মঙ্গলবারের সভায় জগন্নাথ গোস্বামীর সঙ্গে ভারতী। নিজস্ব চিত্র
প্রার্থী জেলার প্রাক্তন পুলিশ সুপার। তারকা প্রার্থীকে নিয়ে কর্মীরাও উজ্জীবিত। কিন্তু ঘরোয়া কোন্দল কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না ঘাটালের বিজেপির। তার ছাপ পড়ছে প্রচারেও।
মঙ্গলবার ঘাটালের বিদ্যাসাগর হাইস্কুলের মাঠে জনসভা করেন ভারতী। প্রায় মাঝমাঠে মঞ্চ করা হলেও মাঠ ভরানো যায়নি। বিজেপির একটি সূত্রে খবর, ওই রাতেই ঘাটাল শহরে মাসকয়েক আগে কংগ্রেস থেকে আসা জগন্নাথ গোস্বামীর অফিসে বৈঠক করেন ভারতী। সেখানে ঘাটাল বিধানসভার নিবার্চনী কমিটি তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেই বৈঠকের কথা জানেন না দলের ঘাটাল সাংগাঠনিক জেলা সভাপতি অন্তরা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘ঘাটাল নিবার্চন কমিটি গঠনের কথা আমার জানা নেই।” এই ঘটনায় কোন্দল প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে। ঘাটালে বিজেপির আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অন্তরার বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর লোক বলে পরিচিত রতন দত্তের প্রতিক্রিয়া, “কারা কাজের লোক সেটা উনি বোঝেন। তাই জিততে হলে কাদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত, তা জেনে বুঝেই চলছেন।” ভারতী বলছেন, “ঘাটাল বিধানসভায় নিবার্চন কমিটি তৈরি হয়েছে। যদি কারোর কোনও অভিযোগ থাকে, তারা আমার কাছে আসতে পারেন। তাঁদের কথা শুনব।”
ঘাটাল লোকসভা আসনে জয়ের আশা দেখছে তারা। কিন্তু দলের মধ্যে আড়াআড়ি বিভাজন সেই আশায় ছাই দিতে পারে বলে মনে করছেন কর্মীদের একাংশ। ঘাটাল বিধানসভা এলাকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিজেপি কর্মীর ক্ষোভ, প্রার্থী কখন কোথায় আসছেন সেই খবর তাঁদের থাকছে না। এরফলে কর্মীরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। ঘাটাল লোকসভার কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কার্যালয় এখনও তৈরি হয়নি। জেলা বিজেপির এক শিবিরের ব্যাখ্যা, প্রার্থী ভারতী ঘোষ পুলিশ সুপার হিসেবে এই এলাকায় বিজেপির কোন্দলের কথা আগে থেকেই জানেন। তিনি চাইছেন, ভোটের সময়ে সব গোষ্ঠী একসঙ্গে কাজ করুক। ঘাটালে বিজেপির পুরনো নেতৃত্বকে ফিরিয়ে আনতেও চাইছেন। তাতেই বিপত্তি বেঁধেছে। কেন? জেলা বিজেপির এক নেতার ব্যাখা, ‘‘দু’পক্ষকে নিয়ে চলতে পারলে তো ভালই। তা কখনই সম্ভব নয়।” পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘বিজেপি আগে নিজেদের ঘর সামলাক। ঘাটালে আমরা গতবারের থেকেও বেশি ব্যবধানে জিতব।’’
এ দিন ডেবরার একটি অতিথি নিবাসে কর্মিসভা করেন ভারতী। সেই বৈঠকে দেখা যায়নি জেলার সভানেত্রী অন্তরাকে। বৈঠক শুরুর পরে তিনি এলেও কর্মিসভা এড়িয়ে অতিথি নিবাসের তিনতলায় গিয়ে দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক মুকুল শর্মার সঙ্গে দেখা করে চলে যান। বিজেপি সূত্রে খবর, সময়সূচি নিয়ে বিবাদের জেরেই এমন ঘটনা। অন্তরা বলেন, ‘‘যা প্রশ্ন ওঁকে(ভারতী) জিজ্ঞাসা করুন।” ভারতীকে বিষয়টি এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “উনি ব্যস্ত রয়েছেন। কোনও গৃহযুদ্ধ নয়। আপনারা গৃহযুদ্ধ তৈরির চেষ্টা করবেন না।”
কর্মিসভার পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ভারতী অভিযোগ করেন, কেশপুরে বিজেপির পতাকা তুলতে দেওয়া হচ্ছে না। ডেবরার বিভিন্ন অঞ্চলে মহিলা সমর্থকদের মারধর করা হচ্ছে। থানা অভিযোগ নিচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনে যাওয়ার কথা বলে ভারতী বলেন, “ আদালতে জানানোর কথাও ভাবছি।”
ভারতী যখন জেলা পুলিশ সুপার ছিলেন তখন তাঁর বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ তুলতেন বিরোধী নেতারা। সেই প্রসঙ্গ তুলে তাঁকে পাল্টা বিঁধতে ছাড়ছে না তৃণমূলও। এ দিন ডেবরাতেই আয়োজিত তৃণমূলের কর্মিসভায় তৃণমূল নেতা মানস ভুঁইয়া বলেন, “এই রূপান্তর, বর্ণময় চেহারার আদিভৌতিক উপস্থাপনা আমার চোদ্দ পুরুষের রাজনীতিতে দেখেনি।” এ দিন সেই প্রসঙ্গে ভারতীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘২০১৭ সালে সবংয়ে বিধানসভা উপ-নির্বাচনে একটাও বন্দুকের গুলি চলেনি, বুথ দখল হয়নি। পুলিশ সুপারকে তাড়িয়ে, অপমানিত করে কী করা হয়েছে সব ইতিহাস তো জানেন।”