—প্রতীকী চিত্র।
নিয়ম পুরেটাই রয়েছে খাতায়-কলমে। হাসপাতালের সঙ্গে কোনও মৌ সই হয়নি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের। এমনকি স্বাস্থ্য দফতরও এই মর্মে কোনও নির্দেশও দেয়নি। তা সত্ত্বেও ওই বেসরকারি কলেজের নার্সিং পাঠ্যক্রমের ছাত্রছাত্রীরা দিব্যি প্রকাশ্যে 'ইন্টার্নশিপ' চালিয়ে যাচ্ছেন সরকারি হাসপাতালে!
এই ভাবে নিয়ম ভেঙে বহিরাগতরা হাসপাতালে রোগীদের পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে দেখেও কাঁথি মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ। কাঁথি মহকুমা হাসপাতালের ভিতরের একটি ভিডিও (যার সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার পত্রিকা) সম্প্রতি সমাজ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। চিকিৎসকের সাদা পোশাক পরা এক যুবককে হাসপাতাল চত্বরের ভেতরে ঢুকে চিকিৎসার বিভিন্ন রকম দায়িত্ব সামলাতে দেখা গিয়েছে। এমনকি হাসপাতালের খাতায় সই করতেও দেখা গিয়েছে।
জানা গিয়েছে, যুবকের নাম সৈয়দ ফেরদৌস। তিনি হাসপাতালেরই এক চিকিৎসকের ভাইপো। হাসপাতালের কেউ না হওয়া সত্ত্বেও সরকারি হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে তিনি কী করে ডাক্তারের পোশাকে রোগীদের পরিষেবা দিচ্ছেন? কী করে সরকারি খাতায় সই করছেন? উত্তর মেলেনি। কাঁথি মহকুমা হাসপাতালের সুপারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর।
বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিতে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ওই যুবক কাঁথি-৩ ব্লকের ‘দইসাই এজি চার্চ ইন্সটিটিউট অ্যান্ড হেল্থ ইনস্টিটিউট’ নামে একটি বেসরকারি কলেজের নার্সিং পাঠ্যক্রমের পড়ুয়া। ওই পাঠ্যক্রমটি রাজ্য সরকার স্বীকৃত নয়। অথচ, কাঁথি মহকুমা হাসপাতাল-সহ একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠানে এখানকার ছাত্রছাত্রীদের হাতেকলমে কাজ শেখার সুযোগ রয়েছে বলে ওই প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে প্রচার করা হয়েছে একাধিক জায়গায়! এবং সেখানকার নার্সিংয়ের ছাত্র হয়ে অভিযুক্ত যুবক ডাক্তারের পোশাকে হাসপাতালে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ।
এ বিষয়ে নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত কুমার দেওয়ান বলছেন, ‘‘বহিরাগত কেউ যাতে আর কখনও হাসপাতালের ভেতর ঢুকে চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত হতে না পারে তার জন্য হাসপাতালে সুপারকে সচেতন করা হয়েছে। একই সঙ্গে চিহ্নিতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে।’’
কাঁথি মহকুমা হাসপাতালের সুপার অরূপ রতন করন বলছেন," বিষয়টি জানার পর তদন্ত শুরু হয়েছে। ওই যুবক যে চিকিৎসকের আত্মীয় বলে বিভিন্ন সূত্র মারফত দাবি করা হচ্ছিল তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তবে আমরা শুক্রবার কাঁথি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।’’
অভিযুক্ত বেসরকারি কলেজের কর্ণধার অর্পণ রানা দাবি করেন," সৈয়দ ফেরদৌস আমাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বেঙ্গালুরুর একটি বেসরকারি নার্সিং কলেজে পড়াশোনা করছে। আমরা অনেক দিন আগে আমাদের বিজ্ঞাপনে প্রচার করেছিলাম যে, কাঁথি হাসপাতালে আমাদের ছাত্রছাত্রীদের ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা হতে পারে। ‘হবে’ বলা হয়নি।’’
তা হলে ওই যুবক কী করে সেখানে কাজ করছিলেন? অর্পণ রানার দাবি, ‘‘সেটা আমি জানি না।’’ প্রসঙ্গত, কাঁথি রঘুনাথ আয়ুর্বেদ কলেজ এবং ফরিদপুর লোকশিক্ষা নিকেতন নার্সিং কলেজের পড়ুয়ারা কাঁথি হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ করেন। এ ব্যাপারে ফরিদপুর এবং রঘুনাথ আয়ুর্বেদ কলেজের সঙ্গে মৌ সই হয়েছে কাঁথি মহকুমা হাসপাতাল সূত্রের খবর।