ঝাড়গ্রামে মেডিক্যাল বোর্ড। নিজস্ব চিত্র
গোলটেবিলে বসে পাঁচ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তাঁদের সামনে বিষণ্ণ মুখে এক শিক্ষক। চিকিৎসার নথিপত্র দেখিয়ে ওই শিক্ষক অনুনয়ের সুরে বললেন, ‘‘অস্টিও আর্থারাইটিসের চিকিৎসা করাচ্ছি। হাঁটু ভাঁজ করতে পারি না। ভোটের কাজে গেলে ওখানে তো কমোড পাব না!’’
শিক্ষকের আবেদন ছিল— তিনি যে ভোটের কাজে যেতে সক্ষম নন তা যেন লিখে দেন চিকিৎসকেরা। আর্জি শুনে মেজাজ রাখালেন ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের শল্যচিকিৎসক গৈরিক মাজি। বললেন, ‘‘আপনি কমোড ছাড়া শৌচকর্ম করতে পারেন না বলে আপনাকে ভোটের কাজে ‘আনফিট’ লিখতে হবে, এ রকম নির্দেশিকা আমাদের কাছে নেই। এটা করা সম্ভব নয়।’’ বৃহস্পতিবার ভোটকর্মীদের এমনই হাজার বায়ানাক্কা শুনতে হল মেডিক্যাল বোর্ডকে।
ঝাড়গ্রামের ১০৮৫টি বুথে জন ৫২০৮ জন ভোটকর্মী প্রয়োজন। সকলের কাছে চিঠি গিয়েছে। ৬ এপ্রিল থেকে প্রশিক্ষণ শুরু হচ্ছে। তার আগেই ভোটের কাজ থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদনপত্র জমা পড়তে শুরু করেছে। আবেদনকারী সত্যিই ভোটের কাজের জন্য ‘আনফিট’ কি-না সেটা মেডিক্যাল বোর্ড পরীক্ষা করে দেখবে। এ জন্য ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটির চিকিৎসকদের নিয়ে মেডিক্যাল বোর্ড গড়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বোর্ডের সামনে প্রথম দফায় হাজির হয়েছিলেন ৩২ জন। বোর্ডে ছিলেন ইনটি বিশেষজ্ঞ তপনকুমার ভৌমিক, চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ অনিন্দ্যসুন্দর পাত্র, শল্যচিকিৎসক গৈরিক মাজি, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ শুভেন্দু মুখোপাধ্যায় ও অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ মৃণালকান্তি সাহা। এ ছাড়া ছিলেন হাসপাতালের সুপার মলয় আদক। তবে এ বার প্রশাসন বেশ পদক্ষেপ করেছে। আবেদনকারী সত্যিই ভোটের কাজের জন্য শারীরিক ভাবে সক্ষম কি না, সেটা মেডিক্যাল বোর্ড পরীক্ষা করে দেখবে। ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন হয়েছে ইএনটি বিশেষজ্ঞ তপনকুমার ভৌমিক, চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ অনিন্দ্যসুন্দর পাত্র, শল্যচিকিৎসক গৈরিক মাজি, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ শুভেন্দু মুখোপাধ্যায় ও অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ মৃণালকান্তি সাহাকে নিয়ে। এ ছাড়াও রয়েছেন হাসপাতালের সুপার মলয় আদক। এ দিন ওই বোর্ডের সামনে প্রথম দফায় হাজির হয়েছিলেন ৩২ জন। তাঁদের নানা ধরনের দাবি শুনে কখনও চিকিৎসকেরা বিরক্ত হয়েছেন, কখনও আবার মুচকি হেসেছেন তাঁরা।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বিনপুরের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষককে ফাস্ট পোলিং অফিসারের দায়িত্ব এসেছে। গত বছর সেপ্টেম্বরে পায়ের পাতার হাড় ভেঙেছিল ওই শিক্ষকের। দীর্ঘ চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে এখন স্কুলে যোগ দিয়েছেন। ব্যথা এখনও আছে বলে দাবি ওই শিক্ষকের। পায়ে ক্রেপ ব্যান্ডেজ বেঁধে এসেছিলেন। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি। বিনপুরের আর একটি প্রাথমিক স্কুলের ৫১ বছর বয়সী প্রধান শিক্ষকের ফার্স্ট পোলিং অফিসারের ডিউটি এসেছে। মোডিক্যাল বোর্ডর কাছে তিনি জানালেন, তাঁর কিডনিতে পাথর হয়েছে। ওষুধ খাচ্ছেন। চিকিৎসকরা রিপোর্ট দেখে জানালেন, ভোটের কাজ না করার মত অসুস্থ তিনি নন। এবার শিক্ষকের প্রশ্ন, অস্ত্রোপচার করালে কি চলবে? বিস্মিত চিকিৎসক বলেন, ‘‘অস্ত্রোপচার করানোর মতো পরিস্থিতি হলে তো করাবেন!’’ বিমর্ষ ওই শিক্ষকও।
জেলাশাসক আয়েষা রানি বলেন, ‘‘ভোটের দায়িত্ব থেকে শারীরিক কারণে এখনও পর্যন্ত ৪৫ জন অব্যাহতি চেয়েছেন। তাঁরা অনুপযুক্ত কি-না সেটা মেডিক্যাল বোর্ড খতিয়ে দেখছে।’’ ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সুপার বলেন, ‘‘জেলা নির্বাচনী দফতরের নির্দেশে এই প্রথমবার মেডিক্যাল বোর্ড গড়ে আবেদনকারী ভোটকর্মীদের শারীরিক পরীক্ষা করে তিনি ভোটের কাছে ফিট না আনফিট সেটা দেখা হচ্ছে। এই সংক্রান্ত রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট মহলে পাঠানো হচ্ছে।’’
ফাঁকি মারলে ফেল করবি—ক্লাসে যাঁরা এ কথা বলেন, তাঁরাই এ দিন হাসপাতালে গিয়ে বুঝেছেন পাশ করার বিপদ।