খেজুরির গোড়াহার জলপাই গ্রামে তৃণমূলের সভাপতি সুদর্শন জানার বাড়ি এভাবে ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র
রসুলপুর নদী পেরিয়ে বোগা থেকে পাকা রাস্তা ধরে শ্যামপুর। সেখান থেকে উত্তর দিকে কিছুটা এগোলে কটকা দেবীচক। রবিবার এখানেই বিজেপি ও তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। সোমবারেও কামারদায় শেখ আহমেদ নামে এক বিজেপি কর্মীর মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের লোকজনের বিরুদ্ধে।
কটকা দেবীচক গ্রাম পেরিয়ে কংক্রিটের কিছুটা ভাঙাচোরা রাস্তা ধরে এগোলে গোড়াহার জলপাই গ্রাম। একদিকে কুঞ্জপুরের খাল। উল্টোদিক ধরে হাঁটতে থাকলে দেখা দেল এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। অচেনা লোক দেখে জানালা বন্ধ করে দিলেন এক মহিলা। পরে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর আশ্বস্ত হয়ে রবিবারের ঘটনা নিয়ে মুখ খুললেন। জানা গেল, শাসক দলের বুথ সভাপতি সুদর্শন জানার বাড়ি এটা। স্ত্রী বলেন, ‘‘ওই দিন ছেলে-মেয়ে এবং ভাইঝিকে নিয়ে সকালে জলখাবার খাচ্ছিলেন স্বামী। হঠাৎ তিন-চারজন পিস্তল উঁচিয়ে বাড়িতে ঢুকে পড়ে। ভয়ে স্বামী ছেলেমেয়েদের নিয়ে ছাদে উঠে যান। আমিও চলে যাই। ওরা ঘরে ঢুকে সব লন্ডভন্ড করে দিল।’’ স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য ও তৃণমূল নেত্রী সবিতা পাত্রর বাড়ির জানলার কাচ ভাঙা। স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, এ দিন সকালে পুলিশ এসেছিল। তবে এখানে তৃণমূলের সমর্থন বেশি। তাই বিজেপির লোকেরা হুমকি দিচ্ছে। এলাকার বিজেপি নেতা অনুপ ভক্তার অভিযোগ, ‘‘আমাদের উপরে হামলা চালাবে বলে বাইরে থেকে তৃণমূল লোক জড়ো করছে।’’ স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের অসীম মণ্ডলের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘দলীয় সাংসদ আসবে বলে লোক জমায়েত করছে বিজেপি। পুলিশকে বলেছি।’’
দলের জেলা সম্পাদক পবিত্র দাস গুলিবিদ্ধ হওয়ার যে অভিযোগ করেছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব, এ দিন তা খারিজ করেন তমলুক জেলা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জেলা তৃণমূল সভাপতি শিশির অধিকারী বলেন, ‘‘আলাদা কোনও আঘাত হতে পারে বলে আমরা গোড়া থেকেই বলেছিলাম। ওরা মিথ্যে বলায় অভ্যস্ত। পুলিশ নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করুক।’’
এদিন এলাকায় বিজেপি সাংসদ ও যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি সৌমিত্র খানের যাওয়ার কথা থাকলেও তাঁকে চণ্ডীপুর ও বাজকুলের মধ্যবর্তী এলাকা থেকে পুলিশ ফিরিয়ে দেয় বলে বিজেপির দাবি। কাঁথিতে প্রতিবাদ মিছিল এবং এসডিপিও-র দফতরে স্মারকলিপি দেয় বিজেপি জেলা নেতৃত্ব। তবে সৌমিত্র খাঁ কে ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ। জেলার পুলিশ সুপার ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আহত দলীয় কর্মীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন উনি। তাই ওঁকে তমলুক জেলা সদর হাসপাতালে আহতের সঙ্গে দেখা করার কথা বলা হয়।’’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘এ দিন কুনারদা ও সৌমিত্র খাঁর নেতৃত্বে আমাদের একটি দল ওখানে গিয়েছিল। ওঁরা ফিরে রিপোর্ট দিলে সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।’’