প্রতীকী ছবি।
এক সময় দু’জনে একসঙ্গে নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনকরীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু আজ রাজনীতির আবর্তে দু’জনেই এখন ভিন্ন মেরুতে। তবে দু’জনেরই দাবি, নন্দীগ্রামে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির আন্দোলনে শহিদদের পরিবারের পাশে তাঁরা রয়েছেন।
তৃণমূল ছেড়ে শুভেন্দু বিজেপিতে যোগদানের পর থেকেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলাকে পাখির চোখ করেছেন তৃণমূল নেত্রী। সেই আবহে শুভেন্দুর খাসতালুক কাঁথি শহরে গত বুধবার রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও সাংসদ সৌগত রায়ের মতো দলের রাজ্য নেতৃত্বে সভার আয়োজন করা হয়েছিল শুভেন্দুর ‘গড়’ কাঁথিতে। তারপরেই আগামী ৭ জানুয়ারি নন্দীগ্রামে শহিদ স্মরণে জনসভা করতে আসছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে বৃহস্পতিবার নিজের বাসস্থান কাঁথি শহরে মিছিল ও সভা করে সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শনের পাশাপাশি শুভেন্দুও জানিয়ে দিয়েছেন নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর জনসভার পরের দিনই শহিদ স্মরণে তিনিও ৮ জানুয়ারি সভা করবেন। ফলে বিধানসভা নির্বাচনের আগেই জমিরক্ষা আন্দোলনের আঁতুড় ঘরে মমতা ও শুভেন্দুর দ্বৈরথ ঘিরে রাজ্য রাজনীতির উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করেছে।
একদা তৃণমূলের দাপুটে নেতা ও মন্ত্রী শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে রাজ্য ও জেলা রাজনীতির পাশাপাশি খোদ নন্দীগ্রামে শাসকদল তৃণমূলের অন্দরে ভাঙনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, বিজেপিতে যোগদানের আগেই গত ১০ নভেম্বর জমি আন্দোলনকারীদের ‘শহিদ দিবস’ স্মরণ উপলক্ষে শুভেন্দু অরাজনৈতিকভাবে নন্দীগ্রামের গোকুলনগর হাইস্কুল মাঠে যে সভা করেছিলেন তার আয়োজকদের মধ্যে ছিলেন সদ্য অপসারিত ব্লক তৃণমূল সভাপতি মেঘনাদ পাল-সহ শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতারা। শুভেন্দুর ওই কর্মসূচি নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি শেখ সুফিয়ান। যদিও শুভেন্দুর ওই কর্মসূচিতে হাজির ছিলেন শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নন্দীগ্রাম-১ ব্লক তৃণমূল সম্পাদক তথা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি আবু তাহের সহ ব্লকের অনেক তৃণমূল নেতা। শুভেন্দুর ওই কর্মসূচির পরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ব্লক সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় মেঘনাদ পালকে। নতুন ব্লক সভাপতি হন পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ স্বদেশ দাস। যিনি সুফিয়ানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
৭ জানুয়ারি নন্দীগ্রামের তেখালি সেতুর কাছে গোকুলনগর গ্রামের মাঠে মমতার জনসভার আয়োজনে শেখ সুফিয়ান ও স্বদেশ দাস-সহ জেলা তৃণমূলে অধিকারী পরিবারের বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা অখিল গিরির অনুগামীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যার থেকে শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আবু তাহেরকে সরিয়ে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ। যা আদতে নন্দীগ্রাম ব্লক তৃণমূলে বিভাজনেরই সম্ভাবনা তৈরি করল বলে মনে করছেন তৃণমূলের একাংশ।
দলীয় ও স্থানীয় সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর জনসভার জন্য শনিবার সকালে নন্দীগ্রামে দলীয় অফিসে তৃণমূলের ব্লক কমিটির প্রস্তুতি সভা ডাকা হয়েছে। সভায় কমিটির সদস্যদের সকলকে ডাকা হচ্ছে। সেখানে আবু তাহেরকে ডাকা হলেও ব্রাত্য মেঘনাদ পাল। তাহের বলেন, ‘‘আমি এখনও তৃণমূলেই রয়েছি। দলের কর্মসূচিতেও থাকব। তবে দলের জেলা নেতৃত্ব আমাকে কেন মুখ্যমন্ত্রীর জনসভার দায়িত্ব থেকে দূরে রাখছেন জানি না।’’ মেঘনাদের কথায়, ‘‘ব্লক সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করলেও আমি এখনও তৃণমূলেই রয়েছি। তবে দলের ব্লক কমিটির সভায় আমাকে কেন ডাকা হয়নি বলতে পারব না।’’ তবে এ সবের জন্য দলে ভাঙনের সম্ভবনা উড়িয়ে দিয়েছেন ব্লক সভাপতি স্বদেশ দাস। তিনি বলেন, ‘‘১০ নভেম্বর গোকুলনগরে ‘শহিদ স্মরণ’ উপলক্ষে শুভেন্দুবাবুর সভায় দলের যে সব নেতা গিয়েছিলেন তাঁদের প্রায় সকলে তৃণণূলেই থাকার কথা জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সভার প্রস্তুতি নিয়ে শনিবার সকালে দলের প্রস্তুতি বৈঠকে ব্লক কমিটির সব সদস্যকে ডাকা হয়েছে। তবে সভাপতি পদ থেকে অপসারিত মেঘনাদবাবুকে ডাকা হয়নি।’’