বর্তমানে শরৎ সেতুর হাল। নিজস্ব চিত্র।
কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে রূপনারায়ণ নদের ওপর গড়ে উঠেছিল স্বাধীন ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেতু। লেখকের নাম অনুসারে সেতুটির নামকরণ করা হয় শরৎ সেতু। কোলাঘাটে পরিত্যক্ত সেই শরৎ সেতু এখন দুষ্কৃতী আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে দাবি এলাকবাসীর। সেতু সংলগ্ন এলাকায় প্রায়ই ঘটছে অসামাজিক কাজ এবং অপরাধের ঘটনা। তাই সেতুটি সংস্কারের দাবিতে সরব হয়েছেন কোলাঘাটের মানুষজন।
স্বাধীন ভারতে অবিভক্ত মেদিনীপুর এবং হাওড়া জেলার সঙ্গে সড়ক পথে যোগাযোগের প্রধান অন্তরায় ছিল রূপনারায়ণ নদ। ১৯৬২ সালে কোলাঘাটে রূপনারায়ণ নদের ওপর একটি কংক্রিটের সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়। পশ্চিমবঙ্গ পূর্ত দফতরের তদারকিতে সেতু তৈরির কাজ শুরু হয়। সেতুটি ৩৩১৪ ফুট দীর্ঘ এবং ২৪ ফুট চওড়া ছিল। এছাড়া, সেতুর দু'দিকে ৫ ফুট করে ফুটপাত তৈরি হয়। ১৯৬৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর লেখক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ৯৪তম জন্মদিনে লেখকের নামাঙ্কিত শরৎ সেতুর উদ্বোধন করেন ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার। সেতু উদ্বোধনের দিন উপস্থিত ছিলেন কবি কাজি নজরুল ইসলামের দুই ছেলে কাজি সব্যসাচী এবং কাজি অনিরুদ্ধ-সহ বহু গুণীজন। এটি তখন ছিল স্বাধীন ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেতু তথা পশ্চিমবঙ্গের বৃহত্তম সেতু। যা তৈরি করতে ব্যয় হয়েছিল ১৩৬ লক্ষ টাকা।
১৬ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের সময় রূপনারায়ণ নদে দু'টি নতুন সেতু তৈরি হওয়ার পর বছর আটেক আগে শরৎ সেতু পাকাপাকি ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। সেতুটিকে পরিত্যক্ত বলে ঘোষণা করে প্রশাসন। শরৎ সেতু দিয়ে কোনও যানবাহন না চললেও কোলাঘাট এবং হাওড়ার নাউপালার মানুষজন বিভিন্ন প্রয়োজনে সাইকেল, মোটরবাইক এবং পায়ে হেঁটে নিয়মিত সেতু দিয়ে যাতায়াত করেন। নদের দুই পাড়ের ছাত্রছাত্রীরা এই সেতু দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করে থাকে।
এই শরৎ সেতু এখন কার্যত দুষ্কৃতীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ। বিকেল হলেই শরৎ সেতু দুষ্কৃতীদের দখলে চলে যায়। প্রকাশ্যে বসে মাদকের আসর। বিকেল বা সন্ধ্যে বেলায় শরৎ সেতুর দিয়ে কোনও মহিলা গেলে ভেসে আসে কুকথা। শুধু তাই নয়, শরৎ সেতুতে হামেশাই চুরি, ছিনতাই ঘটছে। কয়েকদিন আগে সকাল ৮ টার সময় দেনানের এক বৃদ্ধাকে দুষ্কৃতীরা প্রলোভন দেখিয়ে শরৎ সেতুতে এনে তাঁর টাকা লুট করে নেয়।
এছাড়া, শুরু হয়েছে অন্য রকমের উপদ্রব। সেতুর কংক্রিটের রেলিং ভেঙে তার ভেতরে থাকা লোহার রড কেটে নিয়ে চলে যাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। শরৎ সেতু জুড়ে শতাধিক কংক্রিটের পথবাতি স্তম্ভ রয়েছে। অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা ওই সমস্ত বাতিস্তম্ভ ভেঙে লম্বা লম্বা রড কেটে নিয়ে চলে যাচ্ছে। দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য বন্ধ করে স্থানীয়দের বহু স্মৃতি বিজড়িত শরৎ সেতু সংস্কারের দাবি তুলেছেন এলাকার মানুষজন। কোলাঘাটের বাসিন্দা অসীম দাস বলেন, ‘‘শরৎ সেতু এখন দুষ্কৃতীদের ঠিকানা। দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্যের জেরে স্থানীয় মানুষজন সেটি দিয়ে যাতায়াত করতে ভয় পান। শরৎ সেতুটি নষ্ট না করে সংস্কার করা হলে দুই জেলার বহু মানুষের ফুটপাত হিসেবে কাজ করবে স্বাধীন ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই সেতু। এ বিষয়ে প্রশাসনিক পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছি।’’ এ বিষয়ে কোলাঘাটের বিডিও অর্ঘ্য ঘোষ বলেন, ‘‘সমস্ত দিক খোঁজ নিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।’’