রাধানগর গ্রামে কুঁড়ে ঘরের সামনে কৌশিক দাস। নিজস্ব চিত্র।
এক চিলতে কঁুড়ে ঘরটায় ঠিকমতো আলো-বাতাস ঢোকে না। কঁুড়ে ঘরটির ভিতরে ঢুকতে হয় মাথা নিচু করে। সেই ঘরের বাসিন্দা বছর সতেরোর কৌশিক দাসের সাফল্যে খুশির জোয়ার ঝাড়গ্রামের রাধানগর গ্রামে। সম্প্রতি জাতীয় স্তরের ক্যারাটে প্রতিযোগিতায় সিনিয়র ‘কুমিতে’ বিভাগে সোনা জিতেছে কৌশিক।
কৌশিকের বাবা লাল্টু দাস পেশায় দিনমজুর। মা সাধনাদেবী ঘরসংসার সামলান। ছোট ভাই পড়ে চতুর্থ শ্রেণিতে। গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ার মতো আর্থিক সঙ্গতি না-থাকায় দু’বছর আগে কৌশিককে নবম শ্রেণির পরে পড়াশোনায় দাঁড়ি টানতে হয়েছিল। কিন্তু জেলা ক্যারাটে সংস্থার সহযোগিতায় অনুশীলন চালিয়েছে সে। ফলও মিলেছে হাতেনাতে।
গত ৩ ও ৪ জুন পটনার পাটলিপুত্র স্পোর্টস কমপ্লেক্সে হয়ে গেল ১৫ তম ‘অল ইন্ডিয়া ইন্টার স্কুল অ্যান্ড সিনিয়র ক্যারাটে চ্যাম্পিয়নশিপ ফেডারেশন কাপ-২০১৬’। ১৯টি রাজ্যের আড়াই হাজার প্রতিযোগী যোগ দিয়েছিল। মেদিনীপুর ডিস্ট্রিক্ট স্পোর্টস ক্যারাটে অ্যাসোসিয়েশনের তরফে জাতীয় স্তরের ওই প্রতিযোগিতায় সিনিয়র কুমিতে বিভাগে যোগ দিয়েছিল কৌশিক। সংগঠনের জেলা সম্পাদক তথা কৌশিকের ক্যারাটে-কোচ গৌরাঙ্গ পাল বলেন, “২০১০ সাল থেকে কৌশিককে ক্যারাটে শেখাচ্ছি। এর মধ্যেই প্রথম পর্যায়ের ব্ল্যাক বেল্ট খেতাব অর্জন করেছে কৌশিক।’’
গত ৪ জুন ৮টি রাউন্ডে ৮ জন প্রতিযোগীর সঙ্গে লড়াইয়ের পরে জয়ী হয় কৌশিক। এ বার এই জাতীয় স্তরের ক্যারাটে প্রতিযোগিতায় ৪০টি বিভাগ ছিল। তার মধ্যে একটি বিভাগ হল ‘কুমিতে’। ওই বিভাগে কৌশিক প্রথম হয়ে সোনা জিতেছে।
মঙ্গলবার দুপুরে রাধানগর গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, মাটির কঁুড়ে ঘরের সামনে অনুশীলন করছে কৌশিক। লাজুক কিশোরটি জানায়, ২০১০ সালে স্থানীয় সেবায়তন স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময়ে মেদিনীপুর ডিস্ট্রিক্ট স্পোর্টস ক্যারাটে অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। পরিবারিক সমস্যার কথা জেনে নিখরচায় প্রশিক্ষণ দিতে রাজি হয়ে যান সংস্থার সম্পাদক তথা মেদিনীপুরের বিশিষ্ট ক্যারাটে-কোচ গৌরাঙ্গ পাল। ওই সময় থেকে জেলা ক্যারাটে সংস্থার ঝাড়গ্রাম শাখায় ক্যারাটে শেখা শুরু হয় কৌশিকের। তারপর ২০১৪ সালে জেলা স্তরের ক্যারাটে প্রতিযোগিতায় অনুর্ধ্ব ১৫ কুমিতে বিভাগে প্রথম হয় কৌশিক। ওই বছরেই রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতায় কুমিতে বিভাগে তৃতীয় হয়ে ব্রোঞ্জ মেডেল জেতে। গত বছর দুর্গাপুরে সাউথ বেঙ্গল চ্যাম্পিয়ানশিপে অনুর্ধ্ব ১৬ কুমিতে বিভাগে প্রথম হয়ে সোনার মেডেল পায় কৌশিক। জাতীয় স্তরের সাফল্যের পরে আন্তর্জাতিক স্তরের প্রতিযোগিতায় সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এই কিশোরের। কৌশিকের কথায়, “গৌরাঙ্গ-স্যার সাহায্য না করলে আমার পক্ষে এত দূর সফল হওয়া সম্ভব ছিল না।’’