চোর ধরতে গুণিনের ডাক

মঙ্গলবারই গঙ্গার চাঁপাতলার কুমরুলিতে সাপে কাটা এক মহিলাকে হাসপাতালে না-পাঠিয়ে দুই ওঝার ভরসায় রাখা হয়েছিল। তারপর ওই মহিলার মৃত্যু হয়। তারপরেই সামনে এল বেলদা থানার বড়মাতকতপুর গ্রামের এই ঘটনা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বেলদা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৯ ০০:৩৫
Share:

সরানো হচ্ছে পুজোর সরঞ্জাম। নিজস্ব চিত্র

বাড়িতে চুরি হচ্ছিল। তবে চোর ধরা পড়ছিল না। চোর ধরে দিতে ডাক পড়ল গুণিনের। মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়ে বুধবার পর্যন্ত চলল পুজো। জমল ভিড়। বুধবার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে সেই পুজো বন্ধ করল পুলিশ।

Advertisement

মঙ্গলবারই গঙ্গার চাঁপাতলার কুমরুলিতে সাপে কাটা এক মহিলাকে হাসপাতালে না-পাঠিয়ে দুই ওঝার ভরসায় রাখা হয়েছিল। তারপর ওই মহিলার মৃত্যু হয়। তারপরেই সামনে এল বেলদা থানার বড়মাতকতপুর গ্রামের এই ঘটনা। পুলিশ গিয়ে পুজোর উপকরণ সরিয়ে দিয়ে বড়মাতকাতপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জুনিয়র হাইস্কুলের পড়ুয়া ও গ্রামবাসীদের নিয়ে সচেতনতা শিবিরও করে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সপ্তাহ খানেক আগে বড়মাতকতপুরের বাসিন্দা মুকুল মাইতির স্ত্রীর সোনার গয়না খোওয়া যায়। এর আগেও তাঁর কিছু জিনিস চুরি গিয়েছে বলে দাবি। এরপরেই গুণিন ডাকার সিদ্ধান্ত নেন মুকুল। সেই জন্য গ্রামের মোড়লের থেকে অনুমতি নেন তিনি। মঙ্গলবার গুণিন এসে পুজো শুরু করে। পুরো ঘটনা দেখতে ভিড় জমে যায় সেখানে। গুণিন প্রথমে মুকুলের ভাই সৌমেনের অষ্টম শ্রেণিতে পড়া মেয়ের দিকে সন্দেহ করে। সেই নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে তর্ক শুরু হয়ে গেলে পুজো বন্ধ হয়ে যায়। গ্রামবাসীদের মধ্যস্থতায় উত্তেজনা থামে। বুধবার ফের পুজোর তোড়জোড় শুরু হয়। তবে এ দিন শুরুতেই গোলমাল বাধে। মুকুল ও সৌমেনের মধ্যে হাতাহাতিও হয়। সৌমেনের মেয়েকে দোষী করতে চাওয়ায় তিনি পুজোয় বাধা দেন। তার কিছু পরেই বেলদার এসডিপিও সুমনকান্তি ঘোষের নেতৃত্বে পুলিশ চলে আসে। ওই গ্রামের মোড়ল রঞ্জন পাত্রের দাবি, ‘‘আমাদের পুজো করার কথা বলা হয়েছিল। কী পুজো করবে জানা ছিল না।’’ পুলিশ তাঁকে আটক করেছে।

Advertisement

গুণিন ডাকার খবর প্রথমেই পুলিশ পেল না কেন? ভিলেজ পুলিশ কিংবা সিভিক ভলান্টিয়ারের কাছে কী কোনও খবর ছিল না? এসডিপিও বলেন, ‘‘সমাজে এখনও কুসংস্কার রয়ে গিয়েছে। সেই জায়গা থেকেই বুজরুকির ঘটনা ঘটেছে। আমরা খবর পেয়েই আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গুণিনের খোঁজ চলছে। যারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

বিজ্ঞান মঞ্চের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সৌমেন মণ্ডলের আক্ষেপ, ‘‘আমরা খাতায়-কলমে শিক্ষিত হলেও বাস্তবে অশিক্ষিতের মতো আচরণ করি। শুধু বিজ্ঞান সংগঠন নয়, পুলিশ প্রশাসন ও সরকারের আরও বেশি পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’’ নারায়ণগড় বিডিও বিশ্বজিৎ ঘোষের দাবি, ‘‘বিজ্ঞান সংগঠনের সাহায্য নিয়ে এলাকায় সচেতনতা শিবির করা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement