গড়বেতায় আদিবাসী প্রথা পা ধুইয়ে দেওয়া হচ্ছে তৃণমূল প্রার্থী বিরবাহার (বাঁ দিকে), চন্দ্রকোনা রোডে প্রচারে বিজেপি প্রার্থী কুনার হেমব্রম। নিজস্ব চিত্র
ভৌগোলিক ভাবে গড়বেতা ও চন্দ্রকোনা রোড ঝাড়গ্রাম জেলার অন্তর্গত নয়। তবে দু’টি এলাকাই ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। প্রচারের শুরুতে জেলার বাইরের সেই এলাকাগুলিকেই বেছে নিলেন ঝাড়গ্রামের তৃণমূল ও বিজেপি প্রার্থীরা।
রবিবার গড়বেতায় ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রের প্রার্থী বিরবাহা সরেনের সমর্থনে কর্মিসভা করল তৃণমূল। সেখানে দলীয় প্রার্থীকে পাশে বসিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘বিরবাহা একটি স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা। ওঁর স্বামী রবিন টুডু মাঝি পারগানা মহলের প্রধান। তাঁকে নিয়ে অনেককে নিয়ে নবান্ন ও বিধানসভায় গিয়েছি। ওঁরা আদিবাসীদের দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করছেন। আমাদের স্বপ্ন ছিল তাঁদের মদত দেওয়া। মুখ্যমন্ত্রীকে সেটা বোঝানো মাত্র তিনি রাজি হয়ে যান।’’ জেলার রাজনৈতিক মহলের ব্যাখা, আদিবাসী সংগঠনের নেতা রবিন টুডুর স্ত্রী বিরবাহা সরেন তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ার বিষয়কে আদিবাসী সমাজের একাংশ ভালো ভাবে মেনে নেয়নি। তাঁর প্রার্থিপদ প্রত্যাহারের দাবিও তুলেছে আদিবাসীদের একাংশ। এই নিয়ে তৃণমূলের অস্বস্তিও বাড়ছিল। রবিবার গড়বেতায় সেই ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা করলেন অজিত।
এ দিনের কর্মিসভায় ভিড় ছিল ভালই। সেখানে বিরবাহা অবশ্য আদিবাসী সমাজ নিয়ে কোনও কথা বলেননি। এ দিন সভা শুরুর আগে গড়বেতার সর্বমঙ্গলা মন্দিরে পুজো দেন বিরবাহা সরেন। তারপর ধামসা মাদল বাজিয়ে, মহিলাদের নাচের তালে আদিবাসী প্রথায় বরণ করে নেওয়া হয় ঝাড়গ্রামের তৃণমূল প্রার্থীকে। আদিবাসী মহিলারা কাঠের পিঁড়ির উপরে বিরবাহার পা রেখে তাতে তেল মাখিয়ে ও জল দিয়ে ধুয়ে দেন। তারপর গামছা দিয়ে পা মুছিয়ে বরণ করে নেওয়া হয় তাঁকে। এ দিনের কর্মিসভায় দলীয় কর্মীদের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার উপরে জোর দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
শনিবার চন্দ্রকোনা রোডে প্রচারে এসেছিলেন ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী কুনার হেমব্রম। শনিবার সন্ধ্যায় ঝটিকা প্রচারে চন্দ্রকোনা রোডে আসেন তিনি। দলীয় কার্যালয়ে ব্লকের নেতাদের সঙ্গে কিছুক্ষণ বৈঠক করার পরে তিনি ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কথা বলেন। সাতবাঁকুড়ায় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলার পর বিজেপি প্রার্থী তৃণমূলের নাম না করে বলেন, ‘‘আদিবাসীদের ভুল বুঝিয়ে আদিবাসী সমাজকে বিক্রি করে দিচ্ছেন ওরা।’’ তারপর রসকুণ্ডু এলাকায় গিয়েও দলের কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেন। তারপর বাড়ি বাড়ি যান। রাস্তার ধারে চা দোকানে বসে স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে আড্ডা দেন। সেখানে কয়েকজন ভোটে সন্ত্রাসের কথা বললে বিজেপি প্রার্থী তাঁদের বলেন, ‘‘ভয় পাবেন না, কেন্দ্রীয় বাহিনী আছে, নির্ভয়ে ভোট দেবেন।’’ পরে কুনার অভিযোগ করেন, ‘‘রাজ্য পুলিশ তৃণমূল সরকারের সব কাজই করে দিত। শুধু ভোটটাই দিত না। তাই কেন্দ্রীয় বাহিনী আসছে ভোটের সময় সহযোগিতা করতে।’’ যদিও কুনারের এই প্রচারকে গুরুত্ব দিচ্ছে না তৃণমূল। দলের এক জেলা নেতার দাবি, ‘‘আদিবাসীদের নিয়ে বিজেপি কিছুই করেনি। কেন্দ্রীয় বাহিনী এলেও এই রাজ্যে বিজেপির লাভ হবে না।’’
এ দিন কেশিয়াড়ি ব্লকের খাজরা, লেঙ্গামারা, হাতিগেড়িয়া, দুধেবুধে, কামারচৌকি, কেশিয়াড়ি বাজার-সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রচার করেন মেদিনীপুরের বাম প্রার্থী বিপ্লব ভট্ট।