ভেষজ আবির। প্রতীকী চিত্র।
পাতা খসছে টুপটাপ। খালি ডালের শাল গাছ ভরে উঠবে নতুন পাতায়। বসন্ত এসে গিয়েছে যে! এবার বসন্ত উৎসব। আয়োজন সারা অরণ্যসুন্দরী ঝাড়গ্রামে। বছর-বছর আকর্ষণ বাড়ছে ঝাড়গ্রাম বসন্ত উৎসবের। পর্যটক আকর্ষণের জন্য প্রতি বছর বসন্ত উৎসব হয়। এ বছর থেকে ঝাড়গ্রাম ডিস্ট্রিক্ট হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে সম্মিলিত ভাবে হবে ‘রং পরব’। ঝাড়গ্রাম গ্রামীণের ফুলবেড়িয়ায় কুটুমবাড়ি হোমস্টে চত্বরে উৎসবে যোগ দেবেন পর্যটকেরা। ইতিমধ্যে ঝাড়গ্রামের সরকারি-বেসরকারি সব হোটেল ও হোমস্টে ৩-১০ মার্চ পর্যন্ত বুকিং হয়ে গিয়েছে।
এতদিন বিভিন্ন হোম স্টে ও হোটেলে দোল খেলা হত। কোথাও হত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। এ বছর একটিই অনুষ্ঠান হবে। অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন কর্মকার জানাচ্ছেন, দোলের দিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কুটুমবাড়ি চত্বরে দোল খেলা ও লোকসংস্কৃতির অনুষ্ঠান হবে। জঙ্গলমহলের পালা পার্বণের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উৎসবের নাম দেওয়া হয়েছে ‘রং পরব’। মধুসূদন বলেন, ‘‘সেখানে নানা খাবারের স্টল থাকবে। পর্যটকেরা সুলভ দরে খাবার কিনতে পারবেন। যাঁরা প্যাকেজে আসবেন, তাঁরা অগ্রিম জমা দিয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। সেক্ষেত্রে খাবারের দাম আগেই ধরে নেওয়া হবে। তবে এক হাজারের বেশি পর্যটককে রং পরবে জায়গা দেওয়া সম্ভব নয়।’’
জঙ্গলমহল উদ্যোগ ও আস্থা নামে দু’টি সংস্থা মিলিত ভাবে এ বছরও বসন্ত হলুদ উৎসব করবে। আয়োজক কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা উজ্জ্বল পাত্র বলছেন, ‘‘রবীন্দ্রপার্কে উৎসবে সবাই স্বাগত। তবে কেবলমাত্র ভেষজ আবির ও হলুদ গুঁড়ো দিয়ে দোল খেলা হবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হবে।’’ ঘোড়াধরা পার্কে ঝাড়গ্রাম জেলা বসন্ত উৎসব কমিটির উদ্যোগে তিন দিনের বসন্ত উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। কমিটির সভাপতি অজিত মাহাতো জানান, ৬ মার্চ সন্ধ্যায় নেড়া পোড়া ও লোকসংস্কৃতির অনুষ্ঠান দিয়ে উৎসব শুরু। দোলের দিন শোভাযাত্রা করে ঘোড়াধরা পার্কে শালগাছে আবির মাখিয়ে খেলা শুরু হবে। অভ্যাগতদের জন্য দুপুরে বিনামূল্যে নিরামিষ খাবারের ব্যবস্থা থাকবে। পরদিনও হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ভেষজ আবির উদ্যোক্তারা সরবরাহ করবেন। বাইরের আবির নিষিদ্ধ।
৪-৫ মার্চ শহরের তরুণতীর্থ প্রাঙ্গণে ‘ছন্দকের বসন্ত উৎসব’ হবে। আয়োজক ছন্দক নৃত্য সংস্থার প্রধান কোয়েল মিত্র বলছেন, ‘‘৪ মার্চ বৈকালিক আবির খেলা ও শোভাযাত্রা দিয়ে উৎসবের সূচনা। ৫ মার্চ বিকেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, দোল খেলা ও ভুরিভোজের ব্যবস্থা থাকছে। পর্যটকরাও উৎসবে স্বাগত।’’ ঝুমুর শিল্পী ইন্দ্রাণী মাহাতো বলছেন, ‘‘দোলের দিন ঝাড়গ্রাম শহরের চারটি বসন্ত উৎসবে অনুষ্ঠান করার আমন্ত্রণ পেয়েছি। ঘাটশিলাতেও অনুষ্ঠান করতে যাওয়ার কথা আছে।’’
বেলপাহাড়ি এলাকার হোম স্টে ও হোটেলে থাকা পর্যটকদের জন্য বসন্ত উৎসব হবে শিলদার রাধাচরণ বিদ্যামন্দির প্রাঙ্গণে। পলাশ সংস্থার এই উৎসবের নাম, ‘ফাগুনের নবীন আনন্দে’। ভেষজ আবির খেলার সঙ্গে হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দোলের দিন বসবে লালমাটির হাট। মহিলাদের তৈরি হস্তশিল্প, কারুশিল্প ও খাবারের স্টল থাকবে।
বসিরহাটের বাসিন্দা গৌরমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসবে আগে যেতাম। এখন তো বিশ্বভারতীর দোল নিয়ে দোলাচলের কথা শুনছি। তাই ঝাড়গ্রামে যাচ্ছি।’’ দমদমের দম্পতি অমিতাভ ও সোমা ঠাকুরতা জানাচ্ছেন, ঝাড়গ্রামের শাল সবুজের সমারোহে দোল বেশি টানে। তাই কয়েক বছর ধরে তাঁরা ঝাড়গ্রামে আসেন।