প্রতীকী ছবি।
পরিযায়ীদের হাত ধরে হু হু করে বাড়ছে আক্রান্ত। পশ্চিম মেদিনীপুরের যে এলাকায় বহু সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিক ফিরেছেন, সেই ঘাটাল দাসপুরেই সংক্রমিতের সংখ্যা সর্বোচ্চ। অথচ সেই সব করোনা আক্রান্তদের হাসপাতালে বা নিভৃতবাস কেন্দ্রে পৌঁছে দিতেই সমস্যা তৈরি হচ্ছে। পর্যপ্ত অ্যাম্বুল্যান্স নেই, কোথাও আবার প্রয়োজনের সময় মিলছে না চালক।
এই পরিস্থিতিতে কী করণীয় তা ভাবাচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর থেকে পুলিশ-প্রশাসনকে। শুরু হয়েছে বিকল্প গাড়ির খোঁজ। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিমাইচন্দ্র মণ্ডল মানছেন, “একসঙ্গে অনেকে আক্রান্ত হওয়ায় বিক্ষিপ্ত ভাবে কোথাও সমস্যা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, কোন ব্লকে কতজন করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের যাবতীয় তথ্য জেলা স্বাস্থ্য ভবন থেকে জানানো হয়। প্রতিদিনই নিয়ম করেই এই তথ্য পুলিশ ও ব্লক প্রশাসনের কাছে পৌঁছয়। নতুন আক্রান্তের কথা জানা গেলেই অ্যাম্বুল্যান্সের খোঁজ পড়ে। পুলিশ, প্রশাসন, স্বাস্থ্য দফতরের উদ্যোগেই আক্রান্তদের বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে পৌঁছনো হয়। এই মুহূর্তে করোনা পজ়িটিভ কিন্তু উপসর্গ নেই, এমন ব্যক্তিদের নিভৃতবাসে রেখেই চিকিৎসা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে করোনা রোগীকে নিভৃতবাস কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ছে। কিন্তু তখনও মিলছে না অ্যাম্বুল্যান্স।
করোনা আক্রান্তদের পরিবহণে বিশেষ পরিকাঠামো যুক্ত অ্যাম্বুল্যান্স দরকার। ঘাটাল ব্লকে এমন চারটি পৃথক অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে। দাসপুর ১ ব্লকে দু’টি, দাসপুর ২ ব্লকে দুটি আর চন্দ্রকোনা ১ ও ২ ব্লকের জন্য পৃথক ভাবে চারটি এমন অ্যাম্বুল্যান্স নির্দিষ্ট রয়েছে। নিয়মমতো, উপসর্গ থাকলে একটি গাড়িতে একজন রোগীকে যাবে। উপসর্গ না থাকলে তিন থেকে চারজন। চালক ও সহকারীকে পিপিই পরতে হবে। অ্যাম্বুল্যান্সে জীবাণুনাশক স্প্রে করা বাধ্যতামূলক।
নিয়মমাফিক অ্যাম্বুল্যান্সের আয়োজনেই হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। প্রশাসনের এক সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন ঘাটালে দিনে গড়ে পাঁচ-সাত জন করে আক্রান্ত হচ্ছেন। গত রবিবার শুধু ঘাটালেই ১৬ জন এবং দাসপুর-১ ব্লকে ২৭ জন এক সঙ্গে আক্রান্ত হন। সে দিন প্রকট হয় অ্যাম্বুল্যান্স সঙ্কট। প্রশাসনের একটি সূত্র মনে করিয়ে দিচ্ছে, ওই দিন কোনও আক্রান্তকে করোনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়নি। শুধু বাড়ি থেকে তুলে আনতেই চার-পাঁচ ঘণ্টা লেগেছে। হাসপাতালে লালারস সংগ্রহের পরে নিভৃতবাসে পৌঁছতেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে আক্রান্তদের।
স্বাস্থ্য দফতরের ব্যাখ্যা, যে হারে রোগী বাড়ছে, তার তুলনায় অ্যাম্বুল্যান্স পর্যাপ্ত নয়। অনেক সময়কে চালককে রাজি করানো যাচ্ছে না। চালক বা সহযোগী ভয় পাচ্ছেন, অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের পরিবার-পরিজন বা এলাকাবাসীর দিক থেকেও আপত্তি আসছে। ঘাটালের এক অ্যাম্বুল্যান্স চালক বলছিলেন, “নির্দিষ্ট পোশাক দেওয়া হচ্ছে না। ডিউটির পরে ঘরে ফেরার পথও বন্ধ।”
বিকল্প গাড়ির খোঁজে সোমবার ঘাটালের মহকুমাশাসকের দফতরে এক জরুরি বৈঠক হয়। সেখানে অ্যাম্বুল্যান্স জট কাটাতে মাঝারি মাপের কোনও গাড়ি ভাড়া করা যায় কিনা, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ঘাটালের মহকুমাশাসক অসীম পাল বলেন, ‘‘রোজই অনেকে করোনা পজ়িটিভ হচ্ছেন। তাঁদের যাতায়াতে বিকল্প গাড়ি যাতে ব্যবহার করা যায়, সেই প্রস্তাব জেলায় পাঠানো হয়েছে।’’