২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে ঝাড়গ্রাম জেলায় মাত্র ৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বামেরা। প্রতীকী ছবি।
পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণার দিনেই চমক দিতে চলেছে ঝাড়গ্রাম জেলা বামফ্রন্ট।
ঝাড়গ্রাম জেলায় ১৯টি জেলা পরিষদ আসন ও ২১০টি পঞ্চায়েত সমিতি আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবে বামেরা। ব্লক ভিত্তিক বামফ্রন্ট কমিটি গড়ে চলছে প্রস্তুতি। বামফ্রন্ট সূত্রে খবর, প্রার্থী করার ক্ষেত্রে দল ও সমস্ত শাখা সংগঠনের তরুণ সদস্যের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শাসক দল তৃণমূল ও প্রধান বিরোধী দল বিজেপিকে চাপে রাখতেই এবার এমন কৌশল নিয়েছে বামেরা।
২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদল হয়। তারপর ক্রমাগত ভোট কমতে থাকে বামেদের। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে ঝাড়গ্রাম জেলায় মাত্র ৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বামেরা। সেবার কেবলমাত্র গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের সাতমা গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল করেছিল সিপিএম। সূত্রের খবর, বিজেপির সমর্থনে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল করেছিল সিপিএম। বাদবাকি গুটিকয় গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে জয়ী হয়েছিলেন সিপিএম ও সিপিআইয়ের হাতে গোনা কয়েকজন প্রার্থী।
তারপরেও খারাপ ফল চলতেই থাকে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে জঙ্গলমহলের এই জেলার মাত্র ৫ শতাংশ ভোট বামেদের অনুকুলে গিয়েছিল। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে সেই ভোট কমে হয় মাত্র ৪.৫ শতাংশ। পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয় গত বছর ঝাড়গ্রাম পুরভোটে। সেখানে ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ১৩টি ওয়ার্ডে বামেরা প্রার্থী দিয়েছিল। ১ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিআইয়ের প্রার্থী ছবি দাস মল্লিক বিজয়ী হন। তবে পুরভোটে বামেদের প্রাপ্ত ভোট ছিল ২১ শতাংশ। এতেই উজ্জীবিত বাম শিবির এবার পঞ্চায়েত ভোটে ভাল ফল করার আশায় রয়েছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপকুমার সরকার বলছেন, ‘‘বামফ্রন্টগতভাবে আমাদের আলোচনা হয়েছে। ভোটের দিন ঘোষণা হলেই জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতি আসনগুলিতে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে।’’
সূত্রের খবর, জেলা পরিষদে গতবার একটি আসন শরিক সিপিআইকে ছাড়া হয়েছিল। এবার বেলিয়াবেড়া ব্লকের ওই আসনটি তপসিলি জাতি মহিলা সংরক্ষিত হয়েছে। তবে সিপিআইকে একটি আসন ছাড়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত পর্যায়ে আলোচনা চলছে। সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক দেবজ্যোতি ঘোষ বলছেন, ‘‘ব্লক ভিত্তিক কমিটি গড়ে বামফ্রন্টগত ভাবে প্রার্থী বাছাইয়ের আলোচনা চলছে। নির্বাচন ঘোষণা হলেই বামফ্রন্টগত ভাবে প্রার্থী তিলিকা ঘোষণা করা হবে।’’ তবে জেলার ১০০৭ টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের প্রার্থী অবশ্য পরে ঘোষণা করা হবে বলে বামফ্রন্ট সূত্রে জানা গিয়েছে।
গত বিধানসভা ভোটের পর থেকেই জেলায় নিরন্তর রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু করেছে বামেরা। প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে দুর্নীতির প্রতিবাদে ও বিভিন্ন পরিষেবার দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। অঞ্চল ভিত্তিক সভা ও মিছিলও হচ্ছে। শাখা সংগঠনগুলিরও কর্মসূচিও চলছে সমান্তরালভাবে। সূত্রের খবর, পঞ্চায়েতস্তরে আগে জনপ্রতিনিধি ছিলেন, এমন প্রাক্তন নেতা-নেত্রীদের পাশাপাশি নতুন স্বচ্ছ মুখদেরও এবার পঞ্চায়েত ভোটের ময়দানে নামানো হচ্ছে। সিপিএমের এক প্রবীণ নেতার কথায়, ‘‘আমাদের হারানোর কিছুই নেই। তাই নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রার্থীদের মাঠে নামানো হচ্ছে। আমাদের বিশ্বাস এবার বামেরা ভাল ফল করবে।’’