—ফাইল চিত্র।
কয়েক দশেকের জমি-জট। বছর দু’য়েক আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণার পরে অবশ্য রায়তি স্বত্বের আশায় বুক বেঁধেছিলেন জমি মালিকেরা। কিন্তু এখনও অনেকেই পাননি খসড়া পরচা। মুখ্যমন্ত্রীর আসন্ন জেলা সফরের আগে তাই ফের সরব হলেন খাসজঙ্গল মৌজার বাসিন্দারা।
খড়্গপুরের মালঞ্চ সংলগ্ন খাসজঙ্গল মৌজার বাসিন্দাদের গত জুলাই থেকে জমির খসড়া পরচা দেওয়া শুরু করে জেলা প্রশাসন। ১৪ অগস্টের মধ্যে পরচা দেওয়া ও সংশোধনী জমার প্রক্রিয়া শেষের কথা জানিয়েছিল ভূমি দফতর। কিন্তু অনেকেই পরচা না পাওয়ায় নতুন করে ১৫ অগস্ট থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অভিযোগ জমা দিতে বলা হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলে অভিযোগের শুনানি।
এই শুনানি নিয়েই জমি মালিকদের মধ্যে অসন্তোষ ঘনিয়েছে। তাঁদের দাবি, শুনানির নামে হয়রান করা হচ্ছে। দলিল দেখানোর পরে তার আগের দলিল চাওয়া হচ্ছে, জমির রেকর্ড খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না-সহ নানা যুক্তি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। বিহিত চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছে জমি মালিকদের সংগঠন। কাল, প্রশাসনিক বৈঠকে বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আনতে বিধায়কেরও দ্বারস্থ হয়েছে তারা। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) তুষার সিংলা অবশ্য বলেন, “ওঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে জানাতেই পারেন। তবে বিষয়টি আমরা অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে দেখছি। ৯০ শতাংশ পরচা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ১০ শতাংশ নিয়ে যে অভিযোগ এসেছে তার শুনানি হয়েছে। দু’-একটি ক্ষেত্রে জটিলতা থাকায় উপযুক্ত নথি জমা দিতে বলা হয়েছে।”
মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠির একাংশ।
ব্রিটিশ জমানায় রেলশহরের মালঞ্চ রোডের দু’ধারে খাসজঙ্গল মৌজার জমি একাধিক ব্যক্তিকে ৯৯ বছরের লিজে দেওয়া হয়েছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ওই জমি কেনা-বেচা শুরু হয়। বাড়ি বানিয়ে পুরসভায় মিউটেশনও হয়ে যায়। সকলেই পায় হোল্ডিং নম্বর। ১৯৭৫ সালে সরকারি লিজের মেয়াদ শেষের পরেও চলেছে কেনা-বেচা। মিলেছে বাড়ি তৈরির ব্যাঙ্ক ঋণ। ২০১৫ সালের ১৯ জুন অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) এই জমি খাস বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। জলের সংযোগ, মিউটেশন, হোল্ডিং নম্বর দেওয়া যাবে না বলেও জানানো হয়। শুরু হয় আন্দোলন। শেষে ২০১৮ সালে নিয়ম মেনে রায়তি স্বত্ব ফেরতের কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
খড়্গপুর খাসজঙ্গল মৌজা জমি মালিক কমিটির আহ্বায়ক চঞ্চল চক্রবর্তী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বসবাসকারী সকলকে জমির রায়তি স্বত্ব ফিরিয়ে দিতে বলেছেন। কিন্তু নানা অজুহাতে শুনানিতে অনেককে পরচা দেওয়া হবে না বলে জানানো হয়েছে। আমরা বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আনতে চাইছি। বিধায়ককেও জানিয়েছি।” খড়্গপুরের বিধায়ক প্রদীপ সরকারের আশ্বাস, “আমি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি তুলে ধরব।”
বস্তুত, এ বার মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরের আগে বিভিন্ন দফতরের কাজকর্মের পর্যালোচনার পাশাপাশি গ্রিভান্স সেলের কাজেরও পর্যালোচনা হচ্ছে। দেখা হচ্ছে, জেলার কতগুলি সমস্যার সুরাহা হয়েছে। যেগুলির হয়নি, সেগুলি কী অবস্থায় রয়েছে, কেন হয়নি প্রভৃতি। গত বছর সেপ্টেম্বরে ডেবরার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, আমজনতার নালিশ তিনি শুধু শুনছেন না, বিহিতও করছেন। বৈঠকটি মুখ্যমন্ত্রী শুরুই করেছিলেন কোন দফতরের নামে কত অভিযোগ জমা পড়েছে তা শুনিয়ে। মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, মানুষের অভিযোগ জানতে তাঁর নিজস্ব পরিকাঠামো রয়েছে।
ওই পরিকাঠামোই 'দিদিকে বলো'। যেখানে নালিশ জানালে সমস্যা গ্রিভান্স সেলে নথিভুক্ত হয়। মাস দুয়েক হল তৃণমূলের ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির এক বছর পূর্ণ হয়েছে। জানা যাচ্ছে, এই এক বছর দু'মাসে পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে প্রায় ১১,১০০টি অভিযোগ গিয়েছে। প্রায় ৯,৮০০টি সমস্যার অর্থাৎ, প্রায় ৯০ শতাংশ সমস্যারই সমাধান হয়েছে। তুলনায় বেশি অভিযোগ গিয়েছে ডেবরা, সবং, কেশপুর, ঘাটাল, মেদিনীপুর থেকে। কেশপুর থেকে যেমন প্রায় ১,২০০ অভিযোগ গিয়েছে। এখনও যে সব সমস্যার সমাধান হয়নি, তার তালিকা সংশ্লিষ্ট বিধায়কদের পাঠানো হয়েছে তা সমাধানে পুনর্বার উদ্যোগী হওয়ার জন্য। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘জেলাবাসী ‘দিদিকে বলো’-তে যে ভাবে সাড়া দিয়েছেন তাতে আমরা অভিভূত।’’