হলদিয়ার একটি কারখানা।
শিল্প শহর হলদিয়ায় হাজারো কারখানার জেরে এমনিতেই দূষণ নিয়ে চিন্তুত শহরবাসী। সম্প্রতি ‘আমপান’ ঝড়ে শহর এবং মহকুমা এলাকায় ভেঙেছে হাজার হাজার গাছ। ফলে আগামী দিয়ে হলদিয়ায় দূষণের মাত্রা বাড়ার আশঙ্কাও করছেন পরিবেশবিদেরা। এই পরিস্থিতিতে গোদের উপরে বিষ ফোঁড়া হয়েছে লকডাউন।
একাধিক কারখানা সূত্রের খবর, লকডাউন পরিস্থিতিতে কারখানাগুলিতে বন্ধ ছিল পরিবেশ দফতরের প্রতিনিধিদের পরিদর্শন।
হলিদায়য় রয়েছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের শাখা অফিস। সেই দফতর সূত্রের খবর, পরিবেশ দফতরের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিরা মাঝেমাঝেই হলদিয়ার বিভিন্ন কল-কারখানাগুলিতে পরিদর্শনে যেতেন। কারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য বাতাসে মাত্রাতিরিক্ত দূষণ ছড়াচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে খতিয়ে দেখার জন্য তাঁরা নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যেতেন। কারখানাগুলি থেকে নির্গত বর্জ্য জলে রাসায়নিকের মাত্রা বেশি রয়েছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হত। কিন্তু গত দু’মাস লকডাউনে সেই কাজ বন্ধ রয়েছে বলে জানাচ্ছে হলদিয়ার জোনাল অফিস। দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে এমনিতেই কাজকর্ম বন্ধ ছিল। ফলে কারখানা পরিদর্শন এই কয়েক মাসে তেমন হয়নি।’’
লকডাউনের সময় বিভিন্ন কারখানা বন্ধ থাকলেও, কিছু চালু ছিল। সম্প্রতি লকডাউন শিথিল হওয়ায় ধীরে ধীরে কারখানা চাল হচ্ছে। ফলে এই সময়ে দূষণের মাত্রা পরিমাপ করা প্রয়োজনীয় বলে মনে করছেন স্থানীয় এবং পরিবেশবিদেরা। স্থানীয় পরিবেশবিদ রামপ্রসাদ দাস বলেন, ‘‘এখন তো পরিবেশ দফতরের নজরদারি নেই। দূষণ হঠাৎ বেড়ে গেলে মানুষের সমস্যা তো বাড়বে। গাছ লাগানো ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।’’
উল্লেখ্য, দূষণ সমস্যা নিয়ে এক সময় খুবই জর্জরিত ছিল হলদিয়া। ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে নতুন শিল্প স্থাপন এই এলাকায় নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০১৪ থেকে অবশ্য সেই জট কেটে যায়। এলাকায় নতুন করে শিল্প স্থাপনের অনুমতি মেলে। তবে হলদিয়াবাসীর দূষণ নিয়ে চিন্তা কাটেনি। কিছু মাস আগেও পরিবেশ দফতর হলদিয়ার এক বেসরকারি ব্যাটারির প্রস্তুতকারী সংস্থাকে বিশাল অঙ্কের টাকা ব্যাঙ্কে গ্যারান্টি হিসাবে রাখতে বলেছিল। ওই কারখানা থেকে নির্গত বর্জ্যে মাত্রাতিরিক্ত দূষিত পদার্থ পাওয়া গিয়েছিল।
পরিবেশ দফতরের পরিদর্শন বন্ধ হয়েছে তা মানছেন হলদিয়ার একাধিক বড় কারখানা কর্তৃপক্ষ। তবে তাঁদের দাবি, কারখানা থেকে মাত্রাতিরিক্ত দূষণ ছড়াচ্ছে না। এ ব্যাপারে হলদিয়া এনার্জি লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট অনুপম দত্ত বলেন, ‘‘আগে পরিবেশ দফতরের প্রতিনিধিরা পরিদর্শনে আসতেন। মাস দুয়েক কেউ কারখানা পরিদর্শন করতে আসেননি। তবে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি কারখানা কর্তৃপক্ষের গুরুত্ব দিয়ে দেখেন। নিয়ম বিধি মেনেই কাজ চলছে। আমরা অনলাইনে পরিবেশ দফতরকে সমস্ত তথ্য দিচ্ছি।’’
কবে থেকে আবার কারখানায় পরিদর্শনে যাবেন দফতরের প্রতিনিধিরা? পরিবেশ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের জবাব, ‘‘করোনার জন্য দীর্ঘদিন লকডাউন ছিল। লকডাউনের ফলে কর্মচারী দফতরে আসেননি। কিন্তু এখন আস্তে আস্তে কাজ শুরু হচ্ছে। শীঘ্রই আবার স্বাভাবিক নিয়মে কারখানা পরিদর্শন শুরু হবে।’’