Kurmi Community

এ বার সংসদ অভিযানে কুড়মিরা

বাংলার পঞ্চায়েত ভোটের আগে এমন কর্মসূচি যে কেন্দ্রের বিজেপি ও রাজ্যের তৃণমূলকে চাপে রাখার কৌশল সেটা অবশ্য মানছেন এ রাজ্যের কুড়মি সামাজিক নেতাদের একাংশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:৪৭
Share:

কুড়মি সংগঠনের সংসদ ভবন ঘেরাওয়ের পোস্টার। ঝাড়খণ্ডে।

রেল রোকোর পরে এ বার কুড়মিদের আন্দোলনকে জাতীয়স্তরে নিয়ে যেতে উদ্যোগী হল বাংলা, ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডের একাধিক কুড়মি সংগঠন। আগামী ১২ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে ‘সংসদ ভবন হুড়কা জাম’-এর ডাক দিয়েছে তিন রাজ্যের কুড়মি সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ ‘টোটেমিক কুরমি/কুড়মি (মাহাতো) সমাজ’।

Advertisement

বাংলার পঞ্চায়েত ভোটের আগে এমন কর্মসূচি যে কেন্দ্রের বিজেপি ও রাজ্যের তৃণমূলকে চাপে রাখার কৌশল সেটা অবশ্য মানছেন এ রাজ্যের কুড়মি সামাজিক নেতাদের একাংশ। ওই যৌথ মঞ্চে প্রধানত রয়েছে ঝাড়খণ্ডের কুড়মি বিকাশ মোর্চা, কুড়মি সেনা, ওড়িশার কুড়মি সেনা এবং এ রাজ্যের কুড়মি সমাজ পশ্চিমবঙ্গ। এ ছাড়াও ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশার আরও গোটা দশেক কুড়মি সংগঠনও একযোগে সংসদ ভবন ঘেরাও অভিযানে শামিল হচ্ছে। ঝাড়খণ্ডের কুড়মি বিকাশ মোর্চার কেন্দ্রীয় সভাপতি শীতল ওহদার, ওড়িশার কুড়মি সেনার সভাপতি জয়মণিকুমার মহন্তা একযোগে বলছেন, ‘‘কুড়মিদের প্রতি বঞ্চনা করা হচ্ছে। আমাদের রাজ্যেও আমরা ধারাবাহিক আন্দোলন করে চলেছি। কুড়মিদের আদিবাসী তালিকাভুক্তি সহ বিভিন্ন দাবিতে এবার জাতীয় স্তরে একযোগে জোরদার আন্দোলন হবে।’’

কুড়মি সমাজ পশ্চিমবঙ্গ-এর সভাপতি রাজেশ মাহাতোর কথায়, ‘‘কুড়মিদের দাবি নিয়ে জাতীয় স্তরে ইতিপূর্বে বছর চারেক আগে কর্মসূচি হলেও প্রাপ্তির ভাঁড়ার শূন্য। তাই ফের আরও সংগঠিত ভাবে দিল্লির দরবারে আমাদের দাবি পেশ করার উদ্যোগ হচ্ছে।’’ প্রসঙ্গত, এই রাজেশই যখন আদিবাসী কুড়মি সমাজের রাজ্য সম্পাদক পদে ছিলেন, ওই সময়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নয়াদিল্লির সংসদ মার্গে ‘মাহুর ডঁড় অগুয়ান’ (বিনীত ভাবে দন্ডি কেটে আবেদন জানানো) কর্মসূচি হয়েছিল। রাজেশ সেবার দিল্লিতে ওই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের পর আদিবাসী কুড়মি সমাজ থেকে বেরিয়ে এসে রাজেশ ‘কুড়মি সমাজ পশ্চিমবঙ্গ’ গঠন করেন।

Advertisement

গত ২০-২৪ সেপ্টেম্বর কুড়মিদের দাবি দাওয়া নিয়ে টানা পাঁচ দিন পশ্চিম মেদিনীপুরের খেমাশুলিতে রেল ও জাতীয় সড়ক এবং পুরুলিয়ার কুস্তাউরে রেল অবরোধ করা হয়েছিল। মূলত আদিবাসী কুড়মি সমাজ এবং কুড়মি সমাজ পশ্চিমবঙ্গ মিলিত ভাবে ‘ছোটনাগপুর টোটেমিক কুড়মি/কুরমি মাহাতো সমাজ’ নামে একটি মঞ্চ গঠন করে ওই অবরোধ কর্মসূচি করেছিল। কুড়মিদের আদিবাসী তালিকাভুক্তির দাবির স্বপক্ষে রাজ্যের তরফে সংশোধিত সিআরআই (কালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট) রিপোর্ট কেন্দ্রে পাঠানো হবে— এই আশ্বাসে অবরোধ উঠেছিল। রাজ্য তিন মাসের মধ্যে ওই রিপোর্ট কেন্দ্রে পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু তিন মাস হতে চললেও রিপোর্ট পাঠানো হয়নি বলে অভিযোগ।

সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ভোটের আগে তাই মোক্ষম সময়ে কুড়মিদের দাবি দাওয়ার আন্দোলনকে জাতীয় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ হচ্ছে। কুড়মি সামাজিক নেতারা জানাচ্ছেন, কেন্দ্রের বিজেপি ও রাজ্যের তৃণমূলের কাছে এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই আবহে রাজনীতিকরা যাতে কুড়মিদের দাবিদাওয়া পূরণে তৎপর হন, সেই লক্ষ্যেই শীতকালীন অধিবেশন চলাকালীন সংসদ ঘেরাওয়ের (হুড়কা জাম) আন্দোলন হবে। কুড়মি নেতাদের পর্যবেক্ষণ, গত বিধানসভা ভোটে একাধিক কুড়মি সামাজিক নেতা নির্দল হিসে লড়ে হেরেছেন। তাঁদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। অথচ তাঁদের ডাকেই সামাজিক আন্দোলনে শামিল হন হাজার হাজার কুড়মি। তাই রাজনৈতিক মতাদর্শে বিভাজিত কুড়মিদের জাতিসত্তার আবেগ উস্কে জাতীয় পর্যায়ে বিষয়টি তুলে ধরতে চান প্রথম সারির কুড়মি সামাজিক নেতারা।

১২ ডিসেম্বর যন্তরমন্তরে জমায়েত তারপর মিছিল করে গিয়ে সংসদ ঘেরাওয়ের ডাক দিয়েছে কুড়মি সংগঠনগুলি। কুড়মি নেতারা বিলক্ষণ জানেন, নিরাপত্তার বেড়াজালে বাস্তবে সংসদ ঘোরাও সম্ভব নয়। জয়মণি, রাজেশরা তাই বলছেন, ‘‘ধারাবাহিক অনুনয়-বিনয় অনেক হয়েছে। এবার দেশের রাজধানীতে কুড়মিরা নিজেদের সংগঠিত শক্তির পরিচয় দেবেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement