবাড়ির যেমন শ্রী ফিরবে, তেমনই মহিষাদলেরও শ্রীবৃদ্ধি হবে। মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তিলক চক্রবর্তী বলেন, রাজবাড়িকে ঘিরে পর্যটনের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তা মাথায় রেখেই পঞ্চায়েত সমিতি এবং হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ নানা উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা ভাবছে।