এ বার হারের হ্যাটট্রিক না কি, ঘুরছে প্রশ্ন

এ বার কি দাদার হ্যাটট্রিক হবে নাকি!— এটাই এখন প্রশ্ন শাসকদলের একাংশের। জয়ের হ্যাটট্রিক নয়, হারের। বিরোধী প্রার্থীকে কটাক্ষ নয়। নিজের দলের প্রার্থীকেই বিঁধছেন অনেকে। গত দু’বার ভোটে হারা তৃণমূল প্রার্থী বিক্রম প্রধান অবশ্য আশাবাদী, ‘‘লোকসভা ভোটের থেকেও বেশি ভোট পাব এ বার। হারবে শুধুই বিরোধীরা।’’

Advertisement

অমিত করমহাপাত্র

দাঁদন শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৫২
Share:

এ বার কি দাদার হ্যাটট্রিক হবে নাকি!— এটাই এখন প্রশ্ন শাসকদলের একাংশের।

Advertisement

জয়ের হ্যাটট্রিক নয়, হারের। বিরোধী প্রার্থীকে কটাক্ষ নয়। নিজের দলের প্রার্থীকেই বিঁধছেন অনেকে। গত দু’বার ভোটে হারা তৃণমূল প্রার্থী বিক্রম প্রধান অবশ্য আশাবাদী, ‘‘লোকসভা ভোটের থেকেও বেশি ভোট পাব এ বার। হারবে শুধুই বিরোধীরা।’’

১৯৮২ সাল থেকেই দাঁতন বিধানসভা কেন্দ্রটি সিপিআইয়ের দখলে। ২০১১ সালে পরিবর্তনের ছোঁয়াও লাগেনি এখানে। পশ্চিম মেদিনীপুরের দক্ষিণ প্রান্তে ওড়িশা সীমানা ঘেঁষা দাঁতনে এ বার বাম, তৃণমূল— দু’দলই প্রার্থী
পরিবর্তন করেছে।

Advertisement

বিদায়ী বিধায়ক অরুণ মহাপাত্রের বয়স প্রায় ৭৫। তাই এ বার আর প্রার্থী হতে চাননি তিনি। সিপিআই প্রার্থী করেছে প্রাক্তন বিধায়ক রণজিৎ পাত্রর ছেলে শিশির কুমার পাত্রকে। রণজিৎবাবু ১৯৯২-৯৬ সালে পুরনো দাঁতনের বিধায়ক ছিলেন। মেয়াদ পুরণের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হয়। অন্য দিকে ২০০১ ও ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পুরনো দাঁতন কেন্দ্রেই তৃণমূল প্রার্থী ছিলেন বিক্রমবাবু। দু’বারই তিনি হারেন। ২০১১ সালে আসন পুনর্বিন্যাসের পর নতুন করে তৈরি হয় দাঁতন কেন্দ্রটি। দাঁতন-২ ও মোহনপুর ব্লক নিয়ে গঠিত হয় দাঁতন বিধানসভা। দাঁতন-১ ব্লকটি চলে যায় কেশিয়াড়ি বিধানসভার আওতায়। পরিবর্তনের বছরেই তৃণমূল তাদের প্রার্থী বদল করে। সে বারও হারেন তৃণমূল প্রার্থী শৈবাল গিরি। কিন্তু এ বার ফের দাঁড়িয়েছেন বিক্রম প্রধান। আর তা নিয়ে দলের ভিতরে গোলমালও কম নয়। দলীয় কোন্দল সামলে ভোট একত্র করা যেমন বিক্রমবাবুর কাছে চ্যালেঞ্জ, তেমনি রাজ্য রাজনীতির পট পরিবর্তনের পরে সিপিআই ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়া কর্মী সমর্থকদের দলে ফিরিয়ে আসন ধরে রাখাটা চ্যালেঞ্জ
শিশিরবাবুর কাছেও।

২০১১ সালের তুলনায় এই কেন্দ্রে তৃণমূলের সংগঠন মজবুত হয়েছে। তাদের জয়ের পথে কাঁটাও রয়েছে একাধিক। প্রথমত দলীয় কোন্দল। দ্বিতীয়ত প্রার্থীর বহিরাগত হওয়ার প্রশ্ন। সিপিআইয়ের শিশিরবাবু এবং বিজেপি-র প্রার্থী শক্তিপদ নায়ক মোহনপুরের বাসিন্দা। তাই স্থানীয় আবেগ ভাবাচ্ছে তৃণমূলকে। সে সব ঢাকতে বাম আমলের অনুন্নয়নের উপরই প্রচারের আলো ফেলার চেষ্টা করছে তারা। প্রথমত, এই কেন্দ্র থেকেই জিতে কুড়ি বছরেরও বেশি মন্ত্রী ছিলেন সিপিআইয়ের দুই বিধায়ক— কানাই ভৌমিক এবং নন্দগোপাল ভট্টাচার্য। তা ছাড়া দাঁতন-২ ব্লকের উন্নয়ন নিয়েও সরব তৃণমূল। কারণ আসন পুনর্বিন্যাসের আগে দাঁতন-২ ব্লকটি ছিল নারায়ণগড় বিধানসভার অধীন। সেখান থেকে একটানা মন্ত্রী ছিলেন সূর্যকান্ত মিশ্র। তাই এতজন বাম মন্ত্রী এলাকার উন্নয়নে কতটুকু করতে পেরেছেন তা দিয়েই বামেদের বিঁধছে বর্তমান শাসকদল।

