হাতের গড়ে পদ্ম ফুটবে না কি পদ্ম ও জোড়াফুলকে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে কংগ্রেসের আধিপত্যই থাকবে— ভোট শেষ হতেই চর্চা শুরু খড়্গপুরে।
গত বছর পুরভোটে ভাল ফল হয়নি কংগ্রেসের। গত লোকসভা নির্বাচনে খড়্গপুরে ৩৪ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রথম স্থানে ছিল বিজেপি। যদিও পুরযুদ্ধে হতাশ হতে হয় গেরুয়া শিবিরকেও। ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও শেষ পর্যন্ত পুরবোর্ড দখল করে তৃণমূল। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, পুলিশ ও মাফিয়ার মদতে বিরোধী কাউন্সিলরদের ভয় দেখিয়ে তৃণমূল পুরবোর্ড দখল করেছে। যদিও এ বার মানুষ ভোট দিতে পারায় জনতার রায় দেবে বলে আশাবাদী বিজেপি।
খড়্গপুরের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ বলেন, “রেলশহরের মানুষ পরিবর্তন চেয়েছিলেন। তাছাড়া তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও কংগ্রেস-সিপিএমের জোটের বিরুদ্ধে অনেকে মানুষ আমাদের ভোট দিয়েছে। তাই আমাদের জয় নিশ্চিত।” খড়্গপুর পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডের কথায়, ‘‘নির্বাচনের পরে মনে হচ্ছে বিজেপির সঙ্গে আমাদের লড়াই হয়েছে। কারণ তৃণমূলের একটি অংশের ভোট আমরাও যেমন পেয়েছি তেমনই বিজেপিও পেয়েছে।”
খড়্গপুরে প্রার্থী ঘোষণার পই কোন্দলে অস্বস্তি বাড়ে তৃণমূলের। দলের এক সূত্রে খবর, ‘বহিরাগত’ রমাপ্রসাদ তিওয়ারিকে মানতে পারেননি দলের একাংশ নেতা-কর্মী। ফলে ভোটের পরেও অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা নিয়ে চিন্তায় তৃণমূল নেতৃত্ব। শহরের এক তৃণমূল কর্মীর কথায়, “মুনমুনদা (দেবাশিস চৌধুরী) এতদিন ধরে দলটা করলেন, তাঁর জন্য দল কী করল? তাই এ বার দলের বিরুদ্ধেই ভোট দেব বলে ঠিক করেছিলাম। স্বাভাবিকভাবেই সিপিএমের-কংগ্রেস জোটের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার জন্য বিজেপিকেই বেছে নিয়েছি। ”
শহর কংগ্রেস সভাপতি অমল দাসের বক্তব্য, “ভোটের দিন দুপুর বেলা ১টার পরে তৃণমূলের একটা অংশ বিজেপির জন্য ময়দান ছেড়ে দিয়েছিল। তাই এ বার ভোটে বিজেপির সঙ্গেই আমাদের লড়াই রয়েচে।” যদিও বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা যুব মোর্চার সভাপতি অরূপ দাস বলেন, “লোকসভায় যাঁরা আমাদের ভোট দিয়েছিল, তাঁরা ফের আমাদের ভোট দেবে, সে বিষয়ে আমরা আশাবাদী ছিলাম। এ বার তৃণমূলের একটা বড় অংশের ভোট আমাদের দিকে আসায় জয় সুনিশ্চিত হয়েছে।”
তবে খড়্গপুরে গড় রক্ষার আশা ছাড়ছে না কংগ্রেস। তাঁদের দাবি, খড়্গপুরে কংগ্রেসের একটা নিজস্ব ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে। একইসঙ্গে বামেদের সঙ্গে জোট হওয়ায় তাঁদের ভোটও চাচার পক্ষে আসবে। ফলে জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা। খড়্গপুর পুরসভার বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের রবিশঙ্করবাবু বলছেন, “জয় আমাদের হবে এটুকু নিশ্চিত। কারণ আমাদের দিকে তৃণমূলের একটি অংশের ভোট এসেছে। আমার ধারণা বিজেপি দ্বিতীয় হবে। আর তৃতীয় স্থান পাবে তৃণমূল।”
বিজেপি প্রার্থী দিলীপবাবুর দাবি, “কংগ্রেসের সঙ্গে লড়াইয়ে আমরা জিতব। আর তৃণমূলের কোনও জায়গা নেই।” যদিও তৃণমূল প্রার্থী রমাপ্রসাদ তিওয়ারির দাবি, তৃণমূল সরকারের উন্নয়নের নিরিখে মানুষ ভোট দেবেন। জয় তৃণমূলের পক্ষেই আসবে। তিনি বলছেন, “কংগ্রেসের কোন্দলের জেরে বহু ভোট আমাদের দিকে এসেছে।” প্রশ্ন উঠছে, দলের একাংশ তো তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন তাতে তো তিনি পিছিয়ে পড়তে পারেন? তৃণমূল প্রার্থীর জবাব, “দলের যে অংশ বিপক্ষে ভোট দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে তাঁদের ওপর স্থানীয় মানুষের সমর্থন নেই।” তাঁর সংযোজন, “মানুষের রায় মাথা পেতে নেব।”