একটি বুথে বিজেপি এজেন্টের সঙ্গে হাত মেলালেন তৃণমূল প্রার্থী। নিজস্ব চিত্র
সকালে হাসিমুখ। বিরোধী দলের প্রার্থীর এজেন্টের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময়।
সন্ধ্যা নামার আগে থেকেই কানে উঠল মোবাইল। ভার হল মুখ। প্রদীপের শিখা তখন পশ্চিমের সূর্যের মতোই।
সোমবার খড়্গপুর বিধানসভা উপ-নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী প্রদীপ সরকারের শরীরী ভাষা যতই বদলাক, মুখে আগাগোড়াই আত্মবিশ্বাসী তিনি। নেতা নয় বেটা (ভোটে এই স্লোগানই দিয়েছেন প্রদীপ) বরাবরই বলে গেলেন, ‘‘একশো শতাংশ নিশ্চিত। দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) আমার উপর ভরসা রেখেছেন। আমি নিশ্চিত, আমি দিদির ভরসা রাখতে পারব।’’
ভোটের সকালে অবশ্য খোশমেজাজেই ছিলেন তৃণমূলের প্রার্থী। নিউ সেটেলমেন্টের দলীয় কর্মীরা তাঁকে জানিয়েছিলেন, স্থানীয় এক বুথের ইভিএমের কাছে পর্যাপ্ত আলো নেই। প্রতীক ঠিকঠাক দেখা যাচ্ছে না। শুনেই ছুটে আসেন প্রদীপ। স্থানীয় কাউন্সিলর তৃণমূলের পূজা নায়ডুকে নিয়ে বুথে যান। কথা বলেন প্রিসাইডিং অফিসারের সঙ্গে। ইভিএমের কাছে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করার আর্জি জানান। রসিকতা করে তাঁকে বলেন, ‘‘আপনি যদি সম্মতি দেন, তা হলে আমি এই আলোও লাগিয়ে দিতে পারি! দেখুন কী করবেন!’’ তিনি যে শুধু তৃণমূলের প্রার্থী নন, ‘মানুষের প্রার্থী’— বুথে সেই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেন প্রদীপ। বুথের মধ্যে এক বেঞ্চে চার দলের চার এজেন্ট বসেছিলেন। সকলেই তরুণ। তৃণমূলের এন শান্তি, বিজেপির বরখা জানা, কংগ্রেসের নিকামি মেহেরা এবং শিবসেনার শ্রীধর। চার দলের চার এজেন্টের সঙ্গেই হাত মেলান তিনি। সঙ্গে পরামর্শ দেন, ‘‘তোমরা যে যার কাজ করো। কেউ কারও সঙ্গে ঝগড়া করো না কিন্তু।’’ বিজেপির এজেন্টের সঙ্গেও হাত মেলালেন? বুথ থেকে বেরিয়ে তৃণমূল প্রার্থী বলেন, ‘‘না মেলানোর কি আছে? খড়্গপুরের সকলেই প্রদীপ সরকারকে চেনেন। আমার সঙ্গে অনেকের ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। বন্ধুর সম্পর্ক।’’
বুথ থেকে বেরিয়ে স্থানীয় এক বস্তিতে ঢুঁ মারেন প্রদীপ। সঙ্গী সেই শ্রীনু নায়ডুর স্ত্রী পূজাই। সোমবার দিনভর খড়্গপুরে চরকিপাক খেয়েছেন। গাড়ি করে বুথে বুথে গিয়েছেন। ভোট কেমন চলছে দেখেছেন। খোঁজখবর নিয়েছেন। এক বুথের সামনে তাঁর মুখোমুখি হন কংগ্রেস প্রার্থী চিত্তরঞ্জন মণ্ডল। তাঁর পা ছুঁয়ে প্রণাম করেন প্রদীপ। চিত্তকে বলতে শোনা যায়, ‘‘এ কী করছো!’’ তাঁর ‘মাস্টারমশাই’ চিত্তর হাত ধরে প্রদীপ বলেন, ‘‘আপনি আমার স্যর। প্রণামটুকু করতে দিন।’’
বিজেপির প্রেমচাঁদ ঝাঁ নন, প্রদীপের প্রতিপক্ষ যেন দিলীপ ঘোষই! এ দিন তাই বারবার মেদিনীপুরের সাংসদ, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপকেই নিশানা করেছেন প্রদীপ। তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘খড়্গপুরে এই ভোটটা দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে হচ্ছে। উনি খড়্গপুরের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, একটিও রাখেননি।’’ ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে এতদিন তির্যক মন্তব্য শোনা গিয়েছে তৃণমূল- শিবিরে। ভোটের সকালেও প্রদীপকে বলতে শোনা যায়, ‘‘টোটাল মিলিটারি নামিয়ে ভোট হোক না! আমাদের অসুবিধা নেই।’’
বেলা যত গড়িয়েছে ততই ফিকে হয়েছে সকালের আত্মবিশ্বাস। ক্রমাগত ঘামতে দেখা গিয়েছে প্রদীপকে। ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মোবাইলে। ভোট শেষেও প্রদীপের দাবি, ‘‘খড়্গপুরে এ বার নেতা নয়, বেটাই জিতবে।’’ এ দাবি করার পরমুহূর্তেই এক পরিচিতের কাছে তৃণমূল প্রার্থীর জিজ্ঞাসা, ‘‘দিলীপ ঘোষ সারা দিন বাংলোতেই ছিলেন না?’’
প্রদীপ যখন এ প্রশ্ন করছেন ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমেছে।