আগামী বৈশাখ মাসে অক্ষয় তৃতীয়ার দিন উদ্বোধন হতে চলেছে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের। বুধবার দিঘায় গিয়ে এ কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
২০১৯ সালে দিঘায় গিয়ে ঘুরতে ঘুরতেই জগন্নাথ মন্দির তৈরির করার কথা ঘোষণা করেছিলেন মমতা। তার পরেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল, পুরীর মন্দিরের আদলেই সৈকত শহরে গড়ে তোলা হবে জগন্নাথ মন্দির। উচ্চতাও পুরীর মন্দিরের সমান হবে।
মন্দির নির্মাণের জন্য জায়গার সন্ধান নিজেই করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। শেষমেশ ওল্ড দিঘা থেকে নিউ দিঘা যাওয়ার পথে দিঘা উন্নয়ন পর্ষদের হাতে থাকা ২০ একর জায়গা মন্দির নির্মাণের জন্য বেছে নেওয়া হয়।
২০১৯ সালে মুখ্যমন্ত্রী মন্দির তৈরির ঘোষণা করলেও কোভিড পরিস্থিতির কারণে নির্মাণকাজ শুরু হতে দেরি হয়েছিল। মন্দির তৈরির সমস্ত খরচ করেছে রাজ্য সরকারই।
সরকারি সূত্রে খবর, মন্দিরের ৯০ শতাংশ কাজ হয়ে গিয়েছে। তার জন্য এখনও পর্যন্ত প্রায় ২৫০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। বাকি কাজ আগামী তিন মাসের মধ্যে শেষ হবে।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, পুরোহিতদের পরামর্শ মেনে ৩০ এপ্রিল, অক্ষয় তৃতীয়ার দিনটিকে মন্দির উদ্বোধনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। এই মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটনের প্রস্তুতি হিসাবে হোমযজ্ঞ শুরু হবে ২৯ এপ্রিল থেকে। সেই অনুষ্ঠানে থাকার কথা মুখ্যমন্ত্রীর।
দিঘার জগন্নাথধামে তৈরি হয়েছে ভোগ ঘর, স্টোর রুম, রেস্ট রুম, পুজোর ডালা ঘর। মন্দির পরিচালনার জন্য একটি ট্রাস্টি বোর্ড (অছি পরিষদ) তৈরি হবে রাজ্যের মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে।
ওই কমিটিতে থাকবেন পুরীর মন্দির থেকে চার জন, ইসকনের পাঁচ জন সনাতনী প্রতিনিধি এবং স্থানীয় পুরোহিতদের চার জন। এ ছাড়াও পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, হিডকোর প্রতিনিধিও অছি পরিষদে থাকবেন।
সরকারি সূত্রে খবর, জগন্নাথধামে প্রশাসনিক নজরদারির জন্য মন্দির সংলগ্ন জেলা পরিষদের নবনির্মিত ভবনটিকে অধিগ্রহণ করা হচ্ছে।
প্রশাসনিক ভবনে থাকবে একটি অতিরিক্ত পুলিশ পোস্ট। থাকবে একটি চিকিৎসাকেন্দ্র এবং দমকলের দফতর।
এই জগন্নাথ মন্দিরের উপর নজরদারির জন্য এক জন অতিরিক্ত জেলাশাসক (এডিএম)-কে নোডাল অফিসার হিসেবে নিয়োগ করা হবে।
জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার মার্বেলের মূর্তি তৈরি হয়ে গিয়েছে। এখন নিমকাঠের মূর্তিগুলি তৈরি হচ্ছে। এই নিমকাঠের মূর্তি সামনে রেখেই পুজো হবে।
জগন্নাথধাম ছাড়াও থাকবে স্বর্গদ্বার, মা বিমলা (লক্ষ্মীমাতা) মন্দির, রাধাকৃষ্ণ মন্দির। মূল প্রবেশপথের নাম হবে ‘চৈতন্যদ্বার জগন্নাথধাম’। এখানে চৈতন্যদেবের মূর্তি ও চৈতন্যদেবের অন্তর্ধান দৃশ্য তুলে ধরা হবে।
এখানেও পুরীর মন্দিরের আদলে প্রতি দিন ধ্বজা তোলা হবে। এ জন্য পুরী থেকে বংশানুক্রমে ধ্বজাবহন করে আসা পরিবারগুলি থেকে তিন-চার জনকে আনায় উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য।
ধ্বজা বহনের জন্য মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই পুরীর মন্দিরের ছোট দয়িতাপতি রাজেশের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসকের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
দিঘার জগন্নাথধামের সামনে পুরীর মতো খাজা, কালীঘাটের মতো প্যাঁড়া, গুঁজিয়া-সহ পুজোর নানা সামগ্রী বিক্রির ব্যবস্থা থাকবে। এই ব্যবসায় স্থানীয় সনাতনীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলেই সূত্রের খবর।
সরকারি সূত্রে খবর, এ বার প্রথম বার দিঘার জগন্নাথধামে রথযাত্রার সূচনা করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী।
পুরীর আদলে একটি সোনার ঝাড়ুও ব্যবহার হবে মন্দির প্রাঙ্গণ পরিষ্কার জন্য। সেই ঝাড়ুর হাতলটি হবে চন্দন কাঠে তৈরি। ওই সোনার ঝাড়ুর জন্য মুখ্যমন্ত্রী নিজে পাঁচ লক্ষ টাকা দেবেন বলে জানিয়েছেন।
মন্দিরের পাশাপাশি সমুদ্রপারে ঘাট তৈরি হবে। রথ রাখার জায়গাও আলাদা করে তৈরি করে দেবে হিডকো।
মূল মন্দির চত্বরের মধ্যে থাকবে পুরোহিতদের থাকার ব্যবস্থা। যেখানে এক একটি ঘরে তিন-চারটি করে শয্যা থাকবে। পর্যটকদের জন্য আপাতত মন্দির চত্বরে কোনও অতিথিশালা থাকছে না। মন্দিরের সামনের অতিথিশালাটিই হবে মূল প্রশাসনিক ভবন। মন্দির দেখভালের সমস্ত কাজ সেখান থেকেই সম্পন্ন হবে।
মন্দিরের সামনের অতিথিশালাটিই হবে মূল প্রশাসনিক ভবন। মন্দির দেখভালের সমস্ত কাজ সেখান থেকেই সম্পন্ন হবে।