বর্ষার মরসুম চললেও স্বাভাবিক বৃষ্টি না হওয়ায় খরিফ চাষের বীজতলা তৈরিতে সমস্যায় পড়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চাষিরা।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্যান্য বছর এই সময় বেশিরভাগ এলাকায় ধান রোয়া শুরু হয়ে যায়। কিন্তু চলতি বছরে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় বীজতলা ফেলে অনেকে যেমন সমস্যায় পড়েছেন, তেমনি যাঁরা জলদি বীজতলা চাষ করে ধান লাগিয়ে ফেলেছেন- মাথায় হাত তাঁদেরও। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কৃষি দফতরের সহ-অধিকর্তা(তথ্য) দুলাল দাস অধিকারী বলেন, “ভারী বৃষ্টি না হলে জেলায় খরিফ চাষে সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তবে এখনও সময় রয়েছে। জেলার বিক্ষিপ্ত ভাবে কোথাও ধান রোয়াও চলছে।”
স্থানীয় ও কৃষি দফতর সূত্রের খবর, সাধারণত মে ও জুন মাস-এই দুই মাস বীজতলা তৈরি করার সময়। তবে জুলাই মাসেও অনেকে বীজতলা তৈরি করেন। খরিফ চাষের নিয়ম অনুযায়ী, বীজতলা তৈরির জন্য জমিকে উপযুক্ত করে সেই জমিতে ধান ছড়িয়ে দেওয়া হয়। শুকনো ও কাদা-এই দুই ধরনের বীজতলা তৈরি হয়। শুকনো বীজতলা সাধারণত ঝাড়গ্রাম, গোয়ালতোড়, গড়বেতা-সহ একটু উঁচু এলাকাতেই বেশি হয়। এই শুকনো বীজতলাতেও জল প্রয়োজন। তবে অল্প। অন্যদিকে কাদা বীজতলা ১৫-২০ দিনের মধ্যেই তুলে নিয়ে জমিতে পুঁতে দিতে হবে। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে বীজতলা ফেলে সমস্যায় পড়েছেন জেলার বহু চাষি।
কৃষি দফতরের তথ্য অনুযায়ী,জেলার চলতি মরসুমে এখন পযর্ন্ত জেলায় ২৪ শতাংশ বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে। জল না পেয়ে চাষিরা বাধ্য হয়ে অগভীর নলকূপ থেকে জল তুলে বীজতলা তৈরি করছেন। দাসপুরের লাউদার উত্তম শাসমল ,ঘাটালের মনোহরপুরের প্রতাপ মণ্ডলের কথায়, ‘‘বৃষ্টি না হওয়ায় বীজতলা ঠিকমতো বাড়ছে না। স্যালো চালিয়ে কোনওক্রমে তলাকে বাঁচিয়ে রেখেছি। কী যে করি বুঝে উঠতে পারছি না!”
কৃষি দফতর সূত্রের খবর,পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় মোট চাষ যোগ্য জমির পরিমাণ ৫ লক্ষ ৯৫ হাজার ২১০ হেক্টর। তার মধ্যে জেলার এ বার খরিফ চাষ হয় ৫ লক্ষ ৪০ হাজার হেক্টরের মতো জমিতে। এর জন্য ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে বীজতলা ফেললেই পুরো জেলায় খারিপ চাষ হয়ে যাবে। সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত ২৫ হাজারের কিছু বেশি জমিতে বীজতলা ফেলা হয়েছে।
জলের অভাব হলে বীজতলাতে আয়রনের অভাব দেখা দেয়। ফলে পাতা হলুদ ও লাল হয়ে যায়। রোয়া ধানেও নানান পোকার উপদ্রব দেখা দেওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। কৃষি দফতর সূত্রের খবর, জেলার একাধিক ব্লকে বিক্ষিপ্ত ভাবে এখন ধান রোয়া চলছে। চলতি সপ্তাহে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলে সব সমস্যারই সমাধান হয়ে যাবে। আর সেই আশায় দিন গুনছেন চাষিরাও।