ভোটের আগে রাজ্যস্তরের জঙ্গলমহল উৎসবে এ বার চমকের পর চমক। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ আয়োজিত উৎসব প্রাঙ্গণ জুড়ে আটটি স্তম্ভে থাকছে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দেওয়া উৎসবের সূচি। তার মধ্যে দু’টি ঘুরন্ত সূচি (রোটেটার)। সেই সঙ্গে এই প্রথমবার উৎসবের মূল প্রবেশ পথে দর্শকদের স্বাগত জানাবে দু’টি ‘রোবোটিক ধামসা প্লেয়ার’। সর্বত্র কোভিড-১৯ বিধি কার্যকরেও সব ব্যবস্থা থাকছে।
আজ, বুধবার বিকেল তিনটেয় অরণ্যশহরের ননীবালা স্কুল মাঠে শুরু হচ্ছে আটদিনের উৎসব। পুরুলিয়ায় ভার্চুয়াল প্রশাসনিকসভা থেকে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরুলিয়া থেকে ঝাড়গ্রামের সার্কিট হাউস-সহ ৩৩টি প্রকল্পেরও উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। দু’টি প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন। উৎসব প্রাঙ্গণে পুরুলিয়ার সভা ‘লাইভ’ সম্প্রচারের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
ঝাড়গ্রামে মঞ্চে ধামসা বাজিয়ে উৎসবের সূচনা করবেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তবে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো অসুস্থ হয়ে কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি। ফলে তাঁর হাজির থাকার সম্ভাবনা কার্যত নেই। তবে মঞ্চে থাকবেন পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান দুলাল মুর্মু-সহ জেলার জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক আধিকারিকেরা।
করোনা কালে উৎসব হলেও জাঁকজমকে কোনও খামতি থাকছে না। সর্বত্র থাকছে রাজ্য সরকারের উন্নয়নের ফলাও প্রচার। উৎসবের ক’দিন প্রতি রাতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাতঙ্গিনী হাজরা ও অলচিকির স্রষ্টা পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর জীবনী ভিত্তিক তিনটি লেজ়ার শো দেখানো হবে। প্রতিটি শো গড়ে দশ মিনিটের। সূত্রের খবর, প্রথমে ঠিক ছিল চুয়াড় বিদ্রোহের শহিদ রঘুনাথ মাহাতোকে নিয়ে লেজ়ার শো হবে। কিন্তু সম্প্রতি ভূমিজদের সংগঠন দাবি করেছে, চুয়াড় বিদ্রোহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল ভূমিজ সম্প্রদায়ের রঘুনাথ সিংয়ের। প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, এই বিতর্কের জেরেই শেষ মুহূর্তে রঘুনাথ মাহাতোর পরিবর্তে অলচিকির স্রষ্টা রঘুনাথ মুর্মুকে নিয়ে লেজ়ার শো দেখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
উৎসবের জমকালো মূল মঞ্চটি দু’হাজার বর্গফুটের। লাগোয়া দেড় হাজার বর্গফুটের অ্যান্টিচেম্বার ও গ্রিন রুম থাকছে শিল্পীদের জন্য। উৎসব প্রাঙ্গণে সরকারি ৪২টি স্টলে বিভিন্ন দফতরের উন্নয়ন-কাজের সচিত্র খতিয়ান ও প্রদর্শনী থাকছে। এ ছাড়া ফুডকোর্টে থাকছে ১৯টি স্টল। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার পাঁচটি প্যাভেলিয়ন হয়েছে। খড়ের ছাউনি দেওয়া সুদৃশ্য ১৪,৩০০ বর্গফুটের কারিগরি হাটে হস্তশিল্পী ও কারুশিল্পীদের ১৪০টি বিপণন কেন্দ্র থাকবে। পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, সব মিলিয়ে খরচ হচ্ছে প্রায় চার কোটি টাকা।
উৎসবের পরিকাঠামো তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত কলকাতার একটি সংস্থার অন্যতম কর্ণধার রাতুল বিশ্বাস বলেন, ‘‘এ বার উৎসবের নতুন আকর্ষণ ‘রোবোটিক ধামসা প্লেয়ার’। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে দু’জন বাদকের মডেল অনবরত ধামসা বাজিয়ে স্বাগত জানাবে দর্শকদের।’’ উৎসবে যোগ দেবে পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার সাড়ে সাতশো লোক-গোষ্ঠীর কয়েক হাজার লোকশিল্পী। কলকাতার শিল্পীরাও আসবেন। ঝাড়গ্রামের ভূমিপুত্র প্রয়াত লোকশিল্পী অংশুমান রায়ের ছেলে ভাস্কর রায়ের অনুষ্ঠান রয়েছে শুক্রবার রাতে। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান দুলাল মুর্মু বলেন, ‘‘জঙ্গলমহলের বিভিন্ন জনজাতি ও তাঁদের সংস্কৃতির প্রসারের লক্ষ্যেই এই বার্ষিক উৎসব। জঙ্গলমহলের সামগ্রিক উন্নয়নের প্রতিফলনও পাওয়া যাবে উৎসবে।’’