কিন্তু তাতেও সংশয় কাটেনি দলের অন্দরে। তৃণমূলেরই এক স্থানীয় নেতা গোপনে বলে বসলেন, “বাম বিরোধিতা আর উন্নয়নের আশ্বাস— এ টুকুই আমাদের সম্বল। তার উপর সারদা, নারদ— দলের ভাবমূর্তি তলানিতে ঠেকেছে। এই সব প্রশ্নে সচেতন মানুষ আমাদের বিপক্ষে গেলে দলনেত্রীর স্নেহের ‘বঙ্কিম’(প্রার্থী বিক্রমকে এ নামে ডেকে থাকেন দলনেত্রী)-এর জয়ের রাস্তা বঙ্কিমই হবে।” তৃণমূলের সাধারণ কর্মীরাও বলছেন, ভোট যত এগিয়ে আসছে পরিস্থিতি ততই ঘোরালো হয়ে উঠছে। তাঁদের মতে গত পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটের মতো এ বার ‘বঙ্কিম’ পথে ভোট আদায় করা সহজ হবে না।

বর্তমানে দাঁতন বিধানসভা কেন্দ্রের আওতায় রয়েছে দাঁতন ২ ব্লকের সাতটি, মোহনপুর ব্লকের পাঁচটি ও দাঁতন ১ ব্লকের একটি পঞ্চায়েত। বিধানসভাটি বামেদের দখলে থাকলেও এই তেরোটি পঞ্চায়েত ও তিনটি পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূলের দখলে। ২০১১ বিধানসভা ভোটে সিপিআই জিতেছিল ৪৬৫০ ভোটে। ৪৯.৩৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বামেরা, কংগ্রেস-তৃণমূল জোট ৪৬.৪৫ শতাংশ ও বিজেপি ২.৪৪ শতাশ ভোট পেয়েছিল। ২০১৪ লোকসভা ভোটে তৃণমূল কিন্তু এই কেন্দ্রে এগিয়েছিল ৩০ হাজার ৪২৪ ভোটে। তৃণমূল ৫১.৩০ শতাংশ ও সিপিআই ৩৩.২৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল।

উন্নয়ন নিয়ে বাম-তৃণমূল চাপানউতোরের মাঝে বিজেপি প্রার্থী শক্তিপদ নায়ক বলছেন, “কেউই উন্নয়ন করতে পারেনি। ক্ষোভে ফুঁসছেন এলাকাবাসী। এতদিনের অনুন্নয়নের বিচার করবেন মানুষই।’’

তৃণমূল কর্মীদের একাংশ আশঙ্কা করছেন, বিক্রমবাবুর এ বার হারের হ্যাটট্রিক হবে। যদিও বিক্রমবাবু আত্মবিশ্বাসের সুরেই বলছেন, “দলে কোনও কোন্দল নেই। বামেদের অনুন্নয়ন নাম আমাদের উন্নয়ন ছাড়া কোনও ইস্যু নেই। বিরোধীরা হেরেই বসে আছে। আমি লোকসভা ভোটের থেকেও বেশি ভোটে জিতব।” আত্মবিশ্বাসী শিশিরবাবুও। তিনি বলছেন, “ভোটে তৃণমূলের সন্ত্রাস মানুষ রুখে দেবেন। তাতেই আমাদের জয় নিশ্চিত হবে।”

সংখ্যাতত্ত্বের হিসাবে লাল জমির উপর সবুজ ঘাস ছেয়ে গিয়েছে অনেকটাই। কিন্তু ভোটের মুখে নানা ইস্যুর তাপে তা দ্রুত শুকোতেও শুরু করেছে। রাজনৈতিক নেতাদের একাংশ মনে করছেন প্রার্থীকে মেনে নিতে না পারায় দলের অনেক নেতা-কর্মীই সে ঘাস ছেঁটে ফেলার ব্যবস্থাও করে ফেলেছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement