অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের বৈঠকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বুধবার সামনে এল পূর্ব মেদিনীপুরের দুই সাংগঠনিক জেলায় আইএনটিটিইউসি-র সভাপতিদের নাম। পুরনো দুই সভাপতিই ওই পদে বহাল থাকলেও তৃণমূলের ব্লক এবং শহরের সভাপতিদের সম্ভাব্য নাম নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। কারণ, মঙ্গলবার জেলার সাংগঠনিক সভাপতি, অন্য শাখা সংগঠনের জেলা সভাপতি এবং দলীয় বিধায়কদের কাছ থেকে সম্ভাব্য নতুন ব্লক সভাপতিদের সম্পর্কে বিস্তারিত মতামত জানতে চেয়েছিলেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে, আজ, বৃহস্পতিবার থেকেই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদানের সম্ভাবনা রয়েছে বেশ কয়েকজনের। ওই সব নেতাকে তৃণমূলে ফেরানোর ব্যাপারে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন বলেও দলীয় সূত্রের খবর।
বুধবার রাজ্যের সমস্ত জেলায় শাসকদল তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতিদের নাম ঘোষণা করেছেন রাজ্য নেতৃত্ব। কাঁথি এবং তমলুক সাংগঠনিক জেলার আইএনটিইউসির সভাপতি হিসেবে বিকাশ বেজ এবং শিবনাথ সরকারকে পুনরায় তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়োগ করেছেন। বছর ঘুরলেই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে শ্রমিক সংগঠনের জেলা সভাপতি পদে রদবদল আনা হলে সেক্ষেত্রে পুরনোদের অন্য কোনও দায়িত্বে নিয়োগ করার সুযোগটুকুই ছিল না। তাই আপাতত বিকাশ এবং শিবনাথ সরকারকেই কাঁথি এবং তমলুক সাংগঠনিক জেলার শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি পদে পুনরায় নাম ঘোষণা করা হয়েছে বলে জেলা তৃণমূল সূত্রের খবর। মঙ্গলবারের সাংগঠনিক সভায় সম্ভাব্য নতুন ব্লক সভাপতিদের সম্পর্কে বিস্তারিত মতামত জানতে চেয়েছিলেন অভিষেক। এর পরে ইঙ্গিত মিলেছে, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নিজের ‘গড়’ কাঁথির বেশ কয়েকটি ব্লকের এবং কাঁথি পুরসভায় তৃণমূলের নতুন সভাপতি করা হতে পারে। যদিও এ ব্যাপারে জেলা (কাঁথি) তৃণমূল সভাপতি তরুণ মাইতি বলেন, ‘‘ব্লক সভাপতি কারা হবেন, সে বিষয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মতামত জানতে চান। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’
এদিকে, বিজেপি থেকে কারা কারা ‘ঘরওয়াপসি’ করছেন, সে নিয়েও জোর জল্পনা। এ নিয়ে শাসকদলের তরফে স্পষ্ট কিছু জানানো না হলেও দলীয় সূত্রের খবর, তালিকায় রয়েছেন জেলা পরিষদের এক সদস্য মানব পড়ুয়া এবং তাঁর কয়েকজন অনুগামী ছাত্র নেতা। মানব দীর্ঘদিন ধরে ভগবানপুর-২ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি ছিলেন। তিনি একদা শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ ছিলেন। শুভেন্দুর হাত ধরে বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপিতে যোগ দিতে গিয়েছিলেন মানব এবং খেজুরির প্রাক্তন বিধায়ক রণজিৎ মণ্ডল। তবে বিজেপি কর্মীদের তীব্র আপত্তিতে এই দুই তৃণমূল নেতার সে সময় বিজেপিতে যোগ দেওয়া শেষ মুহূর্তে বাতিল হয়ে যায়। এরপর এই দুজনকে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে রাজনীতিতে তেমন দেখা যায়নি। ‘ঘরওয়াপসি’ প্রসঙ্গে মানব বলছেন, ‘‘নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের মূল স্রোতে যুক্ত হওয়ার জন্য দলীয় নেতৃত্বের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম। তাঁরা যেদিন বলবেন সেদিনই আমি দলের সৈনিক হিসাবে এলাকায় ঝাঁপিয়ে পড়ব।’’ এ ব্যাপারে কাঁথি সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল চেয়ারম্যান অভিজিৎ দাস বলছেন, ‘‘সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশক্রমে মানব পড়ুয়াকে দলের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। তিনি কিছুদিন দল থেকে দূরে ছিলেন। তবে কোথায়, কীভাবে তাঁকে দলের মূল স্রোতে আনা হবে, তা চূড়ান্ত হয়নি।’’
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার যখন কোন্দল মেটানোর বার্তা দিয়েছেন, তখন বুধবার সামনে এসেছে মহিষাদলের নাটশাল-২ পঞ্চায়েতের অঞ্চল সভাপতি সভাপতি কমলাকান্ত মণ্ডলের একটি ভিডিয়ো (যার সত্যতা আনন্দবাজার পত্রিকা যাচাই করেনি)। ওই ভিডিয়োয় নাম না করে কমলাকান্ত দাবি করেছেন, পঞ্চায়েতের দুর্নীতিতে স্থানীয় বিধায়ক তিলক চক্রবর্তীর মদত রয়েছে। যদিও তিলক বলছেন, ‘‘যে সব অভিযোগ এনেছেন উনি, তা প্রমাণ করতে না পারলে আইনগত পদক্ষেপ করব।’’