এই পোস্ট ঘিরেই বিতর্ক তৃণমূলের অন্দরে।
সমাজমাধ্যমে ছোট্ট পোস্ট। সেই পোস্টই ঝড় তুলেছে জেলা তৃণমূলের অন্দরে। পোস্টটি তৃণমূলের মেদিনীপুর শহর সভাপতি বিশ্বনাথ পাণ্ডবের। সোমবার রাতে সমাজমাধ্যমে পোস্টটি হয়েছে। তখন মেদিনীপুরেই ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দুপুরে মেদিনীপুর ছেড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিতর্কের জেরে এ দিন সকালে পোস্টটি ডিলিট করে দেন বিশ্বনাথ।
সোমবার মেদিনীপুরে জনসভা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জনসভায় লোক সমাগম ভালই হয়েছিল। জনসভা ঘিরে শহরের বিভিন্ন এলাকা দলের পতাকা, ফেস্টুন, ব্যানারে ছয়লাপ করে দেওয়া হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে এ ভাবে শহর ‘সাজাতে’ উদ্যোগী হয়েছিলেন বিশ্বনাথ। দলের অন্দরে খবর, তাঁর যাত্রাপথের আশেপাশে দলের পতাকা, ফেস্টুন, ব্যানারের ভিড় দেখে খুশিই হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার বিকেলে সভা মিটেছে। রাতে পুরস্কারের প্রশ্নে দলকে খোঁচা দিয়ে সমাজমাধ্যমে এক পোস্ট করেন বিশ্বনাথ। লেখেন, ‘আজকের সভা ঐতিহাসিক। কিন্তু পুরস্কার’?
বিশ্বনাথের পোস্টের জেরে জেলা তৃণমূলের অন্দরে শুরু হয় ফিসফাস। কেন দলকে এ ভাবে খোঁচা দিলেন তৃণমূলের শহর সভাপতি? অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সোমবার সন্ধ্যার বৈঠকের কথা। দলীয় সূত্রে খবর, জনসভার পরে সোমবার সন্ধ্যায় দলীয় নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠক করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন দলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি, দলের জেলা চেয়ারম্যান দীনেন রায় প্রমুখ। বৈঠকের পরে কয়েকজনের পদপ্রাপ্তি হয়। মেদিনীপুর শহরে দলের সহ- সভাপতি করা হয় শান্তনু ভুঁইয়াকে। শান্তনু দলের জেলা মুখপাত্রও রয়েছেন। দলের কেউ কেউ মনে করছেন, শান্তনুকে শহরে দলের সহ- সভাপতি করায় গোঁসা হয়ে থাকতে পারে বিশ্বনাথের। সেখান থেকেই তাঁর ওই পোস্ট। বিশ্বনাথের অসন্তোষের জায়গা অবশ্য আরও রয়েছে। সম্প্রতি পুর- প্রশাসকমণ্ডলী গঠন হয়েছে। সেখানে ঠাঁই হয়েছে দীনেন রায়, নির্মাল্য চক্রবর্তীর। দীনেন খড়্গপুরের (গ্রামীণ) বিধায়ক। নির্মাল্য প্রাক্তন কাউন্সিলর। তাঁর চেয়ে বয়সে অনেকই ছোট, অভিজ্ঞতায়ও। পুর- প্রশাসকমণ্ডলীতে ঠাঁই হয়নি বিশ্বনাথের। অথচ, তিনিও প্রাক্তন কাউন্সিলর। এক সময়ে উপ- পুরপ্রধানও ছিলেন। সোমবারই প্রয়াত হয়েছেন মেদিনীপুরের বিধায়ক মৃগেন্দ্রনাথ মাইতি। মৃগেন্দ্রনাথও পুর- প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। তাঁর প্রয়াণে পদটি শূন্য হয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, ওই ‘শূন্য’ পদে যাতে তাঁর কথাই ভাবা হয়, দলকে আগাম পরোক্ষে সেই বার্তাই দিয়েই রাখলেন বিশ্বনাথ।
বিতর্ক শুরু হতে পোস্ট ডিলিট করে দেন বিশ্বনাথ। তিনি বলেন, ‘‘সমাজমাধ্যমে আমার অ্যাকাউন্ট রয়েছে। আমার অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্ট করা হয়েছিল ঠিকই কিন্তু পোস্টটি আমি করিনি। আমার ছেলে করেছিল। যখন শুনেছি, এ নিয়ে অহেতুক চর্চা হচ্ছে, তখনই ওকে পোস্টটি ডিলিট করে দিতে বলেছি। ও ডিলিট করেও দিয়েছে!’’ তিনি বলেন, ‘‘কারও প্রতি আমার কোনও ক্ষোভ- অসন্তোষ নেই।’’
দলের শহর সভাপতির পোস্ট নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি। অজিতের দাবি, ‘‘আমি দেখিনি। না- দেখে কিছু বলব না।’’ এমন কোনও পোস্ট তাঁর নজরে আসেনি বলে দাবি করেছেন দলের জেলা চেয়ারম্যান দীনেন রায়ও।