জেলা সম্মেলন উপলক্ষ্যে এসএফআইয়ের মিছিলে ছাত্রীরা। বুধবার গিধনিতে। নিজস্ব চিত্র।
রবিবারের ব্রিগেডে ডিওয়াইএফের সমাবেশের ভিড় নজর কেড়েছে। সেই আবহেই ঝাড়গ্রামে জেলা সম্মেলন করল সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই। ভিড় হল সেখানেও। লোকসভা ভোটের আগে যা দেখে উৎফুল্ল বাম শিবির। উল্লেখযোগ্য ভাবে সেখানে জোর দেওয়া হল জঙ্গলমহলে আদিবাসী ও কুড়মি বিভাজনের বিরুদ্ধে জনমত তৈরিতে।
আদিবাসী স্বীকৃতির দাবিতে বছর কয়েক ধরেই আন্দোলন চালাচ্ছে কুড়মিরা। সেই নিয়ে আদিবাসী-কুড়মি সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে। সেই আবহে এসএফআইয়ের মঞ্চ থেকে ওই বার্তা নিয়ে জঙ্গলমহলের রাজনীতিতে চর্চাও শুরু হয়েছে। এদিন সকালে মিছিলের পর গিধনির কমিউনিটি হলে সকাল ১১ টায় জেলা সম্মেলন শুরু হয়। ছিলেন এসএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি প্রতীকউর রহমান, রাজ্যের পত্রিকা সম্পাদক দীপ্তজিৎ দাস। সম্মেলনে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১৩৭ জন প্রতিনিধি এসেছিলেন। প্রতীকউর বলেন, ‘‘সারা রাজ্যে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের চেষ্টা চলছে। তাতে ইন্ধন দিচ্ছে রাজ্যের শাসক দল ও গেরুয়া শিবির। জঙ্গলমহলে আদিবাসী ও কুড়মিদের মধ্যেও বিভাজনের চেষ্টা হচ্ছে। উভয় সম্প্রদায়ের পড়ুয়াদের স্বার্থে আরও ঝাঁপিয়ে কাজ করতে হবে।’’ শাসকের দুর্নীতি, স্বজপোষণ, কাটমানির বিষয়ে নতুন প্রজন্মকে সচেতন করার লক্ষ্যে স্কুল-কলেজের চৌহদ্দির মধ্যে ঢোকার কথাও বলেন তিনি। প্রতীকউরের দাবি, ‘‘ডিওয়াইএফের বিগ্রেডের সমাবেশে তরুণ প্রজন্মের ভিড় প্রমাণ করেছে সর্বস্তরে ছাত্র সংগঠনও জাগছে।’’
বিদায়ী জেলা সম্পাদক মধুশ্রী মজুমদার সম্মেলনে ফের জেলা সম্পাদকের পদে পুনর্নিবাচিত হলেন। জেলা সভাপতি পদে পুনর্নিবাচিত হয়েছেন রজত ঘোষ। জেলায় ছাত্র সংগঠনকে ঘুরে দাঁড় করানোর জন্য সম্মেলনে বিদায়ী জেলা কমিটির নেতৃত্বের প্রশংসা করা হয়। বিদায়ী জেলা কমিটি ছিল ৩৯ জনের। এদিন সম্মেলনে ৪৫ জনের নতুন জেলা কমিটি গঠিত হল। কমিটিতে মধুশ্রী ও রজত এবং কয়েকজন বাদে বেশিরভাগই নতুন মুখ। তার মধ্যে আবার ৩৫ শতাংশ মহিলা ও জনজাতি সম্প্রদায়ের। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে এসএফআইয়ের দ্বিতীয় জেলা সম্মেলন থেকে উঠে আসেন মধুশ্রী মজুমদার। সেই প্রথমবার তিনি জেলা সম্পাদক হন। ২০২১-এ রজতও প্রথমবার জেলা সভাপতি হন। মধুশ্রী-রজত জুটির রসায়নেই মাত্র দু’বছর চার মাসের মধ্যে সংগঠনের ২২টি স্কুল ইউনিট, ছ’টি কলেজ ইউনিট ও ২১টি আঞ্চলিক ইউনিট গঠিত হয়েছে। এবার জেলা সম্মেলনের আগে ১২ টি লোকাল কমিটির সম্মেলন হয়েছে।
মধুশ্রী জানাচ্ছেন, এরপর বাকি তিনটি লোকাল কমিটির সম্মেলন হবে। এসএফআইয়ের মুখপত্র ‘ছাত্র সংগ্রাম’-এ আরও বেশি করে জঙ্গলমহলের আদিবাসী-মূলবাসী পড়ুয়াদের কথা তুলে ধরার জন্যও বিশেষ নজর দেওয়ার কথা বলেন রাজ্য নেতৃত্ব। এদিন সম্মলনে জেলার পত্রিকা আহ্বায়ক পদে নির্বাচিত হন মানিকপাড়া কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শুভঙ্কর খামরি।
রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের কয়েক বছরের মধ্যে ঝাড়গ্রাম জেলায় সংগঠনের সদস্য সংখ্যা তলানিতে ঠেকেছিল এই বাম ছাত্র সংগঠনের। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ক্রমে সদস্য সংখ্যা বেড়েছে। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে সংগঠনের সদস্য সংখ্যা বেড়ে হয়েছিল ৬,০২০ জন। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ঝাড়গ্রাম জেলায় আরও দু’হাজার সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যে এগোচ্ছে এসএফআই। এই মূহূর্তে সংগঠনের মোট সদস্যের প্রায় ৪৫.৮ শতাংশ আদিবাসী। এদিন সম্মেলনে রাজ্য নেতৃত্ব স্পষ্ট করে দেন, জঙ্গলমহলে আদিবাসী ও কুড়মি সম্প্রদায়ের পড়ুয়াদের স্বার্থে কাজ করতে হবে।