খড়্গপুরের ধ্যানসিংহ ময়দানে প্রতিরক্ষামন্ত্রী তথা বিজেপি নেত্রী নির্মলা সীতারমন। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
জঙ্গলমহলে গিয়ে শাসক দলের ‘আদিবাসী’ ক্ষত উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী তথা বিজেপি নেত্রী নির্মলা সীতারমন। রেলশহরে গিয়ে আবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সুরেই সিন্ডিকেট নিয়ে খোঁচা দিলেন তৃণমূলকে।
বুধবার পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর এবং ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরে দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে সভা করেন নির্মলা। আগামী ৫ মে ঝাড়গ্রামের বিজেপি প্রার্থী কুনার হেমব্রমের সমর্থনে সভা করতে আসতে পারেন মোদী। তার আগে জঙ্গলমহলে পৌঁছে উন্নয়ন নিয়ে কটাক্ষ করলেন নির্মলা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, তাঁর আমলে জঙ্গলমহলের প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে। যাঁরা যে উন্নয়ন দেখতে পান না তাঁদের দৃষ্টিশক্তি নিয়েও মাঝেমাঝে ব্যঙ্গ করতে শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। এ দিন যাত্রা ময়দানের সভায় নির্মলা বললেন, ‘‘দিদি ঝাড়গ্রামের এসে বলুন আট বছরে কী কাজ করেছেন। উন্নয়নের তালিকা দিন।’’ আদিবাসীরা এ রাজ্যে কী অবস্থায় রয়েছেন তারও বর্ণনা দিয়েছেন মন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘‘এ রাজ্যে গরিব মানুষের অবস্থা খুব খারাপ। আদিবাসীরাও খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছেন। তাঁদের থাকার বাড়ি নেই। বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। কাঠের জ্বালানিতে তাঁদের রান্না করতে হয়।’’
মোদীর সুরে আয়ুষ্মান ভারতের প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রীকে ‘উন্নয়ন বিরোধী’ বলে কটাক্ষ করেছেন নির্মলা। কুনারের সমর্থনে বলতে গিয়ে নির্মলা যেমন রেলপথের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তেমনি আদিবাসীদের মর্যাদা দেওয়ার কথাও বলেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘স্বাধীনতা আন্দোলনে আদিবাসীদের বিশেষ যোগদান রয়েছে যাদের অনেকের কথাই অজানা থেকে গিয়েছে। সেইসব আদিবাসী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মারক নেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই সমস্ত আদিবাসী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কথা মানুষকে জানাতে চান। তাঁদের পাদ প্রদীপের আলো নিয়ে আসতে চান। তাঁদের শ্রদ্ধা জানাতে চাই আমরা। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে আদিবাসীদের একাংশের মধ্যে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফলেই তার প্রমাণ মিলেছে। নির্মলা সে ক্ষোভকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন।
যদিও কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল। নেত্রীর সুরেই ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান সুকুমার হাঁসদা বলেন, ‘‘নির্মলা সীতারামন চোখে ঠুলি পরে আছেন, তাই জঙ্গলমহলে উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছেন না। মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন।’’
গোপীবল্লভপুরে আগে নির্মলার সভা ছিল খড়্গপুরের ধানসিংহ ময়দানে। মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষের সমর্থনে আয়োজিত সভায় নির্মলা বলেন, ‘‘প্রতিটি দলের মধ্যে মহিলা, ছাত্র, যুব সংগঠন থাকে। আমাদের দলে সেগুলি মহিলা মোর্চা, যুব মোর্চা বলে পরিচিত। তৃণমূলে শুধু সিন্ডিকেট মোর্চা রয়েছে।’’ মোদীর কায়দায় কখনও সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে, আবার কখনও নারদ-সারদার প্রসঙ্গ তুলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেছেন নির্মলা।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘সিন্ডিকেট মোর্চা বলে কিছু নেই। যাঁরা রাফেল কেলেঙ্কারিতে যুক্ত, নোটবন্দি করে কোটি-কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে তাঁদের মুখে দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন শোভা পায় না।’’