জামবনির কানিমহুলি গ্রামে পতাকা উত্তোলন কর্মসূচি। নিজস্ব চিত্র Sourced by the ABP
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জঙ্গলমহল সফরের আগে হলুদ পতাকায় মুখ ঢেকেছে পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের বহু গ্রাম। চলছে ফিসফিসানি- তিনি এসে কুড়মিদের জনজাতি তালিকাভুক্তির সপক্ষে নাকি বার্তা দেবেন। পঞ্চায়েত ভোটের আগে নব জোয়ার কর্মসূচিতে জেলায় এসে অভিষেক কুড়মিদের ক্ষোভ প্রশমনে সদর্থক কিছু করুন, এমনটা চাইছেন তৃণমূলের কুড়মি সম্প্রদায়ের নেতারা। না হলে কুড়মি আন্দোলন যে ভাবে দানা বাঁধছে তাতে এই 'আবেগ' সামাল দেওয়া মুশকিল হয়ে পড়বে।
অভিষেকের যাত্রাপথ ঠিক করতেও হিমশিম খাচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কোনপথে হবে কর্মসূচি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। কারণ কুড়মি অধ্যুষিত স্পর্শকাতর এলাকাগুলি দিয়ে অভি-যাত্রা কতটা মসৃণ হবে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে শাসকদলের অন্দরে।
জনজাতি তালিকাভুক্তির দাবিতে কুড়মিদের জাতিসত্তার আন্দোলন ক্রমে সংগঠিত হচ্ছে। রাজ্যের উপযুক্ত সক্রিয়তার অভাবের অভিযোগ তুলেছেন কুড়মি সামাজিক নেতারা। কুড়মি অধ্যুষিত গ্রামগুলিতে রাজনৈতিক লোকজনের ঢোকা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দেওয়ালে-দেওয়ালে কেবল লেখা কুড়মি দেবতার জয়ধ্বনি ‘জয় গরাম’। সব মিলিয়ে জঙ্গলমহলের পরিস্থিতি বদলানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন গোয়েন্দারাও।
এই আবহেই চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে নব জোয়ার কর্মসূচিতে ঝাড়গ্রাম জেলায় আসার কথা অভিষেকের। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের কর্মসূচি সফল করতে জোর প্রস্তুতি শুরু করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। চলছে দফায় দফায় বৈঠক। আবার আশঙ্কাও তৈরি হচ্ছে। অভিষেকের কর্মসূচি চলাকালীন কুড়মিরা কী অবস্থান নেন সে নিয়েও আশঙ্কায় রয়েছেন তৃণমূলের একাংশ। কারণ, কুড়মি সামাজির সংগঠনগুলির মিলিত 'ঘাঘর ঘেরা কেন্দ্রীয় কমিটি'র নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, কুড়মি গ্রামে জোর করে রাজনৈতিক কর্মসূচি হলে মানুষ সংযম হারাবেন। ‘মরদ ঢুঁড়া’ কর্মসূচির মঞ্চে রাজনৈতিক দল থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা ঘোষণা করছেন কুড়মিদের একাংশ। ঝাড়গ্রামের এক প্রবীণ তৃণমূল নেতা বলছেন, ‘‘সম্ভবত ২৫ তারিখ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জেলায় আসতে পারেন। কিন্তু কুড়মি সংগঠনগুলি কী করবেন সেটা স্পষ্ট নয়। কারণ, গ্রামগঞ্জে চুপিসাড়ে চলছে- কুড়মিদের জনজাতি তালিকাভুক্তির জন্য রাজ্য সরকারের তরফে অভিষেক নাকি উপযুক্ত আশ্বাস দেবেন। কিন্তু আমাদের কাছে এমন খবর নেই।’’
কুড়মি সমাজের (পশ্চিমবঙ্গ) সভাপতি রাজেশ মাহাতো বলছেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জঙ্গলমহলের কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ। শাসকদলের শীর্ষনেতা হওয়ার সুবাদে তিনি দলের কর্মসূচিতে আসছেন। তবে কুড়মিদের দাবি নিয়ে অবিলম্বে শান্তিপূর্ণ সমাধান না হলে জঙ্গলমহলের মানুষ সংযম হারাবেন। তার দায় আমাদের নয়।’’ আদিবাসী জনজাতি কুড়মি সমাজের রাজ্য সভাপতি শিবাজি মাহাতোর হুঁশিয়ারি, ‘‘কুড়মি সমাজের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর আত্মপরিচয়ের মর্যাদা দানের বিষয়ে রাজ্যের গড়িমসি চলতে থাকলে শাসকদলের শীর্ষ নেতাদেরও আমরা ঘাঘর ঘেরা করব।’’
গোয়েন্দা সূত্রের আশঙ্কা, জেলায় অভিষেক এলে কুড়মিদের একাংশ পাল্টা কর্মসূচি নিতে পারেন। ইতিমধ্যে লালগড়ে দলীয় কর্মসূচির পথে কুড়মিদের বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। ফলে আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে। অভিষেকের যাত্রাপথের সম্ভাব্য রুট ও বিকল্প রুট তৈরির জন্য দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে। থাকবে কড়া পুলিশি নিরাপত্তাও। ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু বলছেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মসূচির যাত্রাপথ ঠিক করার প্রক্রিয়া চলছে। এখনও কিছু চূড়ান্ত হয়নি। দিনও চূড়ান্ত হয়নি।’’
পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়েও কুড়মিদের প্রচার চলছে। আবগা কুড়মি সেনা ইতিমধিযে গোয়ালতোড়ের কড়াসাই ও দলদলিতে সাংগঠনিক সভা করে প্রচারের পরবর্তী কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছে। কুড়মি সেনা ও কুড়মি সমাজের পক্ষ থেকে পিংবনি, পাথরপাড়া, জিরাপাড়া অঞ্চলের গ্রামে গ্রামে নিজেদের দাবি আদায়ে দেওয়াল লিখন, পতাকা বাঁধা সহ মুখে মুখে প্রচার করছে। এই দুই সংগঠনের নেতা উজ্জ্বল মাহাতো ও আশিস মাহাতোরা বলেন, ‘‘যতদিন না আমাদের দাবি মেটানো হচ্ছে ততদিন এই প্রচার চলবে। ঘাঘর ঘেরা কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকেও কুড়মি অধ্যুষিত এলাকায় প্রচার চালানো হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।’’