জীর্ণ দশা রামন্দিরের। —নিজস্ব চিত্র।
অযোধ্যায় রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা ঘিরে দেশজুড়ে উন্মাদনা তুঙ্গে। অথচ, জেলায় জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে রাম জিউর মন্দির। অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধনের আবহে মহিষাদলের তিন শতাব্দী প্রাচীন ওই মন্দির সংস্কারের দাবি তুলেছেন স্থানীয়েরা। তা নিয়ে আবার শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ১৭২৪ সালে মহিষাদলের রাজ পরিবারের তরফে রানি জানকীদেবী এলাকায় রাম জিউ মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মহিষাদল থেকে সামান্য দূরে রামবাগ গ্রামে গড়ে উঠেছিল মন্দিরটি। সেখানে রামচন্দ্র ও সীতার বিগ্রহ রয়েছে। রয়েছে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার বিগ্রহও। লক্ষ্মণ এবং হনুমানের পূজো হয় সেখানে। এ দিকে, দীর্ঘদিন ধরে মন্দিরটি সংস্কার করা হয়নি। মন্দিরের গা থেকে পলেস্তারা অনেক আগেই সরে গিয়েছে। বেরিয়ে এসেছে ইট। আবার কোথাও ছাদ বা মন্দিরের দেওয়াল বেয়ে গজিয়েছে আগাছা। দীর্ঘ ৩০০ বছর ধরে সংস্কার না হওয়ায় একপ্রকার ধুঁকছে মন্দিরটি।
আগামী ২২ জানুয়ারী অযোধ্যায় রাম মন্দির প্রতিষ্ঠিত হবে। প্রাণ প্রতিষ্ঠা পাবে রামলালা মূর্তি। তার প্রস্তুতি ঘিরে এখন দেশজুড়ে তৎপরতা তুঙ্গে। তখন মহিষাদলের রামজিউ মন্দির সংস্কারের দাবি উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা চাইছেন, অবিলম্বে ঐতিহ্যবাহী এই মন্দিরটিকে সংস্কার করা হোক। স্থানীয় রামবাগ গ্রামের বাসিন্দা দিব্যেন্দু অধিকারী বলছেন, ‘‘এখানকার রামজিউ মন্দির সনাতন ধর্মের প্রতীক। শুধু মহিষাদল নয়, গোটা পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ঐতিহ্য। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় মন্দিরটা যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, আগামী দু-তিন বছরের মধ্যে ভেঙে পড়তে পারে। আমরা চাই মন্দিরটা রক্ষা হোক।’’ স্থানীয় আরেক বাসিন্দা সীতারাম অধিকারী বলছেন, ‘‘রামচন্দ্রের নামানুসারে গ্রামের নাম রামবাগ হয়েছিল। আমরা চাই রাম জিউর মন্দিরটা সংস্কার হোক। রাজ্য থেকে কেন্দ্র সরকার সকলের কাছে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’’
এই নিয়ে শুরু হয়েছে স্থানীয়ভাবে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে রাজনৈতিক চাপানউতোর। বিজেপি নেতা প্রদীপ কুমার দাস বলছেন, ‘‘অযোধ্যায় রাম মন্দিরের পাল্টা এ রাজ্যেও সরকারি উদ্যোগে গড়ে তোলা হচ্ছে দিঘাতে জগন্নাথ ধাম। অথচ ৩০০ বছরের প্রাচীন মহিষাদলের ঐতিহ্য রাম জিউ মন্দির ভেঙে পড়ছে। এলাকায় শাসকদলের বিধায়ক বা অন্য জনপ্রতিনিধিরা খেলা-মেলা নিয়ে ব্যস্ত। তাঁরাও গুরুত্ব দিচ্ছেন না।’’ স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক তিলক চক্রবর্তী আবার বলেছেন, ‘‘বিজেপি রামকে নিজেদের পার্টি সদস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠছেন। আমরা পঞ্চায়েত সমিতির এবং স্থানীয় উদ্যোগে অর্থ সংগ্রহ করে মন্দির সংস্কারের চেষ্টা করছি।’’