এই বাইকেই এসেছিল দুষ্কৃতীরা।
গভীর রাতে লরির খালাসিকে ছুরি মেরে মোবাইল এবং টাকা হাতিয়ে পালিয়েছিল তিন দুষ্কৃতী। মোবাইলের টাওয়ারের লোকেশন ধরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই দুষ্কৃতীদের মধ্যে দু’জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ।
পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রের খবর, রবিবার রাত ১টা নাগাদ খড়্গপুর থেকে কলকাতার দিকে যাচ্ছিল একটি লরি। ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে পাঁশকুড়ার জিয়াদাতে লরিটির চালক ঋষি দে রাও এবং খালাসি রাজু যাদব একটি হোটেলে খেতে ঢোকেন। খাওয়া সেরে হোটেলের সামনেই গাড়ি রেখে ঋষি লরিতে ঘুমিয়ে পড়েন। রাজু গাড়ির টায়ার পরীক্ষা করছিলেন। সে সময় মেচেদার দিক থেকে নম্বরপ্লেটহীন একটি বাইকে তিন যুবক সেখানে আসে এবং রাজুকে নিয়ে জোর করে লরিতে ঢুকে পড়ে। অভিযোগ, তারা ঋষি এবং রাজুকে প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে ফোন ও টাকা কেড়ে নেয়। বাধা দিলে তারা রাজুর পেটে ছুরি মারে বলে অভিযোগ। ঋষির চিৎকারে ছুটে আসেন অন্য লরির চালক-খালাসি ও লোকজন। তাঁরাই দুষ্কৃতীদের বাইক টেনে ধরেন। সুযোগ বুঝে ঋষিও খুলে নেন দুষ্কৃতীদের বাইকের চাবি। প্রাণ বাঁচাতে পাশের ঝোপে গা ঢাকা দেয় দুষ্কৃতীরা। পরে আহত রাজুকে পাঁশকুড়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খবর দেওয়া হয় পাঁশকুড়া থানায়। তবে পুলিশ আসার আগেই সবার অলক্ষ্যে দুষ্কৃতীরা ডুপ্লিকেট চাবির সাহায্যে বাইক নিয়ে মেচগ্রামের দিকে পালিয়ে যায়। ঋষির অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই তিন দুষ্কৃতী সোমবার সারাদিন পাঁশকুড়ার বিভিন্ন এলাকায় লুকিয়ে ছিল। সন্ধ্যার দিকে রাজুর খোওয়া যাওয়া মোবাইলের টাওয়ারের লোকেশন জানতে পারে পুলিশ। জানা যায়, সেটি পাঁশকুড়ার মঙ্গলদ্বারি এলাকায় রয়েছে। এর পরেই শুরু হয় অভিযান। রাত ৯টা নাগাদ পাঁশকুড়া থানার পুলিশ সাধারণ পোশাকে মোটরবাইকে মঙ্গলদ্বারি এলাকায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে একটি ধাবায় যায়। তিন দুষ্কৃতী তখন সেখানে খাচ্ছিল। তিন জনের মধ্যে দু’জন ধরা পড়ে পুলিশের হাতে। পুলিশ জানিয়েছে, ধাবায় পৌঁছনোর পর শেখ আক্রম নামে এক দুষ্কৃতী ছুটে পালালেও ধরা পড়ে যায় বাকি দু’জন। তাদের নাম শেখ সাদ্দাম ও প্রভাত মণ্ডল। বাড়ি হলদিয়ার ভবানীপুরে। রাজুকে ছুরি মেরেছিল প্রভাত। দুষ্কৃতীদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় সেই ছুরি এবং খোওয়া যাওয়া মোবাইল। তবে ছিনতাইয়ের তিন হাজার টাকা দুষ্কৃতীরা খরচ করে ফেলেছে বলে পুলিশের দাবি।
পাঁশকুড়া থানার এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীরা সোমবার সন্ধ্যায় ভবানীপুর থেকে আসার সময় রাধামণি বাজারেও একটি মোবাইল ছিনতাই করেছিল। সেটিও উদ্ধার হয়েছে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, ওই দুষ্কৃতীরা লরি ও ছোট গাড়ি ছিনতাই চক্রে যুক্ত। শেখ সাদ্দাম ভবানীপুর থানা এলাকায় গাড়ি চুরি ঘটনায় জেলও খেটেছে। গত জানুয়ারিতেই সে ছাড়া পেয়েছিল। মঙ্গলবার ধৃতদের তমলুক আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।