তমলুকে বাম প্রার্থীর প্রচারে রবীন দেব। —নিজস্ব চিত্র।
বিরোধীশূন্য কাঁথি পুরসভা গঠনের জন্য দিন কয়েক আগেই ডাক দিয়েছিলেন তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। এ বার ভোটের আগেই শহরের বিরোধীশূন্য ছবি দেখল কাঁথি। ইতিমধ্যেই পুরসভায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছেন তৃণমূলের দুই বিদায়ী পুরপ্রধান সৌমেন্দু অধিকারী ও দিব্যেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার তাঁদের নেতৃত্বেই পুরভোট প্রচারের শেষ দিনে শহর জুড়ে দাপাল তৃণমূলের মহামিছিল। শহরের পুরনো আউটডোর হাসপাতাল মাঠ থেকে শুরু হয়ে শহরের দারুয়া ময়দানে গিয়ে শেষ হয়। কারবালা মাঠে দলের শেষ ইবার্চনী সভায় বক্তব্য রাখেন তৃণমূলের দুই সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী ও শিশির অধিকারী। ছিলেন জেলা সভাধিপতি মধুরিমা মণ্ডল, বিধায়ক দিব্যেন্দু অধিকারী, অর্দ্ধেন্দু মাইতি, বনশ্রী মাইতি ও পুরপ্রধান সৌমেন্দু অধিকারী প্রমুখ। হাজার পনেরোরও বেশী তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের মহামিছিলে শহর কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। সমস্যায় পড়েন নিতাযাত্রীরা।
অথচ এ দিন কাঁথিতে বিরোধী বামফ্রন্ট, বিজেপি বা কংগ্রেসের কোন মিছিল, পথসভারই দেখা মিলল না। ছবিটা এমন কেন? সিপিএমের কাঁথি জোনাল সম্পাদক হরপ্রসাদ ত্রিপাঠীর সাফাই, ‘‘শহরে তৃণমূলের মিছিল চলাকালীন পাল্টা মিছিল বের করলে অশান্তি ও অপ্রিয় কিছু ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। সেই অপ্রিয় ঘটনা এড়াতেই কেন্দ্রীয় ভাবে কোন মিছিল বার করা হয়নি। যদিও বিভিন্ন ওয়ার্ডে আমাদের দলীয় প্রার্থীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার চালিয়েছেন।” তবে এই ঘটনাকে বিরোধীদের সাংগঠনিক দুর্বলতাকেই দুষছে তৃণমূল। দক্ষিণ কাঁথির তৃণমূল বিধায়ক দিব্যেন্দু অধিকারীর কথায়, ‘‘বামফ্রন্ট বা বিজেপির হয়ে কাঁথি শহরে মিছিল করার মত কর্মী ও সমর্থক নেই বলেই বিরোধীরা মিছিল বার করতে পারেনি।’’
শেয প্রচারে তমলুক শহরের বাসিন্দাদের সমর্থন পেতে অবশ্য সব দলই পথে নেমেছে। বৃহস্পতিবার সকালে পুরুলিয়ার ছৌ-নাচ, ধামসা মাদল থেকে বর্ণময় সাজ পোশাকে সেজে শোভাযাত্রার সাথে দলীয় প্রার্থী, কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে তমলুক শহরের রাজ ময়দান থেকে জেলখানা মোড় হয়ে হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত মহামিছিল হয়। মিছিল শেষে সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘পুরসভা নির্বাচনে আমরা প্রথম থেকেই প্রচার করছি। শেষ মুহূর্তেও আমরা মানুষের কাছে আবেদন রেখেছি। আমরা তমলুক পুরসভার ২০ টি ওয়ার্ডে জিততে পারি।’’ এরপরেই সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেবের নেতৃত্বে তমলুক শহরের মানিকতলা থেকে জেলখানা মোড়, বড়বাজার হয়ে হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত মহামিছিল করে জেলা বামফ্রন্ট নেতা-সমর্থকরা। ছিলেন জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি, জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রশান্ত প্রধান, নির্মল জানা, আরএসপি জেলা সম্পাদক অমৃত মাইতি প্রমুখ। এদিন বামফ্রন্টের মিছিল তমলুক শহরের রাস্তা দিয়ে হাসপাতাল মোড়ের দিকে আসার সময় তমলুকের বাদামতলার কাছে হাসপাতাল মোড় থেকে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল সমর্থকদের একটি মিছিল বাদামতলার দিকে আসে। ফলে দু’পক্ষের মিছিল মুখোমুখি হয়ে পড়ে । অবশ্য পুলিশের পাহারায় দুই পক্ষের মিছিল পরস্পরের পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ায় মিছিল নির্বিঘ্নে শেষ হয়।
এগরাতেও শেয দিনের প্রচার মিটল নির্বিঘ্নেই। সকাল থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডের প্রার্থীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের মন পেতে প্রচারে নামেন। এ দিন বাম-কংগ্রেসের পক্ষ থেকে কয়েকটি ওয়ার্ডে মিছিল ও পথসভার মাধ্যমে প্রচার সারা হয়। বিজেপি-র পক্ষ থেকে মিছিল করার পর শহর বিজেপি-র সভাপতির নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় পদযাত্রা শহর পরিক্রমা করে।
পার্থপ্রতিম দাস ও সোহম গুহর তোলা ছবি।