অপর্যাপ্ত কর্মী পশ্চিমের অঙ্গনওয়াড়িতে

রান্না আর পড়ানো সামলান সহায়িকাই

তিনি রাঁধেন আবার স্কুলও চালান।কর্মীর অভাবে রান্না করার দায়িত্ব যাঁর, তাঁকেই ভার নিতে হয়েছে পড়ুয়াদের পড়াশোনারও। এরকমই ছবি পশ্চিম মেদিনীপুরের অধিকাংশ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:২৫
Share:

আলুর খোসা ছাড়াতে ছাড়াতেই পড়া ধরা। ঘাটালের একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে কৌশিক সাঁতরার তোলা ছবি।

তিনি রাঁধেন আবার স্কুলও চালান।

Advertisement

কর্মীর অভাবে রান্না করার দায়িত্ব যাঁর, তাঁকেই ভার নিতে হয়েছে পড়ুয়াদের পড়াশোনারও। এরকমই ছবি পশ্চিম মেদিনীপুরের অধিকাংশ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির।

কোথাও সহায়িকা নেই তো কোথাও ঘাটতি কর্মীর। ফলে রান্না চাপানোর সঙ্গে সঙ্গে পড়ানোর কাজও করাতে হচ্ছে একজনকেই। সমস্যার কথা স্বীকারও করেছেন জেলা প্রোগ্রাম অফিসার অসিতবরণ মণ্ডল। তাঁর কথায়, ‘‘বহু অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রেই কর্মী ও সহায়িকা নেই। ফলে একা হাতে কাজ সামলাতে হয়। তবে কর্মী নিয়োগের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।”

Advertisement

মূলত শিশুদের প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা ও প্রসূতি-গর্ভবতী অবস্থায় কী কী করণীয়, টিকাকরণের বিষয়ে সচেতন করা হয় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ প্রকল্পের এই কেন্দ্রে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার পর সরকারি অনুমোদিত প্রাথমিক স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থারও দায়িত্ব কেন্দ্রের কর্মীদের। কেন্দ্রগুলি থেকে শিশুদের (ছয় বছর পর্যন্ত) পুষ্টিকর খাবারও দেওয়া হয়। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সংখ্যা ৮ হাজার ৭২০টি। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি কেন্দ্রে একজন করে কর্মী আর একজন সহায়িকা থাকার কথায় একজন পড়াবেন আর অন্যজন রান্না করবেন। কিন্তু বহু কেন্দ্রেই একজন কর্মী কাজ চালান বলে অভিযোগ। এমনকী কর্মী না থাকায় শিশুদের নজরে রাখাও অনেক সময় সমস্যার হয়ে যায়।

দফতর সূত্রের খবর, দাসপুরের মাজগেড়িয়া, নন্দনপুরের মহেশপুর, সুজানগর, ঘাটালের চাউলি(সামন্ত পাড়া), সিংহপুর, খালিসাকুন্ডা, লক্ষ্মণপুর, গড়প্রতাপনগর এলাকায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু সেখানে পর্যাপ্ত কর্মীর অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ। সরেজমিনে দেখা গেল, এক সহায়িকা একদিকে খুদেদের পড়াচ্ছেন আর তার পাশেই জোর কদমে চলছে আলুর খোসা ছাড়ানো। পড়ুয়াদের জন্য রান্না করতে হবে তো! শুধু কর্মীর সমস্যাই নয়, অনেক অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কোনও নিজস্ব ভবন নেই। গ্রীষ্ম-শীতে তাও কিছুটা কাজ চালিয়ে নেওয়া যায়। বর্ষায় সমস্যাটা বাড়ে।

আটচালায় বা এলাকার কারও এই সব কেন্দ্র চলায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঘাটালের সিংহপুরের এক বাসিন্দা তো বলেই ফেললেন, “নিজস্ব ঘর নেই। খোলা আকাশের নীচে তৈরি হয় খাবার। এছাড়াও নিয়মিত স্বাস্থ্য শিবিরও হয় না। কী লাভ এমন অঙ্গনওয়াড়ি থেকে?’’ দাসপুরের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের এক কর্মীর কথায়, “সময়মতো চাল-ডালও আসে না। আমার কেন্দ্রে সহায়িকাও নেই। আমি একা। রান্না করব না পড়াব!’’

অভিযোগ, নজরদারির অভাবে জেলার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলোর এমন হাল। নজরদারি দায়িত্ব যে পরিদর্শকের, সেখানেও তো ঘাটতি রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঘাটাল ব্লকের এক পরিদর্শকের কথায়, ‘‘পড়ানোর জন্য কর্মী না থাকায় পড়াশোনা হয় না বহু কেন্দ্রেই। স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনাও কম হয়। প্রতিদিন কিছু শিশু আসে। বাবাকি সবাই খাবারের সময় হলে খাবার নিয়ে চলে যায়।’’ আর এক পরিদর্শকের সাফ কথা, ‘‘আমি ৪০টি কেন্দ্রের দায়িত্বে। দিনে এর থেকে বেশি কেন্দ্র পরিদর্শন সম্ভব নয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement