কলেজের সামনে জটলা। রয়েছে পুলিশও। —নিজস্ব চিত্র
কলেজে টিএমসিপির মিছিল। তাকে ঘিরে মুখোমুখি টিএমসিপি-এবিভিপি। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়ার বিবেকানন্দ শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ের এই ঘটনার সঙ্গে রাজ্যের অন্য কলেজে যুযুধান দুই ছাত্র সংগঠনের বিবাদের ছবির মধ্যে বিশেষ ফারাক নেই। কিন্তু ফারাকটা বোঝা গেল ঘটনার পর।
জেলা টিএমসিপি সূত্রের খবর, ঘটনার পর (আনুমানিক ৩০ মিনিট) এবিভিপির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু বারবার সাহায্য চেয়েও নাকি দেখা মেলেনি তৃণমূলের ব্লক নেতাদের। পরে জেলা তৃণমূল সভাপতি বিরবাহা সরেনের হস্তক্ষেপে যখন ব্লকের নেতার পৌঁছলেন তখন ঘটনার পর কেটে গিয়েছে প্রায় আড়াই ঘণ্টা।
‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির প্রচার ও ২৮ অগস্ট কলকাতায় সংগঠনের ছাত্র সমাবেশ উপলক্ষে কলেজে একটি প্রস্তুতি মিছিলের ডাক দিয়েছিলেন টিএমসিপি নেতৃত্ব। এবিভিপির অভিযোগ, মিছিলে পড়ুয়াদের জোর করে বার করে আনা হচ্ছিল। এর প্রতিবাদে টিএমসিপি-র মিছিল চলাকালীন বিক্ষোভ দেখান এবিভিপি-র সদস্যরা। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পড়ে দু’পক্ষ। টিএমসিপি-র মিছিল লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়ার অভিযোগ ওঠে। এই নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে শুরু হয় গোলমাল ও হাতাহাতি। গোলমালে উভয়পক্ষের কয়েকজন অল্পবিস্তর জখম হন। টিএমসিপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা কার্যকরী সভাপতি আর্য ঘোষ বলেন, ‘‘কোনও পড়ুয়াকেই জোর করে মিছিলে নিয়ে যাওয়া হয়নি। মিছিলটি কলেজের কাছাকাছি পৌঁছতেই হামলা চালায় এবিভিপি-র বহিরাগতরা। আমাদের কর্মী-সদস্যদের মারধর করা হয়।’’
টিএমসিপির এক জেলা নেতার অভিযোগ, ঘটনার কিছু পরেই বিজেপির লোকেরা লাঠিসোটা নিয়ে হাজির হয়েছিল। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘বারবার ফোন করা সত্ত্বেও ব্লক নেতারা আসেননি।’’ এবিভিপি-র কলেজ ইউনিটের সভাপতি বাপি দাসের অভিযোগ, ‘‘আর্য ঘোষ কলেজে ঢুকে জোর করে ছাত্রছাত্রীদের মিছিলে যেতে বাধ্য করে। বিষয়টি জানতে পেরেই আমরা প্রতিবাদ জানাই। উল্টে আর্যের দলবল আমাদের উপর চড়াও হয়ে মারধর করে। আমাদের কেউ লাঠি নিয়ে আক্রমণ করেনি।’’
এবিভিপি-র ‘বহিরাগত’দের গ্রেফতারের দাবিতে কলেজ-গেটের ভিতরে অবস্থান শুরু করে টিএমসিপি-র সদস্যরা। কলেজ সংলগ্ন রাস্তায় অবরোধ করে এবিভিপি। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। উভয় পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে পুলিশে নালিশ জানিয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষা উমা ভৌমিক এদিন কলেজের কাজে বিকাশ ভবনে গিয়েছিলেন। এবিভিপি-র সদস্যরা অধ্যক্ষার দফতরে গিয়ে স্মারকলিপি জমা দেয়। অধ্যক্ষা বলেন, ‘‘কলেজের ভিতরে কিছু হয়নি। স্বাভাবিক পঠন-পাঠনও হয়েছে। শুনেছি কোনও একটি ছাত্র সংগঠনের মিছিলে কলেজের কিছু পড়ুয়া গিয়েছিলেন।’’
কিন্তু কেন আড়াই ঘণ্টা পরে কলেজে পৌঁছলেন তৃণমূল নেতারা? জেলা তৃণমূল সভাপতি বিরবাহার মন্তব্য, ‘‘ছাত্র সংগঠন যে কলেজে মিছিল করবে তা ব্লক নেতৃত্ব জানতেন না। তাই পৌঁছতে দেরি হয়েছে।’’ জেলা টিএমসিপি নেতৃত্বের বক্তব্য, কলেজের কর্মসূচি এতটাই স্থানীয় যে, তা সবসময় ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে জানানো হয় না।
লোকসভা নির্বাচনেরপর মানিকপাড়া কলেজে এবিভিপি-র ইউনিট খোলা হয়েছে। এই কলেজে নির্বাচিত ছাত্র সংসদ নেই। কলেজে টিএমসিপি-র ইউনিটও নেই।
জনসংযোগ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন নেত্রী। বিভিন্ন শাখা সংগঠনের প্রতি তাঁর পরামর্শ, আন্দোলনের মধ্যে থাকতে হবে। জেলা টিএমসিপির এক নেতা বললেন, ‘‘কঠিন সময়ে নেতাদের পাশে পেলাম না। এটাও কি দিদিকেই বলতে হবে?’’