চলছে মূর্তি তৈরির কাজ। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
‘গামছা রূপেণ সজ্জিতা’!
দুর্গার গায়ের রঙ গোলাপি ডুরে, লক্ষ্মী ও গণেশের রঙ কিছুটা হালকা গোলাপি ডুরে। সরস্বতীর গায়ের রঙ নীল-সাদা ডুরে। দেখে বোঝার উপায় নেই যে, মাটির প্রতিমায় কোনও রঙের ব্যবহার করা হয়নি। জঙ্গলমহলের আদিবাসী সম্প্রদায়ের রংবেরঙের গামছা দিয়েই হয়েছে প্রতিমার অঙ্গরাগ। দুর্গা ও তাঁর সন্তানদের পোশাকও নানা বাহারি গামছা। সিংহ, মহিষের মাথা, ইঁদুর, পেঁচা, হাঁস, ময়ূরের গায়েও গামছার মোড়ক। কোনও রাসায়নিক আঠা নয়, গামছা আটকাতে ব্যবহার করা হয়েছে জঙ্গলমহলের প্রাকৃতিক আঠা। প্রতিমার অলঙ্কার ও সাজসজ্জায় ব্যবহার করা হচ্ছে নানা ধরনের রঙিন পাটের দড়ি ও কাগজ।
ঝাড়গ্রামের চিত্রশিল্পী মানব বাগচির স্টুডিয়োয় তৈরি হচ্ছে এমন ‘পরিবেশ-বান্ধব’ প্রতিমা। এ বছর কলকাতার লেক টাউনের একটি সর্বজনীন পুজোর প্রতিমা ও থিমের মণ্ডপ তৈরির দায়িত্ব পেয়েছেন বছর পঞ্চাশের মানববাবু। তিনি জানালেন, লেকটাউনের বিবেকানন্দ স্পোর্টিং ক্লাবের ওই পুজোর থিম হল ‘সবুজায়ন’। থিমের মানানসই মাটির প্রতিমা তৈরি হয়েছে জঙ্গলমহলের বনদেবীর আদলে।
কিন্তু বনদেবীর অঙ্গসজ্জা ও সাজসজ্জায় গামছা কেন? মানববাবুর জবাব, “জঙ্গলমহলের তিন জেলায় আদিবাসী-মূলবাসী সমাজের মানুষ গামছা ব্যবহার করেন। সেই সব গামছার কথা শহরের অনেকেই জানেন না। তোয়ালে নির্ভর মহানগরের বাসিন্দারা তো সাধারণ গামছার ব্যবহার ভুলতে বসেছেন। জঙ্গলমহলের গামছাকে তুলে ধরতেই এই উদ্যোগ।”
প্রতিমার অঙ্গরাগ ও সাজসজ্জায় পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার বিভিন্ন এলাকার কয়েকশো গামছা ব্যবহার করা হয়েছে। থিম যেহেতেু ‘সবুজায়ন’, তাই মানববাবুর ভাবনায় দুর্গা নিরস্ত্র। দেবীর হাতে থাকবে দশটি গাছের চারা। দুর্গার সন্তানরাও গাছের চারা ধরে থাকবেন। সবুজ গামছা দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে শাল, মহুল, কেঁদ-এর মতো জঙ্গলমহলের বিভিন্ন গাছের চারা।