ঝাড়গ্রাম উৎসব। — ফাইল চিত্র।
ভাঁড়ারে ঘাটতি! ফলে এ বার আর হচ্ছে না রাজ্যস্তরের জঙ্গলমহল উৎসব। জেলায় অনুষ্ঠান হলেও বরাদ্দ কমে যাওয়ায় ব্লকস্তরের অনুষ্ঠানও বাতিল হয়েছে।
জঙ্গলমহলের লুপ্তপ্রায় লোকশিল্পীদের তুলে ধরতেই রাজ্য সরকার জঙ্গলমহল উৎসব শুরু করেছিল। গত ৮ বছর ধরে ঘটা করে ঝাড়গ্রামে রাজ্যস্তরের জঙ্গলমহল উৎসব হয়েছে। করোনাকালেও ছেদ পড়েনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাধের সেই উৎসবে প্রতিবারই বিভিন্ন লোকশিল্পীরা অংশ নেন। তবে প্রশাসন সূত্রে খবর, এ বার খরচ এক ধাক্কায় এক চতুর্থাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী সন্ধ্যারানী টুডু মানছেন, ‘‘এবার ঝাড়গ্রামে রাজ্যস্তরের বড় করে জঙ্গলমহল উৎসব হবে না। জেলাভিত্তিক ছোট করে তিনদিন ধরে অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে। তবে জেলাস্তরের এখন মিটিং হয়নি।’’ ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক সুনীল আগরওয়ালের বক্তব্য, ‘‘এ বার জঙ্গলমহল উৎসব ছোট করে হবে অফিসার্স ক্লাবের মাঠে হবে। এ বার ব্লকে অনুষ্ঠান হবে না।’’
পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতর ও পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের উদ্যোগে প্রত্যেক বছর জঙ্গলমহল রাজ্যস্তরীয় উৎসব ঝাড়গ্রামে হত। এ জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ হত। ২০২১ সালে করোনার সময় ৮ দিন ধরে জঙ্গলমহল উৎসব হয়েছিল। সে বার ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম ও পশ্চিম বর্ধমান— এই পাঁচটি জেলার সাড়ে সাতশোরও বেশি লোকসংস্কৃতি দলের প্রায় ৮ হাজার লোকশিল্পী যোগ দিয়েছিলেন। চাং, রণ-পা, পাতা, পাইক, ভাদু, টুসু, ঝুমুর, সাড়পা, নাটুয়া, বাহা, ভুয়াং, ছৌ, ঘোড়া নাচ, বাউল গান-সহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছিল। গত বছরও করোনা বিধি মেনে ১৭থেকে ১৯ জানুয়ারি জঙ্গলমহল উৎসব হয়েছিল। খরচ হয়েছিল প্রায় এক কোটি টাকা।
এ ক’বছর ধরে উৎসব প্রাঙ্গণের কারিগরি হাটে পশ্চিমাঞ্চলের হস্তশিল্পী ও কারুশিল্পীদের তৈরি সামগ্রী বিক্রি হত। লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যবসা হত। রাজ্যস্তরের আগে প্রতিটি ব্লকে অনুষ্ঠান হত। কিন্তু এ বার বরাদ্দ কমে যাওয়ায় ব্লকস্তরের অনুষ্ঠানও হবে না। প্রশাসন সূত্রে খবর, চলতি বছরে ঝাড়গ্রাম জেলায় জঙ্গলমহল উৎসবের জন্য ২০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ঝাড়গ্রাম শহরে অফিসার্স ক্লাবের মাঠে আগামী ১৮ থেকে ২০ জানুয়ারি তিনদিন ধরে উৎসব হবে। আজ, মঙ্গলবার জেলাস্তরের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, এ বার জঙ্গলমহল উৎসব ঝাড়গ্রামের পাশাপাশি বেশ কিছু জেলাতেও ছোট করেই হবে।
স্বভাবতই হতাশ শিল্পীরা। ঝাড়গ্রামের ঝুমুর শিল্পী ইন্দ্রাণী মাহাতো বলেন, ‘‘জঙ্গলমহল উৎসবে জঙ্গলমহলের লোক-আঙ্গিক প্রকাশ পেত। বিভিন্ন জনজাতি তাদের সংস্কৃতি তুলে ধরত। উৎসব ছোট হয়ে গেলে প্রকাশ করার জায়গা সীমিত হয়ে যাবে। জঙ্গলমহলের শিল্পীদের কলকাতার বড় মঞ্চে যাওয়ার সুযোগ হয় না। এই উৎসবের দিকেই তাকিয়ে থাকেন তাঁরা।’’